প্রভাবমুক্ত পৌর নির্বাচনের দাবিতে বসুরহাটে ওবায়দুল কাদেরের ভাইয়ের কর্মসূচি

Slider বাংলার মুখোমুখি

নোয়াখালী ও কোম্পানীগঞ্জ: বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখার দাবিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ওই পৌরসভার বর্তমান মেয়র মির্জা আবদুল কাদের। নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভায় জেলা প্রশাসকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডার পর সভা বর্জন করে তিনি এ কর্মসূচি পালন করেন। সেখান থেকে তিনি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রত্যাহার দাবি করেন। নির্বাচনে স্থানীয় দুই এমপি প্রভাব বিস্তার করছেন দাবি করে মির্জা কাদের অভিযোগ করেন প্রশাসনও তাদের সহযোগী হয়ে কাজ করছে। এ ঘটনা ঘিরে রোববার দিনভর তুলকালাম কাণ্ড হয়েছে বসুরহাটে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি অনেক এলাকার দোকান পাটও বন্ধ ছিল। সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

মির্জা আবদুল কাদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। তিনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই।

জানা গেছে, বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল ১১টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সভাকক্ষে জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান, পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেনের উপস্থিতিতে নির্বাচনী আইনশৃঙ্খলা সভা ও প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মেয়র ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদের বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, নির্বাচনকে ভণ্ডুল করার জন্য ফেনীর সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী তার বাহিনী দিয়ে কোম্পানীগঞ্জের রাহাতের নিকট অস্ত্রের চালান পাঠিয়েছে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে। জেলাসহ দেশের কোটি মানুষের প্রিয় নেতা ওবায়দুল কাদেরের নাম ভাঙিয়ে শত শত কোটি টাকার টেন্ডারবাজি, চাকরিতে নিয়োগ বাণিজ্য করে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ, অবৈধ ইয়াবার চালান এনে যুব গোষ্ঠীকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এ সময় সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খান মেয়র প্রার্থী মির্জা কাদেরকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, এই বক্তব্য নির্বাচন আচরণ বিধিতে পড়ে না। তখন উভয়ের মধ্যে মৃদু বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে আবদুল কাদের মির্জা জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে নির্বাচন বানচালকারীদের সহায়তা ও প্রশ্রয় দাতা উল্লেখ করে সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ও কমিশনার প্রার্থীরা সভাকক্ষ ত্যাগ করে বেরিয়ে যান। তারা হলের বাইরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা পরিষদের সামনে থাকা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ খবরের সঙ্গে সঙ্গে বাজার ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাংক বীমার গেটে তালা দিয়ে লেনদেন বন্ধ করে দেয়। বসুরহাট বাস টার্মিনালে থাকা শতাধিক বাস সরিয়ে নেয়া হয়। এর পরপরই বসুরহাট বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে আবদুল কাদের মির্জা অবস্থান নিলে সেখানে তার সমর্থকরা অবস্থান ধর্মঘট শুরু করে। এ খবরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে একের পর এক মিছিল এসে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বিকাল ৫টায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম বসুরহাটে পৌঁছে আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে আলোচনা করে। তিনি তাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, এভাবে দল ও দেশ চলতে পারে না। ১৬ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর এ সকল অভিযোগের ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাতীয় নেতা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে পরামর্শ করে তার দিকনির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তারপর তার অনুরোধে নেতাকর্মীরা অবস্থান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন। তিনি সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার ও ওবায়দুল কাদেরের নৌকার পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানান। এ ব্যাপারে সভায় উপস্থিত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানান, এটা এমন কিছুই নয়। মেয়রের বক্তব্য নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম খান জানান, তিনি আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যে বাধা প্রদান করেননি। তিনি তাকে বলেছিলেন- তার আর কিছু বলার আছে কি না? তখন মেয়র আমাকে বলেন, আপনি আমার বক্তব্যে বাধা দিচ্ছেন। এ কথা বলে তিনি সভাস্থল ত্যাগ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, কেন তারা আমাদের অপসারণ চাইছেন তা আমি নিজেই জানি না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *