গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় শিল্পপতি দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা !

Slider জাতীয়


রাতুল মন্ডল নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজধানীর উত্তরায় ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় চৌদ্দ বছর বয়সী গৃহকর্মী আসমাকে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানায় মালিক এস এম তাহের ও তার স্ত্রী শাহাজাদীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায়।

(৩ জুলাই শুক্রবার) উত্তরা পশ্চিম থানায় বাদী হয়ে মালাটি দায়ের করেন নির্যাতিতা আসমার মা জোসনা আক্তার।
মামলার সূত্রে যানাযায়, ঢাকার উত্তরার ৩নং সেক্টরের বাসিন্দা শিল্পপতি মো. এস এম তাহের ও তার স্ত্রী শাহজাদীকে মামলায় বিবাদী করা হয়েছে।
শিল্পপতি মো.তাহের গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানার মালিক। নির্যাতনের শিকার আসমা শ্রীপুর উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের ইমান আলীর মেয়ে।
প্রসঙ্গত, আসমার বড় বোন ফারসিং নিট কম্পোজিট কারখানায় চাকরি করেন। সে সূত্রে গৃহকর্মী হিসেবে আসমাকে নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন কারখানার মালিক। প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে শিশুকে ওই বাসায় পাঠানো হয়। বিগত ১ বছর ধরে সেখানে কাজ করছিল শিশুটি। কাজের ভারে ক্লান্তসহ নানা অজুহাতে শিশুর উপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো শিল্পপতি দম্পতি। বেশ কয়েকবার রান্না করার গরম তেল হাতে ও মুখে নিক্ষেপ করেন গৃহকর্তা শাহজাদী।
এতে আহত হলেও শিশুটি বাড়ির কাউকে জানাতে পারেনি। মাঝে মাঝে টেবিলে খাবার দিতে দেরি হলে শিশুর গালে সিগারেটের ছেঁকা দেওয়া হতো। এমন উপর্যুপরি নির্যাতনে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৯ জুন আলম এশিয়া পরিবহনের একটি পাবলিক বাসে একা বাড়িতে আসে মেয়েটি। বাড়িতে এসে তার পরিবারের কাছে সব খুলে বলে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম তেলে পোড়া দাগ ও গালে সিগারেটের আগুনের ক্ষত দেখতে পায় পরিবার ও এলাকাবাসী।
নির্যাতিতার বড় ভাই জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। আমার বোনটা শ্রীপুরের ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তো। অভাবের কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেনি। এর মধ্যে অভাব ঘুচাতে মা সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখানে ভালো কাজ না পেয়ে ফিরে আসেন। পরে পেটের দায়ে বোনকে গত বছর ফারসিং কারখানার মালিকের বাসায় কাজে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে অমানবিক নির্যাতন করে তাকে আহত করা হয়েছে।
আমরা গরিব মানুষ বলে কি জীবনের দাম নাই?’ বলেই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। জমিস উদ্দিন আরোও জানান, বোনের কোনো মোবাইল ছিল না। তার খোঁজ নেওয়ার জন্য গৃহকর্তা শাহজাদীর মোবাইলে ফোন দিত হতো। ফোনে কথা বলার সময় সামনে বসে থাকতেন। তাই তার বোন এসব নির্যাতনের কথা বলার সুযোগ পেতো না। মাঝে মাঝে ফোনে কান্নাকাটি করতো। এ ঘটনায় যেন আমরা সুবিচার পাই, গরিব মানুষ বলে আমাদের যেন বিচার থেকে বঞ্চিত না করা হয় এটাই চাওয়া।
এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা প্রথমে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করতে যান। কিন্তু ঘটনাটি ঢাকার উত্তরায় হওয়ায় তাদেরকে সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে বুধবার রাতে উত্তরা (পশ্চিম) থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শেষে শুক্রবার অভিযোগটি মামলা হিসাবে গৃহীত হয়।
এ বিষয়ে ঢাকার উত্তরা (পশ্চিম) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) তপন চন্দ্র সাহা সময় জানান, এ ঘটনায় শিল্পপতি দম্পতির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *