ক্ষুদ্র ঋণে ব্যাংকের অনীহা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


ঢাকাধ বৃহৎ ঋণ বিতরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়েই গ্রাহকদের অনুকূলে বিতরণ করছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু অনীহা ক্ষুদ্র ঋণে। যেটুকু অনুমোদন নেয়া হচ্ছে তার অর্ধেকও বিতরণ করা হচ্ছে না। নানা কাগজপত্র যাচাইয়ের নামে পার হয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। এভাবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেয়া ব্যাংকগুলোর তিন দফার বর্ধিত সময়ও পার হয়ে যাচ্ছে।

ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃহৎ ও সেবা খাতে বিতরণ করা ঋণের ওপর পুনঃঅর্থায়ন তহবিল পেতে সাত হাজার কোটি টাকার আবেদন করেছিল ব্যাংকগুলো থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই দিন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর অনুকূলে ছাড় করা হয়েছে, যা মোট আবেদনের ৮৩ শতাংশ।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বৃহৎ ঋণ বিতরণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যে শর্তগুলো দেয়া হয়েছে, বড় উদ্যোক্তারা সহজেই ব্যাংকগুলোকে তা সরবরাহ করতে পারছে। এ ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক চাপও থাকে বড় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যাংকের পরিচালক ব্যবসায়ী। এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। ব্যাংকগুলোর পরিচালকদের মধ্যে নিজেদের মধ্যে এক ধরনের সমঝোতার কারণে তারা সহজেই ঋণ পেয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথেই তা বিতরণ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, বৃহৎ ও সেবা খাতে ঋণ বিতরণের জন্য লক্ষ্যমাত্রা দুই দফা বাড়িয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করেছে ৯২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ ইতোমধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, বৃহৎ ঋণের অনুমোদনের ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী ৭০ শতাংশ হলেও ৪০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী প্রণোদনার ঋণ বিতরণের ৫০ শতাংশ বাংলাদেশ ব্যাংক পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে জোগান দেবে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত তহবিল থাকায় তারা এখন যা ঋণ বিতরণ করছে তার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সুবিধা চাচ্ছে না। তবে এরপরেও প্রায় ৩০টি ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সাত হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের জন্য আবেদন করেছিল। গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর অনুকূলে ছাড় করা হয়েছে।

এ দিকে বৃহৎ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো যতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে, ক্ষুদ্র ও কুটির ঋণ বিতরণেই ততটা অনাগ্রহ দেখানো হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করলে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেশি হয়। এ কারণেই ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে অনীহা দেখাচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। তবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করতে হবে শুধু উৎপাদনশীল খাতে। ট্রেডিংয়ে বিতরণ করা যাবে না। ব্যাংকগুলোর ক্ষুদ্রঋণ উদ্যোক্তাদের বেশি ব্যাংকিং হয় ট্রেডিংয়ে। উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণ করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী যত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে হয় তা চাহিদা অনুযায়ী উদ্যোক্তারা সরবরাহ করতে পারছে না। এ ফলে অনুমোদন বেশি হলেও বিতরণ হচ্ছে ধীর গতিতে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের জন্য যে তিন দফা সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তার সর্বশেষ সময় চলতি ডিসেম্বরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার, যা মোট লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকার ৫৫ শতাংশ। কিন্তু বিতরণ করা হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৪৫ শতাংশ। এমনি পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে ঋণ বিতরণের জন্য সময় বাড়িয়ে দেয়া হতে পারে বলে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *