বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের হাতেই পূর্ণাঙ্গ হবে সাঈদীর রায়, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স, স্পিকারের রুলিং

জাতীয়

Justice_mozammel_hossain_1_613478852
সদ্য বিদায়ী বিচারপতি মো: মোজাম্মল হোসেন

 

 

ঢাকা: অবসরে গেলেও সদ্য বিদায়ী প্রধান বিচারপতি মো.মোজাম্মল হোসেনের হাতেই থেকে গেলো দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধের মামলার চুড়ান্ত রায় লেখার কাজ। তার হাতেই চূড়ান্ত রূপ পাবে স্পিকারের রুলিং আর ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সসহ আরও বেশ কয়েকটি রায়।

এসব রায়ের সংক্ষিপ্ত আদেশ দেওয়া হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় এখনো প্রকাশ পায়নি।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তার নেতৃত্বের বেঞ্চ থেকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়গুলোর লিখিত রুপ দিতে কাজ করবেন বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন।

রেওয়াজ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টে তার জন্য একটি কক্ষও বরাদ্দ করা হয়েছে।

২০১১ সালের ১৮ মে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পান প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। গত ১৫ জানুয়ারি অবসরে যান তিনি।

বিচারপতি মো.মোজাম্মেল হোসেনের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ রায়গুলোর মধ্যে রয়েছে স্পিকারের রুলিং মামলা। যে মামলাটি ২০১২ সালের ৭ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সরকারকে আপিল করার অনুমতি না দিয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণসহ আবেদনটি নিষ্পত্তির আদেশ দেন।

আদেশে আদালত বলেন, ডিসপোজড উইথ অবজারভেশন্স (পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করা হলো)।

এ মামলাটির উদ্ভব হয় সড়ক ভবন নিয়ে আদালত অবমাননা মামলায় বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরীর মন্তব্য নিয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের রুলিং দেওয়ার জের ধরে।

স্পিকারের রুলিং চ্যালেঞ্জ করে একজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট স্পিকারের রুলিংকে অকার্যকর ও আইনের চোখে ভিত্তিহীন বলে রায় দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে সরকারের করা আবেদন নিষ্পত্তি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের পর রিট আবেদনকারীর আইনজীবী বলেছেন, হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে। তবে এর সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সরকারের আবেদন খারিজ হয়নি। আগের রায় পরিবর্তন করা হতে পারে।

রায়টি পূর্ণাঙ্গ হয়ে বের হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, যার অন্যতম দায়িত্ব সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেলে হোসেনের।

মানবতাবিরোধী অপরাধী দেলায়ওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল মামলারও রায় হয়ে গেছে। রয়েছে পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও আপিল বিভাগে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ওই রায় ঘোষণা করেন।

এর মধ্যে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা সব অভিযোগ থেকে সাঈদীকে খালাস দেন। আর বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মৃত্যুদণ্ড দেন। তবে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মতামতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড হয় সাঈদীর।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় রায় পুর্নিবিবেচনার সুযোগ আসার পর সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধেও পুর্নবিবেচনার দাবি উঠায় গণজাগরণ মঞ্চ। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে পূর্ণাঙ্গ রায় বের না হওয়া পর্যন্ত রায় পুর্নবিবেচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। এই রায়টিও চূড়ান্ত করার দায়িত্ব থাকছে বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের হাতে।

রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের করা আপিলের উপর অধিকতর শুনানি শেষে নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ রায় দেন। সংক্ষিপ্ত রায়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপিল ডিসপোজসড অফ উইথ এক্সপাংশন, মোডিফিকেশন, অবজারভেশন, এন্ড ফাইন্ডিংস’।

এ রায় প্রকাশের পর জানা যাবে, প্রধান বিচারপতির মর্যাদা স্পিকারের সমান হবে কিনা, জেলা জজরা সচিব পদ মর্যাদা পাবে কিনা এবং তিন বাহিনীর প্রধানের মর্যাদা সংসদ সদস্যদের আগে থাকবে কিনা পরে যাবে।

এই রায়েরও পূর্ণাঙ্গ কপি লেখার দায়িত্ব রয়েছে বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের।

গত ১৫ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার পর সুপ্রিম কোর্ট ভবনে গিয়ে প্রধান বিচারপতি তার ছেড়ে যাওয়া কামরা থেকে প্রয়োজনীয় নথি-পত্র ও সরঞ্জাম নিজের নত‍ুন কক্ষে রেখেছেন। ধারনা করা হচ্ছে এখানে বসেই পরবর্তী কাজগুলো সুসম্পন্ন করবেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *