“ঝগড়া চিঠি”

Slider সাহিত্য ও সাংস্কৃতি


প্রিয় মনবালক,
তোমার সাথে আজ তুমুল ঝগড়া করবো বলেই এই চিঠি লেখা।চিঠি লেখা ছাড়াতো তোমার সাথে যোগাযোগ করার আর কোনো মাধ্যম আমার জানা নাই।আমার একান্তই কিছু ব্যক্তিগত কথা যা শুধু আমি তোমাকেই বলতে চাই।সেই কথাগুলোও আজ বিশ্বের সবাই জেনে যাচ্ছে তোমাকে লেখা আমার খোলা চিঠির মাধ্যমে।
আচ্ছা, তুমি এমন কেনো?সব সময় নিজেকে আমার কাছ থেকে গুটিয়ে নাও।
কিন্তু কেন?খুব কি জ্বালাই আমি তোমায়?মাঝে মাঝে আমার হৃদয় গহীনে লুকিয়ে থাকা কিছু কষ্টকথা আমি শুধু তোমার সাথেই শেয়ার করতে চাই।তোমার সাথে যেকোনো কিছু শেয়ার করাতে আমার অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করে।যা তুমি বুঝবে না।
আগে সময় পেলেই ভোর থেকে রাত অবধি সারাদিন ধরে তোমাকে কত কি লিখতাম।তুমি শুধু সিনই করে যেতে কখনই রিপ্লাই দিতে না।মাঝে মাঝে হয়তো দিতে।তবে তাতে আমার ঠিক মন ভরতো না।তারপরেও তোমার প্রতি আমার ভালোলাগা কাজ করতো। ভাবতাম যাক, অন্তত লেখাগুলো তো তুমি সিন করেছো।হঠাৎ একদিন বলা নাই,কওয়া নাই ইগনোরে দিয়ে দিলে।সেদিন মেজাজটা এত খারাপ হয়েছিল যে মনে হয়েছিল একটা ইট দিয়ে তোমার মাথাটা ছেঁচে দেই।
বাজে একটা ছেলে তুমি।কত বড় সাহস আমাকে ইগনোরে রাখো!হাতের কাছে পেলে দুই হাত দিয়ে তোর মাথার চুলগুলো ছিঁড়ে দিতাম।(মেজাজ খুব বেশি খারাপ হলে সম্পর্কটা তুমি থেকে তুই এ নেমে আসে)
আমাকে ইগনোরে রাখার সাহস তোর হয় কি করে?সেই থেকে আমি রোজ তোকে বকা দেই।রোজ…
এরপর একদিন আমি হোয়াটসঅ্যাপ খুললাম।তোমার ফোন নম্বরটা আগেই মোবাইলে সেভ করা ছিল।হোয়াটসঅ্যাপ খুলতেই দেখি তুমি!
এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত।যাহোক ওখানেও দু’একটা কথা লিখলাম।তার জবাবে তুমি লিখলে,”Thank u”।শুধু Thank u লেখা দেখে
মেজাজ গেলো আরো খারাপ হয়ে।
অভদ্র ছেলে,ঐ একটা শব্দ ছাড়া জীবনে কি আর কিছুই শিখিসনি?খুব তো ভাব নিস।তোর ঐ ভাব নেয়ার আমি নিকুচি করি।এরপর হোয়াটসঅ্যাপ এর মেসেজও তুই আর সিন করিস না, সেখানেও ইগনোর।বর্তমানে তুই আমার দু চোখের বিষ।
কি ভাবিস তুই নিজেকে?আমি কিন্তু তোকে চুল দিয়েও আর গুনি না।
তোর উপর এখন আমার অনেক রাগ।মাঝে মাঝে মনে হয় তোকে আমি এক পৃথিবী ভালোবাসি।কখনও কখনও মনে হয় তোকে আমি ঘৃণা করি।
ঘৃণা করি তোর বৈরী আচরণের কারণে।আচ্ছা তুই এমন কেন?তুই থাকিস একদেশে আর আমি অন্য দেশে।এতদূরে থেকেও কি চাইলেই খুব কাছে আসা যায়? নাকি সম্ভব? তাহলে তোর কিসের এত ভয়?এত ভীরু মন নিয়ে ৭ বছর প্রেম করলি কি করে অরুণার সাথে?আমিতো তোর সব খবরই জানি।
তাহলে এত ঢং করিস কেন?
অরুণাকে নিয়ে ভালো আছিস তাতো জানি।আমিও খুব ভালো আছি
আকাশকে নিয়ে।
এই মধ্যবয়সে ওসব চিন্তা মাথা
থেকে ঝেড়ে ফেল।
মাঝে মধ্যে একটু হায়, হ্যালো করা তাও কি খুব দোষের?
আমার কষ্টকথা তোকে শেয়ার করে আমি নিজেকে হাল্কা করি।
ইগনোরে রেখেছিস জেনেও
এখনও আমি তোকে রোজ সেই আগের মতো মেসেজের পর মেসেজ লিখে ইনবক্স,হোয়াটসঅ্যাপ ভরিয়ে ফেলি,
তুই দেখবি না তা জেনেও।
তোকে লিখতে আমার ভালো লাগে তাই লিখি-
জানিস,আজ পত্রিকায় একটা গল্প ছাপা হয়েছে,ওটাও কিন্তু তোকে নিয়েই লেখা,একটু ঘুরিয়ে লিখেছি।
বুদ্ধি থাকলে গল্পটা পড়লেই বুঝতে পারবি।
তুই আমার লেখার অনুপ্রেরণা,এখন যা কিছু লিখি সব তোকে নিয়েই।
জানিসতো কবি, লেখকদের জীবনে এইরকম অনুপ্রেরণা দেয়ার মতো কাউকে না কাউকে থাকতে হয়।
আর তুই কি করলি?আমাকে ইগনোর করে রাখলি সারাটা জীবন।
আচ্ছা, ইগনোরই যদি করবি তাহলে সেদিন আমার পোস্টে লাইক দিলি কেন?কখনও তো দিস না।সম্ভবত ওটাই আমার কোনো পোস্টে তোর প্রথম লাইক।
আমি বার বার ঐ পোস্টটা পড়েছি, তুই কেন লাইক দিলি শুধু এটা বোঝার জন্য।পরে মনে হলো হয়তো ভুল করে হাতের চাপ লেগে লাইক হয়ে গেছে,হতেও পারে।কারণ তুইতো জগতের সেরা অসামাজিক জীব যে কিনা কারো জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীতেও উইশ করে না।
এই কারণেও তোকে আমি মন থেকে ঘৃণা করেছি কতবার।
অথচ তোর বিবাহ বার্ষিকী,তোর জন্মদিন এমনকি তোর যেকোনো বিশেষ দিনেই আমি তোকে উইশ করি।
কারণ তোকে উইশ করতে
আমার ভালো লাগে।
একটা শেষ কথা বলে রাখি আমাকে ইগনোর করে জীবনে তুই বেশি দূর যেতে পারবি না কারণ তুইতো জানিস, আমি একটা পাপী বান্দা হওয়ার পরেও আল্লাহ সব সময় আমার সব কথা শোনে।
আমি কিন্তু খুব রেগে গেলে
আল্লাহর কাছে তোর নামে বিচার দিব কথাটা মনে রাখিস।
আজকের চিঠিটা পড়ার পরে তোর মাথাটা গরম হয়ে যাবে তখন হয়তো ধুম করে আমায় আইডি ব্লক করে দিবি।
দিস।কোনো ব্যপার না, ওটুকু না থাকলেও আমার চলবে।
তুই ভাবিস কি নিজেকে?
তুই আমার জীবনে না থাকলে আমি মরে যাবো?তুই আসলে কখনই আমার জীবনে ছিলি না,আজও নেই,ভবিষ্যতেও থাকবি না।তারপরেও তোর প্রতি আমার ভালো লাগাটা কখনই কমে যাবে না।
কারণ এ এক অন্যরকম ভালোলাগা।যে ভালোলাগায় চাওয়া,পাওয়ার হিসাব থাকে না।এই ভালোলাগার মানে বুঝতে হলে তোকে সহস্রবার জন্মাতে হবে এই পৃথিবীতে। তোর উপর অনেক রাগ জমেছিল,সব আজ ঝাড়লাম।
এখন মাথাটা একদম ঠাণ্ডা।নিজেকে খুব হাল্কা লাগছে,ভালো থাকিস মনবালক।তোকে আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি তবে এ এক অন্যরকম ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় থাকে না কাছে আসার ইচ্ছা কিংবা স্পর্শ সুখে ডুবে মরার আকাঙ্খা।

খায়রুননেসা রিমি
৩০-০৭-২০
বাড্ডা,ঢাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *