প্রকৌশলী দেলোয়ার হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে আসামীদের জবানবন্দি

Slider জাতীয় টপ নিউজ বাংলার আদালত

ঢাকা: ডিএমপি নিউজঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলায় সাথে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম, শাহীন ও ড্রাইভার হাবিব। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হায়েস মাইক্রোবাস উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন উত্তরা ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল পিপিএম।

তিনি বলেন, বিগত ১১ মে ২০২০ তারিখ বিকাল আনুমানিক ৪:০০ টার দিকে তুরাগ থানার ১৭ নম্বর সেক্টরে অজ্ঞাতনামা একটি লাশ দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে সংবাদ দেয়। সংবাদ পেয়ে তুরাগ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝোপের মধ্যে একটু মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। মরদেহের গলায় এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো। হত্যা মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।

ডিএমপি নিউজের সাথে আলাপকালে উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শচীন মৌলিক জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনাটি পরিকল্পিত খুন বলে মনে হয়। অজ্ঞাত পরিচয়ের মৃতদেহটি সনাক্তের জন্য র‌্যাব সদর দপ্তরের সহায়তায় ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় উদঘাটন করা হয়। সনাক্তকৃত ঠিকানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির নাম দেলোয়ার হোসেন (৫০)। তিনি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (অঞ্চল-৭) নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। উক্ত ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে তুরাগ থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

উত্তরা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার শচীন মৌলিক আরো জানান, হত্যা মামলাটি তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (অঞ্চল-৭) এর সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিম (৪১)সহ প্রকৌশলী রাশেদ ও প্রকৌশলী সুফিয়ানকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ভিকটিমের বাসার রাস্তার আশপাশ এবং ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করতে থাকেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভিকটিমের বাসার অদূরে একটি হায়েস মাইক্রোবাসে একজন সাদা পিপিই পড়া ও একজন শার্ট প্যান্ট পড়া ব্যক্তি অপেক্ষা করছে। হঠাৎই তারা একটি রিক্সাওয়ালাকে থামিয়ে তার মোবাইল থেকে কাকে যেন কল করে। কিছুক্ষণ পর রিক্সাওয়ালার ঐ মোবাইলে ফিরতি কল আসলে তারা দ্রুত ভিকটিমের বাসার দিকে গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়। এখানে সাদা পিপিই পরিহিত ব্যক্তির সাথে সহকারী প্রকৌশলী সেলিমের দেহের আকৃতির মিল পাওয়া যায়। বিষয়টি আরও নিশ্চিত হতে ঐ রিক্সাওয়ালকে আটক করে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, পিপিই পরিহিত ব্যক্তি আর প্রকৌশলী সেলিম একই ব্যক্তি। সেলিমের সাথে আরও একজন ব্যক্তি ছিলেন। রিকশাওয়ালার মোবাইল থেকে কল করে মাইক্রোবাস নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ১০০ টাকা ধরিয়ে দেয়া হয় বলে রিক্সা চালক জানান।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার উত্তরা জোন কামরুজ্জামান সরদার ডিএমপি নিউজকে জানান, গ্রেফতারকৃত সেলিমের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় সাদা পিপিই ও কালো জুতা পরিহিত একজন ব্যক্তি বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। উক্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত পিপিই, জুতা ও দেহের আকৃতির সাথে ঘটনার সাথে জড়িত পিপিই পরিহিত ব্যক্তির হুবহু মিল রয়েছে। এসব বিষয় তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত হয়ে প্রকৌশলী সেলিমকে সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে জানালে তিনি এক পর্যায়ে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেন।

হত্যার মোটিভ সম্পর্কে জানতে চাইলে উত্তরার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান সরদার ডিএমপি নিউজকে বলেন, নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার ও প্রকৌশলী সেলিম একই অফিসে সহকর্মী ছিলেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অন্তর্দন্দ্ব ছিল। বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাদের মধ্যে বনিবনা হতো না। হত্যাকান্ডে সহযোগী হিসেবে শাহীন ও মাইক্রোসহ ড্রাইভার হাবিবকে সঙ্গে নেন সেলিম। ঘটনার দিন সেলিম ও তার অন্য দুই সহযোগী মাইক্রোবাস নিয়ে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তাকে গাড়িতে উঠান। গাড়িটি রূপনগর বেড়িবাঁধে পৌছালে সেলিমের ইশারায় মাইক্রোর পেছনে থাকা শাহীন দেলোয়ারের গলায় রশি দিয়ে পেঁচিয়ে টান দেন এবং সেলিম তাকে চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। হত্যার পর মৃতদেহটি ১৭ নম্বর সেক্টরের খালি জায়গায় ফেলে রেখে তারা পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় দেলোয়ারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি দিয়াবাড়ির তিন নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন লেকে ফেলে দেন। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই ঘটনায় ২১ মে ২০২০ গ্রেফতারকৃত শাহীন ও হাবিব আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন এবং বিজ্ঞ আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান সেলিমকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এডিসি কামরুজ্জামান সরদার বলেন তদন্ত অব্যাহত আছে, অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *