শিক্ষায় ছন্দপতন : ৫ কোটি শিক্ষার্থী অনিশ্চয়তায়

Slider জাতীয় শিক্ষা


ঢাকা: শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকেই এবার ছন্দপতন। করোনাভাইরাসের নির্মম হানায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত। প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পুরো সেক্টরে তছনছ অবস্থা। এতে চরমভাবে অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী। স্কুল কলেজ বিশ^বিদ্যালয় পর্যন্ত সব শ্রেণী-বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ। স্কুল পর্যায়ের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চার দফায় সরকারি নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রকাশ করা হয়নি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে হরতাল-অবরোধসহ নানা কারণে দিনের পর দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থেকেছে কিন্তু তখন শিক্ষার্থীরা নিয়মিত প্রাইভেট-কোচিংয়ে পড়ত। এখনকার এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কে ঘর থেকেই বের হওয়ার উপায় নেই। নিকটাত্মীয় কিংবা অন্যান্য স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ নেই, নেই দেখা সাক্ষাৎ। এক কথায় ঘরবন্দী সবাই। ফলে বাসায় দীর্ঘ সময় পেলেও শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা এগোচ্ছে না। সবাই অপেক্ষায় আছে কবে আবার প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এ দিকে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে বিকল্প পন্থায় সংসদ টিভিতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শ্রেণীভেদে নিয়মিত ক্লাস চালু রাখা হয়েছে। তবে অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা অভ্যস্ত নয় বিধায় এই প্রক্রিয়াটিও খুব একটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেনি। টিভিতে ক্লাস করতে অনেক শিক্ষার্থী আগ্রহীও না। এ ছাড়া সংসদ টিভির ক্লাসের ভিডিও রেকর্ডিংয়ের অনেক ত্রুটি রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর এ বিষয়ে তাদের সীমাবন্ধতার কথা স্বীকারও করেছে। তারা ক্লাস রেকর্ডিয়ের এই সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন।

অভিভাবকদের অনেকে জানিয়েছেন, বাসায় বন্দী অবস্থায় তাদের সন্তানরা পড়তে চায় না। এ দিকে ঈদের পর কবে খুলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেটাও নিশ্চিত নয়। ফলে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী এখন তাদের শিক্ষাবর্ষের বাকি সময় নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, করোনার এই সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েই আমরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি। তবে স্কুল বন্ধ থাকার এই সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা অব্যাহত রাখতে আমরা টেলিভিশনে ক্লাস সম্প্রচার করছি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় পর্যায়েই নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষা সচিব আরো জানান, চলতি মাসেই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ফল ঘোষণার পর স্বল্প সময়ের মধ্যেই আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির বিষয়ে নির্দেশনা জারি করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিনের মধ্যে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষারও রুটিন প্রকাশ করে দ্রুততম সময়ে পরীক্ষা নেয়া হবে। তখন শিক্ষা সেক্টরের চলমান এই স্থবিরতা থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *