যেমন চলছে ওয়ারির লকডাউন

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি

সকালে ঘুম থেকে উঠেই এলাকায় নতুন চিত্র দেখলো ঢাকার ওয়ারি এলাকার বাসিন্দারা। এলাকার ৮টি পথে বাঁশ দিয়ে অবরোধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। শুরু হয়েছে ২১ দিনের লকডাউন। রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত স্বাস্থ্য ও ঝুঁকি বিবেচনায় ওই এলাকায় সড়ক ও স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকার জনবহুল এলাকার একটি ওয়ারি। ওই এলাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে বেশি মানুষের বসবাস। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। লকডাউনের জন্য এলাকায় কাউকে ঢুকতে ও বের হতে দেয়া হচ্ছে না।
সকাল থেকে এলাকায় সকল দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বেচ্ছাসেবকেরা। লকডাউনের প্রথম দিন হওয়ার কারণে অনেক বাসিন্দা বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেন নি। কেউ এলাকার ভেতরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য গেটগুলোতে গেলে সেখানে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের বচসা হয়। এলাকায় লকডাউন কার্যকরের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে পুলিশ। কারণ এলাকায় প্রচুর ব্যবসায়ীর বসবাস। তারা আসন্ন ঈদে আর্থিক লেনদেনের জন্য এলাকা থেকে বের হতে চাইবেন। বিষয়টি কৌশলে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে, ওই এলাকায় লকডাউন দেয়ার দুইটি কারণ। এক এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি। এ ছাড়াও এলাকায় অনেক ব্যবসায়ীর বসবাস। যারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাতায়াত করেন। এতে সংক্রমণের হার বেশি এলাকাটিতে। গতকাল পর্যন্ত ওই এলাকায় করোনার রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৭৩ জন। এলাকায় করোনা টেস্টের জন্য সেখানে অস্থায়ী বুথ তৈরি করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এলাকায় বন্দি জীবনের ভয়ে সেখানকার অনেক বাসিন্দা ২১ দিনের জন্য অন্যস্থানে চলে গেছেন। কোন কোন বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে গেছেন তাদের নাম ও ঠিকানা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। পুলিশ জানিয়েছে, যদি কেউ লকডাউনের নিয়ম ভঙ্গ করে তবে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে আইনপ্রয়োগ করা হবে।

গতকাল সকালে টিকাটুলি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জরুরি কাজে এলাকার লোকজনদের বাইরে বের হওয়া ও ঢোকার জন্য ১৫টি সড়কের মধ্যে ২টি গেট তৈরি করা হয়েছে। আর ব্লক করা হয়েছে বাকিগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রায় ২০০ স্বেচ্ছাসেবক এলাকায় তৎপর। সরজমিন দেখা গেছে, ওয়ারির লোকজনের মধ্যে তেমন একটা উৎকণ্ঠা নেই। অনেকেই ম্যাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জানা গেছে, লকডাউনের আওতায় যেসব এলাকা থাকবে- টিপু সুলতান রোড, যোগীনগর রোড, জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন, লারমিনি স্ট্রিট, হেয়ার স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, র‌্যাংকিং স্ট্রিট ও নবাব স্ট্রিট।

দেখা গেছে, বলধা গার্ডেন থেকে একজন বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, পুলিশ তাকে যেতে দেয়নি। ওই ব্যক্তির নাম শফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, মতিঝিলে একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করি। করোনায় ওই অফিস দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। কিছুদিন হলো খুলেছে।

আমাকে গেট থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। চাকরি চলে যাবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আব্দুল আজিজ নামে আরেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী জানান, কোতোয়ালিতে একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। কিছুদিন হলো ওই প্রতিষ্ঠান অনেক কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। লকডাউনে পুলিশ তাকে বের হতে দিচ্ছে না। সুমন নামে এলাকার এক চা-দোকানি জানান, এলাকায় কিছু বাসিন্দা লকডাউনের ভয়ে বন্দি থাকতে হবে ভেবে অন্যস্থানে চলে গেছে। পুলিশ একাধিক জনের নাম সংগ্রহ করেছে।

আশরাফ নামে এক স্বেচ্ছাসেবক জানান, এলাকায় শুধু জরুরি খাদ্য ও ওষুধের গাড়ি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও আমাদের মোবাইল নম্বর বিভিন্ন গেটে ঝুলানো আছে। যখন যা চাচ্ছে তখন তারা সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি আরো জানান, যেসব প্রয়োজনীয় গাড়ি এলাকায় প্রবেশ করছে সেইসব গাড়িগুলোর চালকদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে ও জীবাণুনাশক ছিটিয়ে তাদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে পুলিশের ওয়ারি অঞ্চলের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ মানবজমিনকে জানান, ওয়ারি এলাকায় লকডাউনে পুলিশ ডিসিসিকে সহযোগিতা করছে। কাউকে ভেতরে ঢোকা এবং বের হতে দেয়া হচ্ছে না। এলাকায় ভেতরে এবং বাইরে পুলিশের টহল পার্টি, মোবাইল পার্টি এবং হাঁটা পার্টি কাজ করছে। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার সারোয়ার হাসান আলো জানান, লকডাউনের আগে এলাকায় মাইকিং করে কঠোর লকডাউন হবে সতর্ক করা হয়। এলাকায় যখন যাদের যেটা প্রয়োজন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকগণ তাদের তা পৌঁছে দেবে। যতই কঠিন হোক লকডাউন কার্যকর করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *