বাংলাদেশ-ভারত পানি চুক্তি : জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পাওনা ১ লাখ ৫ হাজার কিউসেক

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

ঈশ্বরদী: প্রতিবছরের মতো এ বছরও গঙ্গা পানি চুক্তি অনুযায়ী পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুর করেছে বাংলাদেশ-ভারত। যদিও এই পর্যবেক্ষণ শুরু হয় বছরের প্রথম দিন থেকে। তবে এ বছর ১ জানুয়ারি সরকারি ছুটির দিন (শুক্রবার) হওয়ায় এটি শুরু হচ্ছে ২ জানুয়ারি (শনিবার) থেকে।

বাংলাদেশ-ভারত পানি চুক্তি অনুয়ায়ী এ বছর জানুয়ারিতে বাংলাদেশের পাওনা ১ লাখ ৫ হাজার কিউসেক। বাংলাদেশ-ভারত ৩০ সালের পানি চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ওই সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি সম্পাদন করেন।

চুক্তি অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রাপ্তি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের প্রথম দিনে দুই দেশের পানি পরিমাপ শুরু হয়। ওই অনুযায়ী শনিবার সকাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিদল ফারাক্কা পয়েন্টে ও ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। তবে গঙ্গা চুক্তির পর থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পড়েছে ধুধু বালু-পলিমাটির চর। এই চরে চাষ হচ্ছে আখ, গাজরসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি। কাটা হচ্ছে বালু।

উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপ বিভাগ (হাইড্রোলজি) পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মার পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য দুই সদস্যের ভারতীয় দল বাংলাদেশে এসেছে। প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় পানি কমিশনের উপপরিচালক শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর ও কমিশনের সহকারী পরিচালক শ্রী নাগনরা কুমার।

প্রতিনিধিদল সকাল ১০টা থেকে পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টের ২ হাজার ৫০০ ফুট উজানে পানির প্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। অন্যদিকে একই সময়ে চার সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ফারাক্কার দুটি পয়েন্টে গঙ্গার পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলটির নেতৃত্বে আছেন যৌথ নদী কমিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম সাইফুদ্দিন।

হাইড্রোলজির পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে এই যৌথ পানি পরিমাপ শুরু হয়। এবার ১ জানুয়ারি শুক্রবার হওয়ার কারণে ২ জানুয়ারি থেকে পরিমাপ শুরু হয়েছে। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত দুই দেশের প্রতিদিধিদল গঙ্গা ও পদ্মায় এই যৌথ পরিমাপ চালাবে।

চুক্তির শর্ত থেকে জানা গেছে, প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় ৭০ হাজার কিউসেক বা তার কম পানির প্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই ৫০ শতাংশ করে পানি পাবে। দ্বিতীয় ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে ৭০ হাজার কিউসেক থেকে ৭৫ হাজার কিউসেক পানিপ্রবাহ থাকলে বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। তৃতীয় ১০ দিন ফারাক্কা পয়েন্টে ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার বেশি পানিপ্রবাহ থাকলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক পানি, বাকিটা পাবে বাংলাদেশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশ তিন দফা ১০ দিনের হিসাবের ক্রমানুসারে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে।

উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপ বিভাগ পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে সর্বশেষ পরিমাপে প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কায় প্রাপ্ত গঙ্গার পানির মোট পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার কিউসেক। হিস্যা অনুযায়ী বাংলাদেশের পানি পাওয়ার কথা ছিল ৬০ হাজার ৬১ কিউসেক এবং ভারতের প্রাপ্ত হিস্যা ছিল ৪০ হাজার কিউসেক। কিন্তু এই সময় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২ হাজার ৫৭৪ কিউসেক। ডিসেম্বরের ৩১ তারিখের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের সমপরিমাণ পানি না থাকলেও চলতি বছরও পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ভালো রয়েছে। শেষ দিনের হিসাবে প্রায় ৮৮ হাজার কিউসেক পানি পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে উত্তরাঞ্চলীয় পানি পরিমাপ বিভাগ (হাইড্রোলজি) পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দিন বলেন, ইতোমধ্যেই দুই দেশের পানি পরিমাপ শুরু হয়েছে। প্রতি ১০ দিন পরপর পানির প্রাপ্যতা অনুসারে হিস্যা ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *