কিশোরগঞ্জে এক পরিবারের তিনজনকে হত্যার পর মাটিচাপা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

কিশোরগঞ্জ:কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পরে তাদেরকে বসতঘরের পেছনে গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়। লোমহর্ষক ও নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের জামষাইট তাতারকান্দা গ্রামে।

বৃহস্পতিবার রাত দশটার পর গ্রামবাসীর সহায়তায় মাটির নিচ থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
নিহতরা হলেন জামষাইট তাতারকান্দা গ্রামের মো. আসাদ মিয়া (৫৫), তার স্ত্রী মোছা. পারভীন আক্তার (৪৫) ও তাদের ছোট ছেলে লিয়ন (৮)।

এ ঘটনায় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির ৪ জনকে আটক করেছে।
এলাকাবাসী জানায়, মো: আসাদ মিয়া জামষাইট গ্রামের মৃত মীর হোসেনের ছেলে। তিনি একজন মুদি দোকানী ছিলেন।

পুলিশ বলছে, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। বুধবার রাতে কোনো এক সময় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। তিনজনকে হত্যা করে বাড়ির পেছনে একটি গর্তে একসাথে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।’
পুলিশ ধারণা করছে, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে পরিবারের অন্য সদস্যরা এই তিনজনকে হত্যা করে থাকতে পারে।

পুলিশ ও গ্রামবাসী জানায়, গত বুধবার দিবাগত রাতে প্রতিদিনের মতো আসাদ মিয়া স্ত্রী পারভীন ও ছোট ছেলে লিয়নকে নিয়ে বসতঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। আসাদ-পারভীন দম্পতির বড় ছেলে তোফাজ্জল থাকে ঢাকায়। মেজো ছেলে মোফাজ্জল হোসেন (১৩) ওই দিন ছিল নানার বাড়ি। বৃহস্পতিবার সকালে মোফাজ্জল নানার বাড়ি থেকে বাড়ি এসে মা-বাবা ও ভাইকে খুঁজে পাচ্ছিল না। সারাদিন খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে সে কান্নাকাটি করতে থাকে। একপর্যায়ে এলাকার মেম্বারের কাছে যায় সে। মেম্বারকে সঙ্গে নিয়ে সন্ধ্যার দিকে সে কটিয়াদী মডেল থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানায়।

পুলিশ জানায়, মোফাজ্জল অভিযোগ করে, জমি নিয়ে চাচাদের সঙ্গে তার বাবার বিরোধ চলছে। এই বিরোধের কারণে চাচারা তাকে বিভিন্ন সময়ে মারধর করেছেন। এর পরই পুলিশ তৎপর হয়।

সন্ধ্যার পর জামষাইট তাতারকান্দি গ্রামে যায় পুলিশ। খোঁজাখুঁজি শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ আসাদের বসতবাড়ির পেছনের একটি জায়গায় নতুন মাটি খোঁড়া দেখতে পায়। নতুন মাটি দেখে পুলিশের সন্দেহ হয় এবং মাটি সরিয়ে প্রথমে একজনের হাত দেখতে পায়। হাতটি ছিল ছোট্ট লিয়নের। পরে গ্রামবাসীর সহায়তায় কটিয়াদী থানার পুলিশ গর্ত থেকে সব মাটি সরিয়ে একে একে তিনজনের লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), পিবিআই এর পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন পিপিএমসহ জেলা পুলিশের পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা জামষাইট গ্রামে ছুটে যান।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ গতকাল রাতেই নিহত আসাদ মিয়ার ভাই দীন ইসলাম, ভাগ্নে আল-আমিন, বোন নাজমা বেগম ও মা জুমেলা খানকে আটক করেছে।

পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি জমি নিয়ে আসাদ মিয়ার সঙ্গে তার ভাইসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরোধ ছিল। এর জের ধরে পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়ে থাকতে পারে। নিহত আসাদ মিয়ার ভাইসহ পরিবারের চার সদস্যকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যারহস্য বের হবে আশা করছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *