মাওনা চৌরাস্তার ফায়ার স্টেশনে সেকেলের আক্রমনে আহত একাল!

Slider জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত

শাহান সাহাবুদ্দিন: শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অদ্ভুত কান্ড করছে, করে যাচ্ছে; সম্ভবত স্টেশন কর্তৃপক্ষ ভুলে গেছেন তাদের কাজটা কি, নিজেদের পরিচয় ভুলে গিয়ে তারা হয়ে গেছেন উম্মাদ, ফিরে গেছেন মধ্যযুগে। তারা এখন পরিষেবা দিচ্ছেন মানুষকে ইফতার ও সেহরিতে ডেকে তোলার। তার জন্য আশ্রয় নিচ্ছেন বিকট শব্দে সাইরেন বাজানো। এতে করে সন্তানসম্ভবা মা তো বটেই, বৃদ্ধ- বৃদ্ধা, শিশু ও আশপাশের হাসপাতালের রোগী পড়ছেন মহা বিপর্যয়ে, ঝুঁকিতে আছে তাদের প্রাণ; এমনকি বিকট এই শব্দে স্টেশনের চারদিকে থাকা বাড়ি ঘরগুলো কেঁপে উঠছে, দোলে উঠছে সাইরেন বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই।

শব্দ আইনে সাধারণ মাত্রার শব্দ ৬৫ থেকে ৭৫ ডেসিবেল হিসেবে ধরা গেলেও এদের সাইরেণের শব্দ এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি।

এ নিয়ে আমার অনুজপ্রতিম বন্ধু কবি মেহেদী হাসান রনী গতোকাল ও আজ ফোন দিয়ে গভীর উৎকণ্ঠা ও শংকার কথা জানালেন। রনীর বন্ধু ও জীবন সঙ্গিনী আমার ছোট বোন ডা. শারমীন সুলতানা সন্তানসম্ভবা। শারমীন নিজেও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তার সঙ্গে ফোন দিয়ে এই উদ্ভট উৎকট সাইরেন না বাজানোর অনুরোধ করেছে। যেমন সাক্ষাত করে এই নির্যাতন থেকে বাঁচার অনুরোধ জানিয়েছেন আমাদের প্রিয় অধ্যাপক আহম্মেদুল কবির খোকন স্যার, রনীসহ একাধিক ব্যক্তিত্ব। অনুরোধে কর্তৃপক্ষ সাড়া তো দেননি উল্টো উদ্ভট যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। যে যুক্তি মধ্যযুগকে সমর্থন করে। সঙ্গে এটাও যোগ করেছেন, তাদের এ কাজে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা আছে।

প্রশ্ন হলো, ফায়ার সার্ভিসের কাজ কি ইফতার ও সেহরিতে যুদ্ধের দামামার মতো সাইরেন বাজিয়ে নাগরিকের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলা, তাদের জীবন বিপর্যয়ে ঠেলে দেওয়া? আমাদের ধর্ম দর্শন এ বিষয়ে কি বলে? ধর্ম দর্শন কোন অবস্থাতেই কারো জীবন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে ঠেলে দেওয়াকে অনুমোদন করেন না। আল্লাহর রাসুলের সুন্নাহ অলীক নয়, বিজ্ঞানের বাইরে নয়, সময় প্রবাহের উল্টো দিকে নয়।

অবাধ তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে ইফতারির সময় জানা বা সেহরির সময় ঘুম থেকে উঠার জন্য হাতের কাছে মোবাইল আছে, মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখলেই হয়। এমনকি স্টেশনের আশে পাশে ৮/১০ টি মসজিদ আছে, যেখান থেকে বার বার মাইকে এ্যানাউন্স করা হচ্ছে। তারপরেও মাওনা চৌরাস্তার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্তৃপক্ষ আধুনিক মনস্কতা এড়িয়ে চলে মহান আল্লাহকে পাওয়ার নাম করে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে আমানতের খেয়ানত করে মানুষের অভিশাপ নিয়ে বেহেস্ত লাভ করতে গিয়ে জাহান্নামকে ক্রয় করতে চান, সেই সঙ্গে তাদের দলে যুক্ত করতে চান আমাদের জেলা প্রশাসক তরিকুল ইসলাম সাহেবকে? তরিকুল সাহেবকে যতোটুকু জানি এবং চিনি, তিনি সেকেলে হওয়ার কথা না। ধর্মের সঠিক দর্শন ও ব্যাখ্যার বাইরে তিনি যাবার কথা না। হয়তো তিনি এ বিষয়ে জানেনই না!

এ বিষয়ে আমি অসংখ্য ভুক্তভোগীর অার্তির সঙ্গে একাত্ম হয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস. এম. তরিকুল ইসলাম সাহেবের দৃষ্টি অাকর্ষণ করছি। একই সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

আশা করছি মাওনা চৌরাস্তার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তার ঘুম ভাঙবে, তার সুমতি হবে, এবং তিনি পবিত্র রমজানে স্বস্তিতে থাকতে দেবেন অাশপাশের হাজারো মানুষকে।

[email protected]

শাহান সাহাবুদ্দিনঃ কবি,লেখক ও সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *