সম্পাদকীয়: মরণতন্ত্র, ক্ষমতাতন্ত্র ও গনতন্ত্র

Slider সম্পাদকীয়

জনগন জানেন যা অসত্য, আমরা বক্তব্য দিয়ে বলছি তা সত্য। মানুষ জানেন সত্য, আমরা বলছি অসত্য। দুটি বক্তব্য সামনে এলে বলি, রাজনৈতিক বক্তব্য ছিল। মানে হল, মিথ্যা কথাটা রাজনৈতিক হয়ে যায়। মিথ্যা তথ্য যদি রাজনৈতিক হয়, তবে রাজনীতির স্থান কোথায়? রাজনীতি কি তাহলে মিথ্যাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার জন্য? না, একটি সুন্দর দেশ গঠন ও জনগনের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য। তা এখন স্পষ্ট নয়।

রাজনীতির সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞাঃ-

রাজনীতি হচ্ছে সরকার পরিচালনার নিমিত্তে সমাজের ভিতর থেকে উদ্ভুত বিজ্ঞান ভিত্তিক সংস্কৃতি, যার দ্বারা একটা নির্দিষ্ট সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনা করে।

রাজনীতির ইংরেজি “Politics”শব্দটি গ্রীক শব্দ “Politiká: Politika,” থেকে উৎপত্তি। যার সরল অর্থ, নগর বিষয়ক নীতিমালা বা বিষয়, যার দ্বারা মানব গোষ্ঠী কর্তৃক পরিচালিত হয় রাষ্ট্র বা রাজ্য। যা সমাজের মানুষের মাঝে আন্ত সম্পর্ক সৃষ্টি করে ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করে।

আরেক অর্থে, রাজনীতির অর্থ বড়ই ব্যাপক। একটি দেশের আভ্যন্তরীন পরিমন্ডলে দেশের সামগ্রীক জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহিত জড়িত বিভিন্ন দলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী হতে পারেন।
অধ্যাপক এ্যালমন্ড ও কোলম্যানের মতে, ‘রাজনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে সমাজের বৈধ শৃংখলা রক্ষাকারী বা পরিবর্তন আনয়নকারী ব্যবস্থা ’। এ লক্ষে গঠিত হয় রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গড়ে উঠে।
এদিকে গনতন্ত্র হলো একটি দেশের সর্বসাধরণের দ্বারা রচিত একটি সরকার পদ্ধতি। সচরাচর এতে থাকে জনগন কর্তৃক নির্বাচিত প্রতিনীধি যারা বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অভিমত প্রকাশের ব্যাপারকে সমর্থন করে।

গনতন্ত্রের অর্থ হল সামাজিক শ্রেণীবিভাজন ব্যতিরেকে নাগরিকগন কর্তৃক প্রণীত একে অপরের জন্য নিবেদিত একটি সুষ্ঠ ও সুষম ব্যবস্থা। এটি হল জনগণের ইচ্ছা অনুসারে দেশ শাসন করার পদ্ধতি। গনতান্ত্রিক দেশে জনগন ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে যারা জনগণের জন্য কাজ করবে। সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন হল গনতন্ত্রের পূর্বশর্ত।

আমাদের দেশ একটি গনতান্ত্রিক দেশ। আমাদের দেশে এখন নিঁখুত গনতন্ত্র মানে সংসদীয় গনতন্ত্র চলমান। একটি গনতান্ত্রিক দেশে এই নিঁখুত গনতন্ত্রের মানে হল জনগনের মৌলিক অধিকার সবচেয়ে বেশী সুরক্ষিত থাকা। কিন্তু আমদের ক্ষেত্রে কি তা আছে?

আমাদের ইতিহাস বলছে, আমাদের বয়স ৪৬ বছর। এর মধ্যে বেশী সময়ই আমরা অগনতান্ত্রিক সরকারের অধীনে ছিলাম। বলা যায়, স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের অধীনে থাকা। তবে গনতান্ত্রিক সরকারের ভেতরে অগনতান্ত্রিক সরকার প্রবেশ করার কারণে আমাদের গনতন্ত্র বার বার প্রশ্নবিদ্ধ হয়। আমাদের গনতান্ত্রিক দলগুলো যাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, ক্ষমতায় এসে তারাই আবার প্রতিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে সরকার পরিচালনা করেন।

ভোটের জন্য যারা কাঁদেন তারাই ভোট ধ্বংস করেন। মানুষকে ভোটের অধিকার দিতে গিয়ে জীবন নিতে হয়, এমন গনতন্ত্র চলছে। বিএনপি বা আওয়ামীলীগ দুটো দলই ক্ষমতার প্রয়োজনে মানষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। অধিকার দেয়ার কথা বলে মানুষটাই নিয়ে যাচ্ছে। তাই এমন অধিকারের প্রয়োজন কি? যে অধিকার দিতে গিয়ে মানুষকে মেরে ফেলতে হয়, তেমন অধিকার গনতান্ত্রিক নয়, মরণতান্ত্রিক অধিকার। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর দুটি রক্তমাখা নির্বাচন, আমাদেরকে মরণতন্ত্রের শিক্ষা দিয়ে গেছে। ২০০১ সালে জামায়াতের সাথে বিএনপি আর ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে ক্ষমতাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে গনতন্ত্র অসহায় হয়ে পড়েছে। আর গনতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ হওয়া রাষ্ট্রের বেশ কিছু মুক্তিকামী বীরের রক্ত বৃথা হয়ে গেছে।

সুতরাং আমাদের নৈতিক অধঃপতন, মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গনতন্ত্রের লেবাস পড়ে মরণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছি আমরা। আমাদের নৈতিক উন্নতি না হলে সংসদীয় গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।

ড. এ কে এম রিপন আনসারী

এডিটর ইনচীফ

গ্রামাবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *