নিম্নমানের সেবায় কমেছে এয়ারটেলের গ্রাহক

তথ্যপ্রযুক্তি

ঢাকা: প্রতিনিয়ত চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়েও গ্রাহক ধরে রাখতে পারছে না মোবাইল অপারেটর এয়ারটেল। দ্রুত গতিতে উল্লেখযোগ্য হারে কমছে গ্রাহক সংখ্যা। গত জুন থেকে অক্টোবর এ পাঁচ মাসেই ১০ লাখ ৭৪ হাজার গ্রাহক এয়ারটেল ছেড়েছে। জুন পর্যন্ত এয়ারটেলের সক্রিয় গ্রাহক ছিল ৮৫ লাখ চার হাজার। তা কমে সেপ্টেম্বরে হয়েছে ৭৪ লাখ ৬৬ হাজার। এমন তথ্যই উঠে এসেছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) প্রতিবেদনে।

আর গ্রাহক কমে যাওয়ার তথ্য খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে এয়ারটেলের নিম্নমানের সেবার চিত্র। এয়ারটেল ব্যবহার করেন কিংবা করতেন এমন গ্রাহকরা জানিয়েছেন, নিম্নমানের সেবার কারণেই তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

কেন গ্রাহক কমছে, আর এ থেকে উত্তরণের জন্য কী পদক্ষেপ নিচ্ছে এয়ারটেল জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও মন্তব্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

তবে গ্রাহকদের অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মূলত দু’টি কারণে গ্রাহকরা এয়ারটেল ছাড়ছে। দুর্বল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের ধীরগতি হওয়ায় গ্রাহক হারাচ্ছে এ মোবাইল অপারেটরটি।

গ্রাহকরা জানান, ফোনে কথা বলার সময় স্পষ্ট কথা শোনা যায় না, আবার প্রায়ই লাইন কেটে যায় কথা বলার সময়। মোবাইল ব্যবহারকারীদের বেশিরভাগই তরুণ। তাদের উপযোগী ইন্টারনেট প্যাকেজ দিতেও ব্যর্থ হয়েছে এয়ারটেল। এমন কথাই বলেছেন তরুণ মোবাইল ব্যবহারকারীরা।

বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, টানা পাঁচ মাস ধরেই কমছে মোবাইল ফোন অপারেটর এয়ারটেলের সচল সিমের সংখ্যা। গত জুন মাসের শেষেও অপারেটরটির এ ধরনের সিম ছিল ৮৫ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে অক্টোবর যেতে না যেতেই তা ১০ লাখ ৭৪ হাজার কমেছে।

বিটিআরসির প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অক্টোবর শেষে সব অপারেটরের সচল গ্রাহক ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার। সেপ্টেম্বরের শেষে সচল সিম ছিল ১১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৩ হাজার। এয়ারটেলের গ্রাহক কমায় পুরো টেলিযোগাযোগ খাতেও অনেকটা প্রভাব পড়েছে।

হোসেন নামের একজন এয়ারটেল ব্যবহারকারী বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন ধরেই এয়ারটেলের পোস্ট-পেইড সংযোগ ব্যবহার করছি। এক বছর ধরেই কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। বার বার কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করলেও তারা জানিয়েছে, নেটওয়ার্কের আপগ্রেডেশনের কাজ চলছে, দ্রুত ঠিক হবে। কিন্তু সুফল আসেনি। গত তিন মাস আমি এ সংযোগ ব্যবহার করিনি। সম্প্রতি তাদের পোস্টো পেইডে নতুন লোভনীয় প্যাকেজ ঘোষণা করে। লোভে পড়ে আমি সংযোগ চালু করে আবার সেই আগের সমস্যায় ভুগছি।’

হোসেন আরো বলেন, তাদের এই সমস্যার কথা জানাতে গত ২৮ ডিসেম্বর এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ারে ফোন করি। কিন্তু দুর্ভাগ্য গ্রাহক সেবার দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধিও ঠিক মতো শুনতে পাননি আমার কথা। কারণ সেই এক, নেটওয়ার্কজনিত সমস্যায় ঠিক মতো শুনতে না পাওয়া।’ (অডিও সংযুক্ত)

ধ্রুব নির্ঝর নামের এক মোবাইল ব্যবহারকারী বলেন, ‘এক সময় এয়ারটলের সেবার মান ভালো ছিল, এখন আর নেই। তাই এয়ারটেল ব্যবহার করছি না। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, কিন্তু এয়ারটেলের ঠিক মতো সেবা পাওয়া যায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘এয়ারটেলের কাস্টমার কেয়ারের সেবাও দুর্বল। ফোনে টাকা খরচ করে ভুল তথ্য পেতে হয়। একেকবার ফোন দিলে একেক জন একেক রকমের তথ্য দেন।’

ফারুক হোসেন নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘উদ্ভুত রকমের কর্মকাণ্ড এয়ারটেলে। আমি পোস্ট-পেইড সংযোগ ব্যবহার করতাম। সেই সংযোগ থেকে ইন্টারনেট প্যাকেজ চালু করতে হলে নাকি প্যাকেজের টাকা জমা দিতে তাদের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে যেতে হবে। অথচ এয়ারটেল বন্ধ করে অন্য অপারেটর থেকে এসএমএস দিয়েই চালু করেছি ইন্টারনেট। কেন কষ্ট করে টাকা জমা দিতে কাস্টমার কেয়ারে যাবো?’

এমন অভিযোগ শুধু রাজধানীর গ্রাহকদের নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানের মোবাইল ব্যবহারকারীদের কাছ থেকেও পাওয়া গেছে এমন অভিযোগ। মুক্তি রানী দাস থাকেন দিনাজপুরে। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমি এয়ারটেল ব্যবহার করে খুবই বিরক্ত। সারাদিন তাদের নানা রকমের অফার নিয়ে এসএমএস আসে। অথচ প্রায়ই মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাই না। কথা বলতে সমস্যা হয়। টাকা খরচ করে সমস্যা কেনো পুষবো। তাই এখন আর এয়ারটেল ব্যবহার করি না।’

বিটিআরসির প্রকাশিত প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *