ঢাকা: স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে দিনে ৬৫ হাজারের মতো মানুষ সংক্রমিত হতে পারে, এমন একটা বিশ্লেষণ তাদের রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই লকডাউন কিছুটা শিথিল করেছে। তবে বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি খারাপ হলে আবারো লকডাউন কঠোর করা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন গার্মেন্টস কারখানা চালু করার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক চাপের কারণে সীমিত পরিসরে শিল্প কারখানা বা ব্যবসা চালু করার কথা বলা হলেও তা সীমিত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লকডাউন ভেঙে পড়ায় হাজার হাজার মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করাও সম্ভব হয়নি বলে তারা মনে করেন।
তাহলে বাংলাদেশের জন্য এখন উপায় কী আছে বা কোন পথ খোলা আছে-এসব প্রশ্ন এখন আলোচনায় আসছে।
সীমিত পরিসরের বিষয়টি কথাতেই রয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো, গার্মেন্টস মালিকরা প্রায় সবাই তাদের কারখানা চালু করেছেন।
কারখানাগুলো খোলার সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের ঢাকায় ছুটে আসার সেই অভাবনীয় দৃশ্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।
এখন অনেক কারখানায় শ্রমিকের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির প্রশ্ন উঠেছে।
কিন্তু গার্মেন্টস খোলার মধ্যেই সরকারের চিন্তা সীমাবদ্ধ থাকেনি।
একের পর এক শিল্পকারখানা এবং দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে দ্রুততার সাথে নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করার একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস এর সিনিয়র গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেছেন, এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই। তবে তাড়াহুড়ো না করে পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন।
‘এখন কোন অবস্থাতেই জীবন আর জীবিকাকে আলাদা করে দেখার উপায় নাই। আমি যদি বলি শুধু জীবন রক্ষা করবো, কি করে করবো-কোটি কোটি মানুষ, এত মানুষের খাবারের সংস্থান আমি কি করে করবো?সুতরাং সেই জায়গাটাতে চিন্তা করলে আমাকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেতে হবে।’
কিন্তু সেখানেই পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল বলে গবেষক নাজনীন আহমেদ মনে করেন।
‘লকডাউন অবস্থা থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কতটা যাবো,সেটা নির্ভর করবে আমি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার ফলে বাড়তি যে স্বাস্থ্যঝুঁকিটা তৈরি হলো বা সহজ কথায় বললে বাড়তি যে করোনা রোগী আসার সম্ভাবনা তৈরি হলো, সেটা সামাল দেয়ার মতো স্বাস্থ্য সুবিধা আমার আছে কি না-এটা দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার দরকার ছিল।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘মুশকিলটা হচ্ছে, দেড় মাস পর এখন যে গতিতে আমরা সবকিছু খুলে দিতে চাচ্ছি, সেই অবস্থায় কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সামাল দেয়ার ক্ষমতা আমরা বাড়াইনি।’
চাপের কারণেই কি ঢিলেঢালা লকডাউন?
প্রায় দেড় মাস ধরে লকডাউনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিক-কর্মচারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার তাগিদ একটা চাপ তৈরি করছিল। এছাড়া গার্মেন্টস মালিকসহ বিভিন্ন মহলের চাপ সরকারের বিবেচনার বড় বিষয় ছিল।
ইসলামপন্থী বিভিন্ন সংগঠনের চাপের মুখে মসজিদে জামাতে নামাজও মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে।
সবকিছুই যেন চালু হচ্ছে এমন একটা পরিবেশ দেখা যাচ্ছে।
যানবাহন আর মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর রাস্তাগুলোও আগের সেই ব্যস্ত অবস্থায় ফিরতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সের শিক্ষক নাদিরা পারভিন মনে করেন, আরো সময় নেয়ার সুযোগ থাকলেও তার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘এখন দিন দিন সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন আরেকটু সময় নেয়া উচিত ছিল। এখনই সময় হয়নি সবকিছু খুলে দেয়ার।’
লকডাউন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিথিল করা ছাড়া সরকারের বিকল্প ছিল না। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের অনেকে এমন বক্তব্যই দিয়েছেন।
কিন্তু মানুষকে ঘরে রেখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর অন্যতম উপায় হিসাবে দেখা হয় লকডাউন পদ্ধতিকে।
সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে লকডাউন শিথিল করার সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
লকডাউন ভেঙে পড়ায় সংক্রমণে বিপর্যয় দেখা দিলে উপায় কী হতে পারে?
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, যেহেতু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করা হয়েছে। এখন এর প্রভাবে সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারো কঠোর লকডাউন এমনকি প্রয়োজনে কারফিউ দেয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না বলেও তিনি মনে করেন।
‘এখন করোনার ঝুঁকি প্রতিদিনই বাড়ছে। এই অবস্থায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এখন সরকারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এটা। তারা হয়তো অর্থনৈতিক দিকটা বেশি বিবেচনা করেই লকডাউন শিথিল করেছে। তবে শর্ত দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভয় হলো যদি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বো আর কি।’
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আরো বলেছেন, ‘আমাদের কোন ঝুঁকি নেয়ার আগে আরেকবার চিন্তাভাবনা করা উচিত। এমনকী আমি একথাও বলছি, যেহেতু লকডাউন শিথিল করা হলো, এবং তাতে যদি দেখা যায় যে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। তাহলে আবার খুব শক্তভাবে লকডাউন দিতে হবে। প্রয়োজনে যেন কারফিউ দেয়া হয়, এই অবস্থা করতে হবে।’
আবারো কঠোর লকডাউন প্রয়োজনে কারফিউ দেয়ার পরামর্শ : সরকার কী চিন্তা করছে?
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, সরকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই লকডাউন কিছুটা শিথিল করেছে। তবে বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি খারাপ হলে আবারো লকডাউন কঠোর করা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
‘লকডাউনে কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেহেতু বন্ধ, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কতদিন আর এভাবে সবকিছু বন্ধ করা যাবে। কাজেই সরকারের সকল মহলে একসাথে আলোচনা করে মনে করা হযেছে যে,আমরা কিছুটা শিথিল করি। অবশ্যই এই শিথিলের সাথে সাথে মানুষকে সতর্ক হতে হবে এবং মানুষকে আমরা সেই পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘লকডাউন শিথিল করার পাশাপাশি আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। যদি সংক্রমণের সংখ্যাটা খুব বেশি বেড়ে যায়, তাহলে অবশ্যই আবার লকডাউন কঠোর করতে হবে। সে ব্যাপারে সরকার সজাগ রয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধের অন্যতম উপায় লকডাউন যখন ঢিলেঢালা হয়েছে। তখন সংক্রমণ খারাপ অবস্থায় চলে যেতে পারে- এই ধারণা সরকারের মাঝেও রয়েছে।
পরিস্থিতির বিপর্যয় হলে তা সামলাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা কতটা করা হয়েছে-তা নিয়েও কিন্তু অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
পরিস্থিতির শুরু থেকেই সীমিত পর্যায়ে পরীক্ষা এবং চিকিৎসার অপ্রতুলতা নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক একজন পরিচালক ডা: বে-নজীর আহমেদ বলেছেন, সংক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে গেলে সেই পরিস্থিতি জন্য পরীক্ষা করার ক্ষমতা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই বলে তিনি মনে করেন।
‘প্রথমে পরীক্ষার ক্ষমতার কথা বলি, আমরা ক্যালকুলেশন করছিলাম যে প্রতিদিন ৫০ হাজার পরীক্ষা করা দরকার। সেখানে ২০ হাজার করা গেলেও চলে। কিন্তু আসলে ঘাটতি রয়েছে। আর চিকিৎসার কথা যদি বলেন, তাতে আমাদের অনেকটা পথ হাঁটতে হবে। সংক্রমণ যদি হয়, তাহলে আনুপাতিক হারে হাসপাতালে ভর্তির চাহিদাও বাড়বে। সেটা সামাল দেবার মতো ব্যবস্থা বাংলাদেশে নাই।’
সরকারি হিসাবে সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে ১২০০’র মতো আইসিইউ যা আছে, তার সবগুলো ব্যবহার করেও চাপ সামাল দেয়া সম্ভব হবে কি না- এনিয়েও আলোচনা রয়েছে।
‘পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে দিনে সর্বোচ্চ ৬৫০০০ মানুষ সংক্রমিত হতে পারে।’
অধ্যাপক আবুল কালাম কালাম আজাদ বলেছেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে দিনে ৬৫ হাজারের মতো মানুষ সংক্রমিত হতে পারে, এমন একটা বিশ্লেষণ তাদের রয়েছে।
‘আমাদের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের কাছে দুই ধরণের বিশ্লেষণ দিয়েছেন। তাদের বিশ্লেষণ হচ্ছে, যদি খুব খারাপ পরিস্থিতি হয়, তাহলে একদিনে সর্বোচ্চ ৬৫ হাজারের মতো মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। যদি আমরা সেটাও মাথায় রাখি, তাহলে কিন্তু তার পাঁচ ভাগের এক ভাগকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে। এটা যদি হয়, তাহলে আমাদের ১২ থেকে ১৩ হাজারের মতো মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হতে পারে।’
সেই খারাপ পরিস্থিতির হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তিনি আরো বলেছেন, ‘আমাদের এই মুহূর্তে অনেকগুলো হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা আছে। সম্প্রতি চিকিৎসা প্রটোকলটাও একটু পরিবর্তন হয়েছে। যেমন অনেক রোগীর ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ না থাকলেও এবং ওষুধের প্রয়োজন না হলেও আমরা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে রাখতাম।
‘সেখানে এখন প্রটোকলে পরিবর্তন এনে বলা হয়েছে যে, যদি পর পর তিন দিন কোনো ওষুধ প্রয়োজন না হয় এবং রোগী ভালো থাকে তাহলে তাকে ছুটি দেয়া যেতে পারে,’ বলেছেন অধ্যাপক আবুল কালাম কালাম আজাদ।
‘এছাড়া আমরা বসুন্ধরা কনভেশন সেন্টারে দুই হাজার শয্যার আইসোলেশন হাসপাতাল করছি। এভাবে আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা সুন্দরভাবে চালিয়ে নিতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।’
দেশে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ হার্ড ইমিউনিটির কথা বলছেন।
একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যদি নির্দিষ্ট অনুপাতে ভ্যাকসিন দেয়া যায় এবং ওই কমিউনিটিতে সংক্রমণ বন্ধ হয়। তখন তাকেই বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি।
আর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে একটি জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ বা ৮০ শতাংশ মানুষকে আক্রান্ত হতে হবে। তাতে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
করোনাভাইরাস সম্পর্কিত সরকারের কারিগরি কমিটির একজন সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, ভ্যাকসিন দিয়ে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তুলতে ঝুঁকি কম থাকে। তবে বাংলাদেশে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে যে অবস্থা করা তৈরি করা হচ্ছে, তাতে প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমিউনিটির উপরই নির্ভর করতে হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তবে এখনো যেহেতু ভ্যাকসিন আসেনি, বাংলাদেশে তার আগে প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার বিষয়কে সমাধানের পথ হিসাবে দেখা সঠিক হবে না বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুনশি।
‘আমাদের লকডাউন তো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এরফলে আমরা যদি হার্ড ইমিউনিটির কথা চিন্তাও করি, যে সব দেশে এনিয়ে কাজ হচ্ছে বা চিন্তা করা হচ্ছে, তারাও কিন্তু প্রকাশ্যে বা বৈজ্ঞানিকভাবেও বলছে না যে হার্ড ইমিউনিটি কাজ করছে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘হার্ড ইমিউনিটি যদি গড়ে তুলতে হয়, তাহলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লোককে আক্রান্ত হতে হবে। তাহলে এতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বাড়বে। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কিন্তু এত বেশি রোগী এবং এত বেশি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত নয়। আমার মনে হয়, আমরা আসলে একটা ব্লাকহোলে দিকে এগুচ্ছি, অজানা গন্তব্যের দিকে এগুচ্ছি।’
অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহও মনে করেন, প্রাকৃতিক হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার ভরসায় বসে থাকা ঠিক হবে না। তিনি বলেছেন, যেহেতু চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা আছে। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে হার্ড ইমিউনিটি গড়ে তোলার চিন্তা থাকলে সেটা একটা অসহায় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন পেতে এখনো অনেক সময় প্রয়োজন। এর চিকিৎসায় সুনির্দিষ্ট কার্যকর কোনো ওষুধও নেই। তাহলে করোনাভাইরাস মহামারি সামলাতে বাংলাদেশের সামনে কি কোনো পথ খোলা নেই।
বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশকে এখনো প্রতিরোধের দিকেই নজর দেয়া উচিত।
এখন মাস্ক পরা আর হাত ধোয়া ছাড়া কী বাংলাদেশের আর কোনো উপায় নাই
ডা: বে-নজীর আহমেদ বলেছেন, প্রতিদিনই সংক্রমণের হার বাড়ছে এবং প্রতিরোধের অনেক সময় ও সুযোগ নষ্ট হয়েছে। এরপরও এখনো প্রতিরোধের পথে হেঁটেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
‘এখন আর প্রায় কিছুই আমাদের হাতে নেই। লকডাউনটা ছিল। এখনো প্রতিরোধ বা প্রিভেনটিভ ছাড়া কিউরেটিভ সাইটে আমরা ভালো করতে পারবো না। ফলে প্রতিরোধের ব্যবস্থাগুলোতেই আবার জোর দিতে হবে।’
এখনকার পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে দেখেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে পরিস্থিতি যে অবস্থায় নেয়া হয়েছে, তাতে আরো খারাপ অবস্থা এড়ানোর উপায় সংকুচিত হয়েছে।
তার বক্তব্য হচ্ছে, প্রতিরোধের বিষয়টা এখন একেবারে মানুষের ব্যক্তিগত চেষ্টার ওপর নির্ভর করবে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউনের মাধ্যমেও সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টা করা যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
‘বাংলাদেশে এখন অপশন ওই মাস্ক পড়া আর হাত ধোয়া ছাড়াতো আর কিছু থাকলো না। লকডাউন তো মানে না। তার গার্মেন্টস, দোকানপাট মসজিদ সব খুলে দেয়া হলো। তাহলে মাস্ক পরা আর হাত ধোয়া ছাড়া থাকলোটা কী? আর ব্যক্তিগত সচেতনতাই এখন প্রধান উপায়।’
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগও প্রতিরোধের প্রশ্নে মানুষের চেষ্টার ওপর নির্ভর করছে বলে মনে হচ্ছে।
ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত সংক্রমণ স্লো করার চেষ্টা
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণের গতি শ্লথ করা যায় কি না- সেই চেষ্টা তারা করবেন। ফলে লকআউনসহ প্রতিরোধের উপায়গুলো বাস্তবায়নের দিকেও তাদের নজর থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
‘আমরা মনে করি যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হবে। বাংলাদেশও সেই ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সাথে সাথে যাতে জনগণকে দিতে পারে, বাংলাদেশও কিন্তু সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো, এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত আমরা যদি সংক্রমণের হার একটু স্লো করতে পারি। এটা আমাদের কৌশল।’
যদিও সরকারের নীতি নির্ধারকদের অনেকে বলেছেন, একদিকে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকট বা দুর্ভিক্ষ যাতে না হয়-এই উভয় সংকট নিয়ে এগুতে গিয়ে তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী সব উপায় ব্যবহার করছেন। আর তাতে তারা ঝুঁকির বিষয়ও বিবেচনায় নিচ্ছেন।
তবে সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানোর উপায় এবং সময় শেষ হয়ে যায় কি না- সেই উদ্বেগ রয়েছে বিশ্লেষকদের মাঝে।
সূত্র : বিবিসি