ঢাকা: সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে ২৬ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করেছে সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের শুরুতে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে (আইএসএ) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশে এসে সহিংস হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। এছাড়াও উগ্রবাদী মন্তব্য ও ধ্যানধারণা প্রচারের অভিযোগে যেই ১৬ জন বিদেশীকে সিঙ্গাপুর সম্প্রতি ফেরত পাঠিয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জনই বাংলাদেশি। বাকি ১ জন মালয়েশিয়ান নাগরিক। এ খবর দিয়েছে সিঙ্গাপুরের শীর্ষ দৈনিক দ্য স্ট্রেইট টাইমস।
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতি উদ্ধৃত করে খবরে বলা হয়, সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশির নাম আহমেদ ফয়সাল। কর্তৃপক্ষের তদন্তে বের হয়ে আসে যে, তিনি আইএস’র মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ধর্মের নামে বাংলাদেশে এসে সশস্ত্র সহিংস হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছেন।
ফয়সাল ২০১৭ সালে নির্মান শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যান। ২০১৮ সালে অনলাইনে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের অপপ্রচারের সংস্পর্শে এসে উগ্রপন্থার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
ভুয়া নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাউন্ট খুঁলে সশস্ত্র সহিংসতার পক্ষে পোস্ট দেওয়া শুরু করেন। এছাড়া, ফোল্ডেবল বা গুটিয়ে রাখা যায় এমন ছুরিও কেনেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি স্বীকার করেন যে, ওই ছুরি দিয়ে বাংলাদেশে এসে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছিলেন তিনি। বাংলাদেশে হিন্দু পুলিশ কর্মকর্তারা তার হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল বলেও তিনি জিজ্ঞাসাবাদে জানান। তবে সিঙ্গাপুরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা তার ছিল না। এই সংক্রান্ত কোনো প্রমাণাদিও তারা পাননি।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক ও আইনমন্ত্রী কে শানমুগান মঙ্গলবার রেলিজিয়াস রিহ্যাবিলিটেশন গ্রুপের (আরআরজি) এক অনুষ্ঠানে জানান, ছুরি নিয়ে বাংলাদেশে এসে হিন্দু পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালাতে চেয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও ফয়সালের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের বিষয়েও তদন্ত করছে কর্তৃপক্ষ।
শানমুগান আরো জানান, ফ্রান্স-বিরোধী মনোভাব প্রকাশ ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা বা সহিংসতা উস্কে দিতে উগ্র মন্তব্য করা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে তদন্ত শেষে মোট ১৬ জন বিদেশীকে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিঙ্গাপুর। এদের মধ্যে ১৫ জনই বাংলাদেশি। বাকি ১ জন মালয়েশিয়ান।
সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গত মাসে ফ্রান্সে হওয়া হামলাগুলোর সঙ্গে ফয়সালের কোনো যোগসাজশ ছিল না। তবে তিনি আইএসের মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। জঙ্গি গোষ্ঠীটির হয়ে যুদ্ধ করতে তিনি সিরিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামে অন্য একটি জঙ্গিগোষ্ঠীকে অনুসরণ করা শুরু করেন তিনি। এই দলটিও আইএসের মতো সিরিয়ায় ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ফয়সাল সিরিয়া-ভিত্তিক সংগঠনটিতে অর্থায়নও করেছেন। তিনি জেনে-বুঝেই অর্থ দান করেছিলেন যে, তার অর্থ সিরিয়ায় এইচটিএসের কার্যক্রমে সহায়ক হবে। এছাড়া, আল-কায়েদা, আল-শাবাবের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর প্রতিও সমর্থন প্রকাশ করেছেন ফয়সাল।