স্মৃতিচারণ: স্ত্রী থেকেই চলে গেলেন একজন মন্ত্রীর স্ত্রী

Slider জাতীয় টপ নিউজ লাইফস্টাইল

রিপন আনসারী,গাজীপুর: গতকাল পরপারে চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু। মরণঘাতি করোনা ভাইরাস নিয়ে গেলো তাকে( ইন্না—-রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।

গতকাল সোমাবার সকাল ৮টায় মারা গেছেন তিনি। সিএমএইচ-এ লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গতকালই গাজীপুর মহানগরের সরকারি কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। লায়লা আরজুমান বানু ২ মেয়ে, এক ছেলে এবং ৬ জন নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৩ই জুন মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু সিএমএইচে ভর্তি হন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেলেও লায়লা আরজুমান বানুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি ।


অনুসন্ধান বলছে, গাজীপুর শহরের জোরপুকুর পাড় এলাকায় বর্তমানে মন্ত্রী বাড়ি হিসেবে পরিচিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাসা। এক তলা টিনসেড বাড়িটি এখন শুধুই স্মৃতি। এই বাড়িতেই যৌবনকাল কাটিয়েছেন মন্ত্রী দম্পতি। লায়লা আরজুমান্দ বানু ছিলেন স্কুল শিক্ষক। জয়দেবপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন তিনি। চাকুরী জীবনে শুরু এবং শেষ শিক্ষকতা দিয়েই। সম্মানজনক ভাবে তিনি অবসর গ্রহন করেন। চাকুরী জীবনে একজন আদর্শ শিক্ষিকা ছিলেন।

এলাকায় তিনি একজন অত্যন্ত সৎ ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে পরিচিত। সাদামটা জীবনে ছিল না কোন অহংকার। স্বামী মোজাম্মেল হক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে পৌরসভার চেয়ারম্যান, মেয়র, গাজীপুরের এমপি ও বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়েছেন। আজকের সমাজ ব্যবস্থায় স্বামীদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে অনেক স্ত্রীদের সার্বিক পরিবর্তন ঘটে যায়। আচার আচরণে ও চলনে বলনে অহংকারও ফুটে উঠে। কিন্তু লায়লা আরজুমান্দ বানুর কিছুই হয়নি। তিনি একজন আদর্শ শিক্ষিকা, একজন আদর্শ মা, একজন আদর্শ স্ত্রীই থেকে গেছেন। স্বামীর প্রভাব তার উপর পড়েনি। তিনি নিজের উপর বিশ্বাস রেখে স্বাভাবিকভাবেই জীবন যাপন করতেন। কোথাও কখনো তার মধ্যে অহংকারের জন্ম হয়নি। তার নিজের বাড়ি স্বামীর বাসা-বাড়ির লোকজন ও পাড়া প্রতিবেশী এমনকি সাধারণ মানুষও তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করতে পারেননি কোন দিন। বড্ড অতিথিপরায়ন ছিলেন মন্ত্রীর স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু। স্বামী এত বড় রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়া সত্বেও কেউ তাকে দেখে বুঝতেই পারতেন না, তিনি কোন মন্ত্রীর স্ত্রী। তিনি কোন দিন কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন বলে তথ্য নেই। তার মৃত্যুতে গাজীপুরে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্র্রী সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি ও সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন।

মন্ত্রীর স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দ বানু একজন স্ত্রী হিসেবে যে সুনাম অর্জন করে গেছেন কোন মন্ত্রীর স্ত্রীও তা পারবেন কি না জানা নেই। তবে লায়লা আরজুমান্দ বানু নারী জাতির অহংকার। তিনি নারী জাতির একটি মডেল।

মোজাম্মল সাহেবের একজন ভক্ত বলেছেন, মোজাম্মেল সাহেব জীবনে দুইবার কেঁদেছেন। প্রথমবার জোররপুকুর পাড়ে একটি রাজনৈতিক সভায় আর দ্বিতীয়বার কাঁদলেন গতকাল স্ত্রীর কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে। এতেই বুঝা যায় লায়লা আরজুমান্দ বানু একজন শুণী স্ত্রী হিসেবে বিদায় নিয়েছেন। কোন অহংকারী ক্ষমতাধর কোন রমনী হিসেবে নয়। নিরহংকার এই রমনী নারী জাতির গর্ব।

আজকের সময়ে অহংকারের বাজার। এই বাজারে একজন মন্ত্রীর স্ত্রী শুধুই স্ত্রী হিসেবে বেঁচে ছিলেন সংসার জীবনে। এটি একটি দৃষ্টান্ত। লায়লা আরজুমান্দ বানু হতে পারেন প্রগতিশীল নারীদের একটি আদর্শ। একটি মডেল। যাপিত জীবনে অত্যন্ত সহজ সরল ও অমায়িক ওই রমনী না ফেরার দেশে আজ। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *