সুস্থ হওয়া পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত চান আইনজীবীরা

Slider রাজনীতি


সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বমোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার অভিযোগে করা ১১টি মামলার কার্যক্রমের ওপর হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। অসুস্থতার কারণে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা স্থগিত করে সরকার তাকে মুক্তি দিয়েছে। সম্প্রতি তার মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বৃদ্ধি করে সরকার। অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়ায় এবং আপিল বিভাগে ১১ মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ বহাল রাখায় তার সুস্থ হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য মামলার কার্যক্রমও স্থগিত থাকা উচিত বলে মনে করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তারা বলেন, সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়েছেন। স্বাভাবিক কারণে আইনগতভাবে অন্যান্য মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। আদালতে অ্যাপিয়ার করার জন্য তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। কোনো ট্রায়াল কোর্টে উপস্থিত থেকে মামলা মোকাবেলা করতে হলে তাকে সুস্থ হতে হবে। আর সুস্থ হলে তিনি আদালতে অ্যাপিয়ার করবেন।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, সরকার নির্বাহী আদেশে তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দিয়েছে। স্বাভাবিক কারণে আইনগতভাবে সব মামলার কার্যক্রম স্থগিত থাকছে। তিনি বলেন, বেশ কিছু মামলার ক্ষেত্রেও হাইকোর্ট বিভাগ মামলার কার্যক্রমের ওপর যে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন তা আপিল বিভাগে বহাল করা হচ্ছে। সকল মামলা একই ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ হওয়া উচিত।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিচার আদালতে জেল কর্তৃপক্ষ এক বছর সময়কাল তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে হাজির করতে পারেনি। আর এক বছর হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সরকার দু’টি মামলায় সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দিয়েছে। ম্যাডাম মুক্তি পাওয়ার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। হাসপাতালেও তিনি চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় বিচার আদালতে নির্ধারিত তারিখে তার উপস্থিত হওয়া কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত হয় না। তিনি বলেন, তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি এবং করোনা মহামারী শেষ হওয়ার ওপর নির্ভর করে তিনি কখন আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন বা আদৌ পারবেন কি না?

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দিয়েছে। আদালতে অ্যাপিয়ার করার জন্য তাকে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। কোনো ট্রায়াল কোর্টে মামলা মোকাবেলা করতে হলে তাকে সুস্থ হতে হবে। এটা আমাদের আইন। আর সুস্থ হলে তিনি আদালতে অ্যাপিয়ার করবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোমোট মামলা ৩৬টি। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাজা স্থগিত করে সরকার তাকে মুক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া চলমান অন্য সকল মামলায় তিনি জামিনে আছেন।

আইনজীবীরা জানান, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ১৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এই দুই মামলায় জামিন নিতে তার আইনজীবীরা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মানবিক কারণে চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যসব মামলায় তিনি জামিন পাওয়ার পরও এই দুই মামলায় জামিন না হওয়ায় আইনি পথে জামিনের জন্য চেষ্টার পাশাপাশি গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিতে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১(১) ধারায় সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেয়ার জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়। এতে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পান।

আইনজীবীরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোমোট ৩৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নি¤œ আদালত ও একটিতে হাইকোর্ট থেকে দেয়া রায়ে তাকে মোর্ট ১৭ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই দুই মামলার সাজা স্থগিত রেখে তার মুক্তির মেয়াদ আরো ছয় মাস বৃদ্ধি করে সরকার। এ বিষয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদন এবং আইন ও বিচার বিভাগের আইনগত মতামতের আলোকে ‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১(১) এ দেয়া ক্ষমতাবলে দু’টি শর্তে (বাসায় থেকে চিকিৎসা ও বিদেশ না যাওয়া) খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হলো। গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করা হয়। যার মেয়াদ ২৪ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।

ওই দুই মামলা বাদে অন্য যে ৩৪টি মামলা রয়েছে তার মধ্যে দুর্নীতির অভিযোগে আছে ৩টি। সেগুলো হলো- নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। এই মামলাগুলো এক-এগারোর সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা। খালেদা জিয়ার মামলাগুলোর মধ্যে এই মামলাগুলো এগিয়ে আছে। কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে নবনির্মিত ২ নম্বর ভবনে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এ মামলাগুলো অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য রয়েছে। এরমধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলা ৭ অক্টোবর, নাইকো মামলা ২০ অক্টোবর এবং গ্যাটকো মামলা ১৩ অক্টোবর শুনানির জন্য রয়েছে।

অন্য ৩১টি মামলা ২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, নাশকতা ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে এসব মামলা হয়। পুলিশ, সরকারি দলের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেছেন। এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। কুমিলায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে।

আর রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার অভিযোগে করা ১১টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্টে দেয়া আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ২০ সেপ্টেম্বর, ১৭ আগস্ট ও ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগ এসব মামলায় স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *