পিয়াজ, চালের পর এবার আলু সিন্ডিকেট

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

ঊর্ধ্বগতির বাজারে এবার নতুন অস্বস্তির নাম আলু। ১৫-২০ টাকার আলু কয়েকদিনের ব্যবধানে ৫০-৫৫ টাকা হয়েছে। সস্তা এই পণ্যটি এখন কোথাও কোথাও ৬০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দু’য়েক আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। তার আগে পণ্যটি ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাস গড়েছে আলুর দামে। এমনিতেই বর্তমান বাজারে প্রায় নিত্যপণ্যের দামই চড়া। পিয়াজ, কাঁচামরিচ, চাল-ডালসহ প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর বাড়তি দামে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

এ অবস্থায় আলুর অস্বাভাবিক দামে সর্বত্র ক্ষোভ জন্ম দিয়েছে। নিত্যপণ্যের বাজারে তুলনামূলক সস্তা এই পণ্যটির দামও যখন হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে, তখন চা স্টল, অফিস কিংবা গণপরিবহন, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কেন আলুর দাম বাড়তি? কারণ অজানা। বরাবরের মতো ভোক্তারা যেমন ব্যবসায়ীদের করসাজিকে দায়ী করছেন, তেমনি পাইকারি ও খুচরা ব্যসায়ীদের দাবি, হিমাগারে পর্যাপ্ত মজুত থাকলেও আলুর দাম বাড়াচ্ছেন মালিকরা। তবে গতকাল কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা গেল আরেক চিত্র। অন্যদিনের তুলনায় আড়তগুলোতে অতিরিক্ত আলু মজুত করে রাখা হয়েছে। আড়তজুড়ে বস্তা বস্তা আলু সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ব্যসায়ীরা বলছেন, ক্রেতা নেই তাই বিক্রি না হওয়ায় আড়তে আলু জমে গেছে। গতকাল কাওরান বাজারের পাইকারি আড়ত এবং শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজারসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে বাজারের এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র তথ্যমতে, গেল বছরের এই সময়ে আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। কিন্তু এবার কেন দাম দ্বিগুণ বাড়লো? ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার করোনা সংক্রমণের মধ্যে ত্রাণ হিসেবে প্রচুর আলু বিতরণ হয়েছে। তাছাড়া এ বছর জমিতে আলুর উৎপাদনও কম হয়েছে; আলুক্ষেত চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন কম হয়েছে। কিন্তু সরকারি হিসাবে চাহিদার তুলনায় এবার প্রায় ৩৯ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত রয়েছে।

কারওয়ান বাজারের আড়তদাররা জানান, উৎপাদন মৌসুমের শেষদিকে মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ, রংপুরের বিভিন্ন আড়তে আলু মজুত করেন ব্যবসায়ীরা। এরপর শীত মৌসুম শেষ হয়ে গেলে সারা দেশের পাইকারি বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আলু সরবরাহ করেন ব্যাপারীরা। কিন্তু গত বছর যে পরিমাণ আলু মজুত হয়েছিল, তার চেয়ে এবার চাহিদা বেড়ে গেছে। তাছাড়া উত্তরবঙ্গের বন্যার কারণে এবার আলুর ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে পণ্যটির দাম বেড়েছে।

গতকাল খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিক্রমপুর আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি। রংপুর ও রাজশাহীর আলুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। আর ছোট লাল আলুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা। কাওরান বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে আলুর চাহিদা ৭০ লাখ টন। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত আলুর পরিমাণ প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। তবে সরকারি এই তথ্যের বিপরীতে কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন ভিন্ন তথ্য জানিয়েছে। তারা তাদের মতে, ২০১৯-২০ মৌসুমে ৯০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৯৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে বীজ আলু দরকার প্রায় ১১ লাখ মেট্রিক টন। তাছাড়া সংরক্ষণ পর্যায়ে কিছু নষ্ট ও অপচয় হয়। এ ছাড়া বিদেশে রপ্তানিও হয় কিছু আলু। এদিকে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ৩৬৯টি হিমাগার চালু আছে, যেখানে ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু মজুত আছে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদনের ২৭ শতাংশ আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। অবশিষ্ট আলু কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ হয়ে থাকে। অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে। ফলে প্রতি কেজি আলুতে হিমাগার ব্যবসায়ীরা মুনাফা করছেন ২০ থেকে ২২ টাকা, যা অস্বাভাবিক, অন্যায্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *