ঢাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ : রাজনীতিতে উত্তাপের আভাস?

Slider বাংলার মুখোমুখি

রাজধানী ঢাকায় হঠাৎ করে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশের প্রধান দুটো রাজনৈতিক দল একে অপরকে দায়ী করে বক্তব্য দিয়েছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির পার্টি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে অগ্নিসংযোগের ঘটনার জন্য প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করেছেন।

অন্যদিকে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন করানোর জন্য সরকারের কোনো কোনো এজেন্ট এ কাজ করে থাকতে পারে বলে তারা মনে করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকার ৯টি বাসে আগুন দেয়া হয়।

বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো উত্তাপের আভাস মিলছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বেশ কয়েক শ’ জনকে আসামি করা হয়েছে এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ওয়ালিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলন জানিয়েছেন, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনের ‘রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার’ প্রমাণ পাওয়া গেছে।

২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচনের আগে সর্বশেষ নয়া পল্টনে বিএনপির অফিসের সামনে ও আশপাশের এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সংঘাতের ঘটনা ঘটেছিল।

এরপর থেকে গত দুই বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি ছিল কার্যত শান্ত।

বিএনপিকে দায়ী করছেন ওবায়দুল কাদের
বিএনপিকে লক্ষ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেই পুরনো আগুন সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি, এটা যারা আগে ঘটাতো তারাই আবার ঘটিয়েছে।’

‘গতকালের নাশকতা প্রমাণ করেছে বিএনপি তাদের চিরাচরিত সন্ত্রাসী পথটা পরিহার করতে পারেনি। তাদের নীলনকশা অনুযায়ী পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীরা গতকাল রাজধানীতে নাশকতা চালিয়েছে,’ বলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে দুটো সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রাজধানীতে ৯টি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সাথে ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনের সম্পর্ক আছে বলে মনে করছেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচন নিয়ে খুব হৈচৈ করবে, নির্বাচনে প্রচারণাও করবে, কিন্তু নির্বাচনের দিন কোনো এজেন্ট দেবে না। এজেন্ট বের করে দিয়েছে এই অপবাদ দেবার জন্য।’

সরকারের ‘এজেন্টকে’ দায়ী করেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর
এদিকে, রাজধানীতে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক এবং ন্যক্কারজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি’র ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, যখন দেশে কোনো গণতান্ত্রিক সুযোগ থাকে না, তখন এ ধরণের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে দুষ্কৃতিকারীরা এর সুযোগ নেয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

‘দেখা যায় যে, এ সরকারের কিছু কিছু অংশ, যারা বিভিন্নভাবে কাজ করে, কেউ কেউ স্যাবোটাজ করার জন্য এ ধরণের ঘটনা ঘটায়। এটাও আমরা অতীতে দেখেছি।’

তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপিকে হেয় করার জন্য ‘সরকারের কিছু এজেন্ট’ এ ধরণের কাজ করতে পারে। বিএনপি মহাসচিব সন্দেহ করছেন, বাসে অগ্নিসংযোগের পেছনে হয়তো ‘সরকারের কোনো এজেন্ট’ কাজ করতে পারে।

তবে এই এজেন্ট কারা সে সম্পর্কে পরিষ্কার করে কিছু বলেননি মির্জা ফখরুল।

‘একটা আন্দোলন যেটা শুরু হতে যাচ্ছে, বা যেটা ধরেন ভালো জিনিসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ওটাকে স্যাবোটাজ করার জন্য এ ধরণের ঘটনা ঘটায়। এ ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা করছি,’ বলেন তিনি।

পুলিশ কী বলছে?
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার এবং মুখপাত্র ওয়ালিদ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রতিটির আলাদা আলাদা মামলা হবে। এখনো পর্যন্ত ঢাকার কয়েকটি থানায় মামলা হয়েছে।

তিনি জানান, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজনের ‘রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার’ পরিচয় পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, সংঘবদ্ধভাবে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য এ ধরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

সূত্র : বিবিসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *