১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড এবং ২১ আগস্ট বোমা হামলা -গণতন্ত্রের পথের কাঁটা

Slider জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিরোধী দলের উপস্থিতি অত্যাবশ্যক একথা সকলেরই জানা। বিরোধী দলকে সরকারের অংশও মনে করা হয় সে বিবেচনায়। এইসবই বই-পুস্তকের কথা। বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে সহনশীল সম্পর্ক, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মধ্যেও ক্ষমতায় থাকার বা ক্ষমতায় যাওয়ার সুস্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা সচল থাকতে পারে সব সময় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়।

বাংলাদেশে এই ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ড। পরবর্তীতে ২১ আগস্ট ২০০৪ সালের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী হত্যা গণতন্ত্রের পথে কাঁটা বিছিয়েছে সযতনে।

১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পর ক্ষমতা দখলকারীদের আচরণ সরাসরি খুনীদের পক্ষে ছিলো। খুনীদের শাস্তির আওতায় আনার পরিবর্তে তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। আরো ভয়াবহ অবস্থা তৈরি করা হয়েছে খুনীদের বিচার করা যাবেনা এই মর্মে খুনী মোশতাক সরকারের অধ্যাদেশ যা পরবর্তীতে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান কর্তৃক আইনে পরিনত করা হয়েছিলো।
জিয়ার রহমানের প্রতি যারা সহানুভূতিশীল তাদের সকল যুক্তি আমার কাছে অসার এবং মূল্যহীন হয়ে যায় খুনীদের প্রতি জিয়াউর রহমানের আচরণ দেখে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সকল কিছু ধ্বংস করে দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিয়ে যাওয়ার সব কিছুই করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ এবং চেতনা নতুন প্রজন্মের মন থেকে মুছে ফেলার সকল উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জিয়াউর রহমান। তথাকথিত ভারত বিরোধীতার নামে দেশকে মিনি পাকিস্তান বানিয়েছেন তিনি এবং তার সরকার।

বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দূতাবাসে চাকুরী দিয়ে পুরস্কৃত করা, বঙ্গবন্ধুকে দেশের শত্রু হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক চেষ্টা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার যাবতীয় কর্মকাণ্ডই প্রমাণ করে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক ছিলেন না মনেপ্রাণে।

জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করলে, স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরদের প্রতিষ্ঠিত না করলে, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের দামে কেনা বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হলে আমিও তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারতাম।

নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে মুক্তিযুদ্ধের সব চিহ্ন মুছে ফেলে স্বাধীনতা বিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতার জন্যই জিয়াউর রহমান এবং তার সরকার অনেকের মতো আমার কাছেও অভিযুক্ত।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা এবং হত্যা পরবর্তী সকল কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে শংকটাপন্ন করেছে।

২১ আগস্টের হত্যাকান্ড এবং তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনা হত্যাচেষ্টাকেও একইভাবে মূল্যায়ন করা যায়। গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীণ সরকারের আচরণ কোনভাবেই গণতান্ত্রিক আচরণ ছিলো না। এমন একটি বর্বরোচিত হামলার পর সরকার বিরোধী দলের প্রতি বিন্দুমাত্র সহানুভূতিশীল ছিলো না বরং হামলার ঘটনা নিয়ে হাসি তামাশা করেছে মহান জাতীয় সংসদে, একটি শোক প্রস্তাব নিজেরা উত্থাপন করেনি বিরোধী দলকেও উত্থাপন করতে দেয়নি, আক্রান্ত আওয়ামী লীগকেই অভিযুক্ত করেছে ঘটনার জন্য। হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ না করে সে সময়কার সরকার সকল আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। জজ মিয়া নাটক তৈরি করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে।

১৫ আগস্ট হত্যাকান্ড এবং ২১ আগস্ট হত্যাকান্ড পরবর্তী সরকারের আচরণ একই রকম। যা বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে সহনশীল সম্পর্ক তৈরিতে প্রধান বাঁধা হিসাবে চিহ্নিত।

১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে যা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে তা সম্পন্ন করাই যে ছিলো মূল উদ্দেশ্য তা তৎকালীন সরকারের কর্মকান্ডে পরিস্কার ভাবে ফুটে উঠেছে।

১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এবং ২১ আগস্ট ২০০৪ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পথের কাঁটা। এ কাঁটা যারা বিছিয়েছেন সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব তাদেরই- অন্যথায় এর ফল ভোগ করতে হবে তাদেরকেই।

১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্টের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাঁদের সকলে জান্নাতবাসী করুন।

ডা. মো. আমীর হোসাইন রাহাত
সভাপতি, গাজীপুর জেলা শাখা এবং নির্বাহী সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *