সৌদি আরবে প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৫ বাংলাদেশি মারা গেছেন। দেশটিতে (১৫ এপ্রিল পর্যন্ত) মোট মৃতের সংখ্যা ৭৯। ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের করোনা সেলে থাকা তথ্য মতে, মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই প্রবাসী বাংলাদেশি করোনা আক্রান্ত রয়েছেন। আক্রান্তের বিচারে পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্র কাতার এগিয়ে থাকলেও বাংলাদেশিদের মৃত্যুহার সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি। এক সপ্তাহ আগে সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মূখপাত্রের এক ব্রিফিংয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ন্যাশনালিটির প্রসঙ্গে বলা হয়- করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত ব্যক্তিদের বেশিরভাই নন-সাউদি। তারা কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকলে মূলত অন্য দেশের নাগরিক। দআক্রান্তদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ সৌদি আরবের বাইরে নাগরিক এমনটা জানিয়ে ঢাকায় পাঠানো রিয়াদ মিশনের রিপোর্ট বলছে, সরকারী সূত্রে এক সপ্তাহ আগে ৮২ বাংলাদেশি আক্রান্ত বলে তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ কমিউনিটি সূত্রে য খবরা খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে এই সংখ্যা আরেকটু বেশি বলে ধারণা মিলেছে।
দেশটিতে আক্রান্ত বাংলাদেশিদের বেশিরভাগই ডরমিটরিতে থাকেন জানিয়ে ঢাকার করোনা সেলে কাজ করা এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, ডরমিটরিতে এক রুমে ৭-৮জন পর্যন্ত থাকেন। ফলে একজন আক্রান্ত হলে অন্যদেরও ঝুঁকি বাড়ে। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ কমিউনিটির বরাতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ মিশনের ঢাকায় পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে, আক্রান্তের যে সংখ্যা (৮২) পাওয়া গেছে তা প্রকৃত চিত্রের প্রতিফলন নয়। প্রকৃত অর্থে আক্রান্তে সংখ্যা আরেকটু বেশি হবে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে- আক্রান্তের বিষয়ে প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য মতে, ৭২ জন পুরুষ আর ১০ জন নারী। বেশিরভাগ অর্থাৎ ২৭ জনের বাস রিয়াদে। অন্যরা দাম্মাম, মদীনা, আল কাসিম, তাবুক জেদ্দাসহ বিভিন্ন এলাকায়। করোনা ভয়াবহতা রোধে সৌদি আরবের বাদশাহ দেশটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা করেছেন। পবিত্র দুই মসজিদ মক্কা ও মদীনাসহ সর্বত্র জমায়েত বন্ধ রয়েছে। বৈশ্বিক ওই সঙ্কটের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় সৌদি সরকার জেলে থাকা বিদেশি এবং ওমরাহ করতে যেতে আটকা বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের নিজ নিজ দেশে ফেরতে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ৩৬৬ বাংলাদেশিকে নিজ খরচে স্পেশাল বিমান দিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছে দিয়েছে সৌদি সরকার। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, করোনার প্রভাবে দেশটিতে থাকা প্রবাসীরা নানারকম ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অবৈধ এবং নানা অপরাধে আটক একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফিরতে বাধ্য হতে পারে।
কিছু বাংলাদেশ এরইমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন, তাদের ত্রাণ দিচ্ছে মিশন: এদিকে সৌদি আরবে এরইমধ্যে কিছু বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে অর্থ ও খাবারের কষ্টে পড়ে গেছেন। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে সেই সব অভিবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে খাদ্য বিতরণ শুরু হয়েছে। করোনার কারণে গত ২৩ মার্চ থেকে চলমান কারফিউতে বাংলাদেশীদের অনেকেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছেন জানিয়ে দূতাবাসের রিপোর্টে বলা হয়- বাংলাদেশ সরকারের সহায়তার অংশ হিসেবে দূতাবাস সঙ্কটে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফুড বাস্কেট বিতরণ কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ওই বিতরণ কার্যক্রমে কমিউনিটির সঙ্গে মিলে তৈরি করা তালিকা ধরে প্রত্যেককে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ২ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি ডাল, ১.৫ লিটার তেল, লবন ও সাবান দেয়া হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, করোনা পরিস্থিতিতে যেন কোন বাংলাদেশী অভিবাসী চাকুরিচ্যুত না হন এজন্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে দূতাবাস। তারপরও কোনো প্রবাসী বাংলাদেশি যদি খাদ্য সঙ্কটে পড়েন বা বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হন তাদের জরুরি ভিত্তিতে দূতাবাসের ইমেইল অথবা হোয়াটস আ্যপে তথ্য প্রদানের অনুরোধ জানানো হয়েছে। দূতাবাসের সরবরাহ করা তথ্য মতে, কেবল রিয়াদ নয়, জেদ্দাসহ সৌদি আরবের পশ্চিমাঞ্চলেও খাদ্যকষ্টে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ফয়সল আহমেদ এবং তাঁর সহকর্মীরা ওই অঞ্চলের সহায়তা কার্যক্রম দেখভাল করছেন।