গাজীপুরের সিভিল সার্জনকে দায় স্বীকার করে সরে যাওয়া উচিত!

Slider জাতীয় টপ নিউজ বাধ ভাঙ্গা মত সারাদেশ


গাজীপুর: মরণঘাতি করোনা ভাইরাস একটি বৈশ্বিক মহামারি। এটা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ কোন বিষয় বা আপদ নয়। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সাধ্যমত চেষ্টা করছে। সরকারের সকল ইউনিট জীবন বাজি রেখে কাজ করছে। এরই মধ্যে অনেকের জীবনও চলে গেছে। অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক ডাক্তার আক্রান্ত হয়েছেন। একজন মারাও গেছেন। করোনা যুদ্ধে প্রথম সাড়ির যোদ্ধা চিকিৎক সমাজ। এটা নিঃসন্দেহে সত্য এবং সরকার সহ সকল জনগন ইতোমধ্যে অবনত মস্তকে স্বীকারও করেছেন। আমরাও স্যালুট জানাই চিকৎসক সমাজকে।

চিকিৎসকেরা করোনার চিকিৎসা করছেন মনে প্রাণে। আবার কোন কোন চিকিৎসক বা চিকৎসালয় করোনার ভয়ে সটকেও পড়েছেন। ডাক্তার বা হাসপাতাল না পেয়ে অনেক মানুষ মারাও যাচ্ছেন। যার জন্য প্রধানমন্ত্রী কঠিন বাণীও দিয়েছেন। তারপর চিকিৎসকেরা অনেকটা সংশোধন হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এই জন্য অভিনন্দন।

সরকারের কাঠামোতে বাংলাদেশের সকর জেলায়ে একজন করে সিভিল সার্জন থাকবে। গাজীপুর জেলায়ও একজন সিভিল সার্জন রয়েছেন। গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান। তিনি একজন ভালো মানুষ। ভালো কাজ করেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সব ভালো মানুষ যে সব সময় ভালো কাজটিই করতে পারবেন, তা নয়। কাজ যে করেন তার কাজ সব সময় ভালো নাও হতে পারে। তাই মন্দও হয়। না হলে মন্দ শব্দটা মৌলিকত্ব হারাতো।

গাজীপুরের সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান সাহেব সকল ভালো কাজের মধ্যে চলমান করোনা যুদ্ধে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ বাংলাদেশে এমন কোন জেলা নেই যে জেলায় এত সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একই সঙ্গে প্রায় অর্ধশত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও করোনায় আক্রান্ত। গাজীপুরে আক্রান্ত হয়েছেন দুই জন সংবাদকর্মীও। বহু মানুষ কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত গাজীপুরে ২৬৯ জন করোনা রোগী ছিল। আজ ২২ এপ্রিল। কিন্তু গাজীপুরবাসীকে আমরা জানাতে পারিনি এখন কতজন রোগী আছে। এটা সাংবাদিকদের ব্যর্থতা নয়। দায়িত্বের দিক থেকে সিভিল সার্জন এই দায় নিবেন। কারণ চলমান মহামারীতে স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে রাষ্ট্রের সকল ইউং চলবে এটাই নিয়ম। সেই দিক থেকে গাজীপুরের সিভিল সার্জন আমাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

গাজীপুর জেলা বর্তমানে তৃতীয় সংক্রমন এলাকা। নতুনভাবে সংক্রমিত জেলার মধ্যে শীর্ষে থাকা গাজীপুর জেলা। এই জেলায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে হটস্পট হওয়ার কারণে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি দায় এড়াতে পারেন না। কারণ সিভিল সার্জন সাহেব গাজীপুরে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে জেলাকে লকডাউন করাতে ব্যর্থ হয়েছেন। লকডাউন করার ক্ষমতা তার না থাকলেও লকডাউন ব্যবস্থাটার উদ্যোগ তিনিই নিবেন, যা তিনি পারেননি। একই সঙ্গে করোনা রোগী শনাক্ত ও চিকিৎসার জন্য কোন কেন্দ্র তৈরীরও কোন উদ্যোগ বা ব্যবস্থা যথাসময়ে তিনি করতে পারেননি। এমনকি তার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদেরও প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিতে পারেনি। যদি পারতেন তবে এত সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হতেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর জেলায় যারা হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন, তাদের তেমন কোন খোঁজ খবরও তিনি নিতে পারছেন না। এমনকি দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গাজীপুর জেলার প্রথম সারির একজন সিনিয়র সাংবাদিক ও তার ছেলে করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে নিজ বাসায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। তার পরিবারের অন্যদের নমুনা সংগ্রহ করে নিতেও তার তিন দিন সময় লেগেছে। ওই সাংবাদিকের হৃদয়ভাঙ্গা একাধিক ফেসবুক ষ্ট্যাটাস সিভিল সার্জনের ব্যর্থতা প্রমানে যথেষ্ট। কারণ একজন সিনিয়র সাংবাদিক যদি স্বপরিবারে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এমন অবহেলার মধ্যে পড়েন, তবে সাধারণ মানুষ কেমন আছেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

সবেচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, বাংলাদেশের সকল জেলার সিভিল সার্জনের একটি ফেসবুক পেজ আছে। সেই পেজে তারা নিয়মিত তথ্য আপডেট দিচ্ছেন। কিন্তু গাজীপুরের সিভিল সার্জন সেটাও করতে পারেননি। কারণ গাজীপুর সিভিল সার্জনের পেজ কোনট এটা জানাও কষ্টকর। কারণ কোন আপডেট তথ্য নেই। সব সিভিল সার্জনের পেজে প্রোফাইল ছবি রাষ্ট্যীয় মনোগ্রাম। আর উনার পেজে তার অফিসের মনোগ্রাম। করোনার মহামারি যতদিন ধরে চলছে, তার একটি দিনও তিনি সময়মত তথ্য জাানতে পারেননি। বর্তমানে ১৯ তারিখের পর থেকে এই পর্যন্ত উনি গাজীপুরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও জাানতে অক্ষমতা প্রকাশ করছেন।

গাজীপুর সিভিল সার্জনের মনে রাখা উচিত ছিল, তিনি রাষ্ট্রের একজন কর্মচারী। জনগন রাষ্ট্রের মালিক। রাষ্ট্রের মালিকের সেবা করাই তার কাজ। কিন্তু আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, তিনি তার দায়িত্ব পালন যথাযথভাবে করতে পারছেন না। হটস্পট গাজীপুরে গত দুই দিনে কতজন আ্রকান্ত হলেন, তা জেনে জনগন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো ভালো প্রস্তুতি নিতে পারেন তাও তারা করতে পারছেন না। গতকাল রাতে একটি টিভি চ্যানেলে প্রথম আলো পত্রিকার একটি রিপোর্টকে তিনি অসত্য বলে প্রতিবাদ করে বলেছেন, প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা না বলেই সংবাদ করেছেন। তার বরাদ দিয়ে যে বক্তব্য সংবাদে লেখা হয়েছে, তা তিনি দেন নি। ভাগ্য ভাল, ওই সাংবাদিক টিভির অনুষ্ঠান দেখে টিভির অনুষ্ঠানে সিভিল সার্জনের অডিও পাঠিয়ে তার সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা কথা বলার কারণে নৈতিকস্খলনের অপরাধে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থাটা এমন যে, সরকার সব সিদ্ধান্ত সব সময় নিতে পারছে না। তাই নিজ উদ্যোগে সিভিল সার্জন সাহেব তার দায়িত্ব থেকে সরে যেতে পারতেন। যা তিনি করছেন না। এ ছাড়াও টিভিতে তিনি বলেছেন, আমিও হোম কোয়ারেন্টিনে আছি। সুতরাং তিনি সুস্থতাবোধ করছেন না। গণমাধ্যমে খবর এসেছে, সিভিল সার্জন সহ তার অফিসের ১৪ জন হোম কোয়ারেন্টিনে। তাই অসুস্থতার জন্যও তিনি ছুটিতে যেতে পারেন। শারিরিক অসুস্থতা মানুষকে অস্থিতিশীল করে ফেলতে পারে, যা তার স্বাভাবিক কাজ কর্মের অন্তরায় হতে পারে। তাই তার উচিত, নিজ থেকেই সরে পড়া।

এদিকে গাজীপুরের সকল জনপ্রতিনিধির পাশাপাশি জিএমপির কমিশনার, ডিসি, এসপি সহ অন্য কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ আসছে না। বরং তারা সুনাম অর্জন করেছেন ইতোমধ্যে, যা মিডিয়ার ব্যপক ভাবে প্রকাশিত ও প্রচারিত হচ্ছে। তারা সাধ্যমত মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়া সহ স্ব স্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন। পাশাপাশি সকল সংবাদ মাধ্যমের সহকর্মীরা জীবন বাজি রেখে দায়িত্ব পাণ করছেন। তাদেরকে সকল ধরণের সহযোগিতা করছেন সাধারণ মানুষ। তাই তাদের বিরুদ্ধে কারো কোন অভিযোগ নেই।

গাজীপুরের মানুষ আশা করে, মরণঘাতি করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য সৃষ্টিকর্তার রহমতের পরে সামাজিক সচেতনতা জরুরী। এই সচেতনতার পূর্ব শর্ত হল কি ধরণের সচেতনতা লাগবে, তার জন্য আপেডেট তথ্য জানতে হবে। তাই গাজীেপুরের লাখ লাখ মানুষের জীবনের কথা ভেবে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা আমাদের সম্মানিত সিভিল সার্জন সাহেবকে তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা বা অক্ষমতার দায় নিয়ে সরে পড়া উচিত বা সরিয়ে দেয়া প্রয়োজন। না হলে আপডেট তথ্যের সংকটে পড়ে সামাজিক সচেতনতার পরিধি বাড়াতে মানুষ ভুল করে বসতে পারে যা অনাকাংখিত ঘটনারও জন্ম দিতে পারে। তাই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলায় যার যার অবস্থান থেকে সাধ্যমত সচেতন হয়ে দায়িত্ব পালন করা উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *