অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দিল সরকার

Slider জাতীয়

Supporters of Wikileaks founder Julian Assange celebrate outside the Old Bailey court in central London after a judge ruled that Assange should not be extradited to the United States to face espionage charges for publishing secret documents online on January 4, 2021. (Photo by DANIEL LEAL-OLIVAS / AFP)

করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে যে টিকার দিকে সবাই মুখ করে আছে তেমন একটি টিকার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে ট্রায়ালে সফল হওয়া বেশ কয়েকটি টিকার মধ্যে এগিয়ে থাকা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা আবিষ্কৃত টিকাটির অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।

সোমবার ওষুধ প্রস্তুতকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ব্যবহারের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এই অনুমোদন দেয় বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান।

এর আগে টিকা অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে বেক্সিমকো। এই অনুমোদনের ফলে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ডের টিকাটি দেশে আনতে কোনো বাধা থাকছে না।

টিকাটির অনুমোদনের আগে সোমবার সকালে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এক খবরকে ঘিরে সেরামের এই টিকা রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শুরু হয় নানা আলোচনা। অবশ্য পরে খবরটি সত্য নয় বলে জানায় ভারতের এই ভ্যাকসিন উৎপাদক প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যসচিবসহ সরকারের দায়িত্বশীলরা জানান যথাসময়ে ভারতের কাছ থেকে টিকা পাওয়ায় কোনো সমস্যা হবে না। সবশেষ দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে সোমবার অক্সফোর্ডের টিকার অনুমোদন দেয় সরকার। এর আগে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের পক্ষ থেকে টিকার অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে আবেদনের কথা জানায়।

মহামারী করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকে এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে কাজ করছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। অনেক দেশ করোনার টিকার অনুমোদনও দিয়েছে। তবে টিকা আবিষ্কারের পরই যাতে পাওয়া যায় সেজন্য সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করে বেক্সিমকো।

টিকা রপ্তানির বিষয়ে ভারতের নিষেধ্বাজ্ঞা নিয়ে খবর চাউড় হওয়ার পর অবশ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ভারত থেকে নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশ করোনার টিকা পাবে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়েই ভারত থেকে বাংলাদেশ করোনার টিকা আসবে, চুক্তির কোনো ব্যত্যয় হবে না।

সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ টিকা আগামী মাসের শুরুতে পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ হিসেবে পুরো তিন কোটি টিকার জন্য অগ্রিম হিসেবে এরইমধ্যে ছয়শ কোটি টাকা সেরামের অ্যাকাউন্টে রবিবার জমা দেয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর একদিন পর টিকা রপ্তানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞার খবরে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

আন্তর্জাতিক একটি গণমাধ্যমের এমন খবর নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় সেরাম ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা মায়াঙ্ক সেন জানিয়েছেন, ‘তাদের টিকা রপ্তানির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা পুরোপুরি সঠিক নয়।’

মন্ত্রীর সাথে টিকা নিয়ে একই সূরে কথা বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, টিকার ব্যাপারে যেহেতু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জিটুজি (সরকারের সাথে সরকারের) চুক্তি হয়েছে, তাই যথাসময়ে টিকা পেতে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না।

স্বাস্থ্য সচিব বলেন, ‘আমরা যে চুক্তি করেছি, সেখানে আর্থিক লেনদেন হয়েছে দুই সরকারের মধ্যে। ভারত যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা তাদের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে, আমাদের ব্যাপারে না। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এটা পরিষ্কার করে দিয়েছে।’

এদিকে কোন প্রক্রিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক এই টিকা সেরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে দেশে আনা হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানান বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন। যথাসময়ে টিকা পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় নেই বলেও পাপন।

তিনি বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে আমাদের সেরামের যে চুক্তি হয়েছে, সেটি একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি। এ ধরনের চুক্তি বাতিল হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন দিলে এক মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন চলে আসবে।’

পাপন বলেন, ‘সেরাম ইনস্টিটিউড, বাংলাদেশ সরকার ও বেক্সিমকো ফার্মা তিন কোটি টিকা কেনার চুক্তি করেছে। সেই চুক্তিতে লেখা আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ টিকা অনুমোদন দেয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত হতে হবে। বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অনুমোদন দেয়ার এক মাসের মধ্যে তারা টিকা সরবরাহ শুরু করবে।

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি টিকা সরবরাহ করবে। এছাড়া অগ্রিম টাকা দিতে হবে। তারা ব্যাংক গ্যারান্টি দিচ্ছে। আমরা কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। আমরা সরকারের একটি টাকাও নষ্ট হোক সেটি চাই না। হঠাৎ দেখা গেল তারা টিকা দিতে পারলো না। তখন সরকার সব টাকা ফেরত পাবে।’

বেক্সিমকোর এমডি বলেন, ‘প্রথমে তারা টিকার দাম আট ডলার চেয়েছিল। আমাদের চেষ্টায় এখন টিকার দাম চার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ভারত সরকার যদি এর চেয়ে বেশি দামে কিনে তখন চার ডলারেই আমাদেরকে দিতে হবে। আর যদি ভারতীয় সরকার এরচেয়ে কম দামে কিনে তাহলে সেই দামেই আমাদের টিকা দিতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *