সুপ্রিম কোর্টের দরজা খুলেছে

Slider জাতীয় বাংলার আদালত

ঢাকা: বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট কোভিড–১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যেই স্বল্প পরিসরে আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আপাতত হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন একটি একক বেঞ্চ সকল অধিক্ষেত্রের মামলা এবং আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এককভাবে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন।

আশা করা হচ্ছে, দেশের করোনা মোকাবেলা সংক্রান্ত বেশ কিছু রিট মামলার শুনানি অচিরেই দেখা যেতে পারে। কারণ ইতিমধ্যে বৃহত্তর সিলেটের ২ কোটি মানুষের জন্য ২০টি ভেন্টিলেটর, স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িভাড়াসহ নিরাপত্তা, হোম কোয়ারেন্টিন সংশ্লিষ্ট বাড়ির সামনে সতর্কতা সাইনবোর্ড টানানোর মতো বিষয়ে আইনি নোটিশ জারি করেছেন আইনজীবীরা।

গত ১১ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট কোভিড পরিস্থিতির কারণে স্বল্প পরিসরেও উচ্চ আদালত পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্ট। গত কয়েকদিনে সুপ্রিমকোর্টের অন্তত ১৪ জন আইনজীবী সীমিতভাবে হলেও আদালত খুলে দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। বাংলাদেশ সুপ্রিমেকার্ট আইনজীবী সমিতির আওয়ামী লীগ সমর্থিত সভাপতি মো. আমিন উদ্দিন এবং বিএনপি সমর্থিত সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবিষয়ে একমত হয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা করেন। তাঁরা উভয়ে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছিলেন যে, প্রধান বিচারপতি তাদের অনুরোধ অবিলম্বে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার এম এ হালিমসহ অনেকেই আদালত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিকূলে দৃঢ় মত দেন।

তারা তাদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সিলেটের জন্য ভেন্টিলেটর চেয়ে আইনি নোটিশ প্রদানকারী ব্যারিস্টার এম কাইয়ুম গত ২১ এপ্রিল ‘‘ ক্লোজার অব সুপ্রিমেকার্ট : ফান্ডামেন্টাল রাইটস সাসপেন্ডেড ডিউরিং প্যান্ডেমিক?’ শীর্ষক নিবন্ধ প্রকাশ করেন দি ইন্ডপিন্ডিন্টে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাবেক সম্পাদক এডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন মেহেদীর নেতৃত্বে একদল আইনজীবী আদালত না খোলার পক্ষে সামাজিক মিডিয়ায় অবস্থান নিয়েছিলেন।

শুধু অতীব জরুরি বিষয়
আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: দেশব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলা এবং বিস্তাররোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত দেশের সকল আদালতের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অতীব জরুরি বিষয়সমূহ শুনানির নিমিত্ত ছুটিকালীন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সকল অধিক্ষেত্রের অতীব জরুরি বিষয় সমূহ শুনানির নিমিত্ত হাইকোর্ট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। আর আদালত পরিচালনার কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং সামাজিক দূরত্ব অনুসরণের নিয়ম-কানুন বিষয়ে বিচারপতি মহোদয়গণ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন। এছাড়া ছুটিকালীন সময়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো: নুরুজ্জামান আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে বসবেন।

সপ্তাহে দুদিন জামিন শুনানি
দেশের অধস্তন আদালতগুলোর বিষয়ে বৃহস্পতিবার জারি করা আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যেক জেলার জেলা ও দায়রা জজকে এবং মহানগর এলাকার মহানগর দায়রা জজকে ছুটিকালীন সময়ে তার সুবিধা মতো প্রতি সপ্তাহে যেকোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।

এছাড়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজে অথবা তার নিয়ন্ত্রণাধীন এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ছুটিকালীন সময়ে তার বা তাদের সুবিধামতো প্রতি সপ্তাহের যে কোনো দুই দিন কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জরুরি জামিন শুনানির (কারাগারে থাকা হাজতে আসামির আবেদনসহ) নিমিত্ত সীমিত আকারে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’’

এই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘যে সকল ফৌজদারি মামলায় আসামীকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জামিন প্রদান করা হয়েছে বা যে সকল মামলায় উচ্চ আদালত হতে অধস্তন আদালতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আত্মসমর্পণের শর্তে জামিন প্রদান করা হয়েছে বা যে সকল মামলায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা/ স্থিতাবস্থার আদেশ প্রদান করা হয়েছে সে সকল মামলার আদেশের কার্যকারিতা আদালত খোলার তারিখ হতে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে। ছুটিকালীন সময় উক্ত মামলা সমূহের বিষয়ে কোনো আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করা হবে না।’

‘‘এছাড়া একটি মামলার জামিন শুনানিতে কেবলমাত্র একজন বিজ্ঞ আইনজীবী অংশগ্রহণ করবেন। আদালত প্রাঙ্গণ এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে অনুসরণ করা না হলে আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। আর আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাস কক্ষে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে স্ব স্ব আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কার্যকরী কমিটির সদস্যদের সাথে আলোচনাক্রমে জেলা ও দায়রা জজ/ মহানগর দায়রা জজ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবেন।’’
ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, ‘জামিন শুনানিকালে কারাগারে থাকা আসামিদের কারাগার হতে প্রিজনভ্যানে বা অন্য কোনোভাবে আদালত প্রাঙ্গণে হাজির না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’

ভিডিও কনফারেন্সিং
ভিডিও/অডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত আরেক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে “সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস” কমিটি এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশকে ভিডিও/অডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কারিগরি সুবিধা প্রদান এবং দেশের সকল জেলায় উপস্থিত হয়ে বিচারক আইনজীবী এবং আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারীদের হাতে-কলমে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলো।’
উল্লেখ্য, গত ২০ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফরমস–এর ৬৮তম সভার সিদ্ধান্তে কমিটি হাইকোর্ট বিভাগ এবং দেশের সকল অধস্তন আদালতে অডিও/ভিডিও কনফারেন্সিংএর মাধ্যমে সীমিত আকারে আদালত পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রধান বিচারপতির কাছে সুপারিশ পেশ করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *