বিশ্ব আজ মহামারিতে আক্রান্ত। পৃথিবীর সকল শক্তি অচল আজ। বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোও হতাশ। বিব্রত। চিন্তিত। যার ধর্মের দোহাই দেয়া ছাড়া আর কিছু সামনে নেই। করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক আবিস্কার তো দূরের কথা শনাক্ত করণ কিট এখনো ভালো ভাবে আবিস্কার হয়নি। ধরে নেয়া যায়, আমরা হেঁটে হেঁটেই মৃত্যুকোলে ঢলে পড়ছি। মৃত্যুর আগে বাঁচার চেষ্টা সবাই করে, তাই আমরাও করছি। আমরা এখন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছি। তবে এ্ই যুদ্ধ অসহায় হয়ে। ঘরে বসে যুদ্ধ করছি অদৃশ্য প্রতিপক্ষের সঙ্গে। এ যেন ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে বিজয়ী হলে বেঁচে যাওয়া আর পরাজিত হলে মৃত্যু।
বাস্তবতা বলছে, আমরা গরীব দেশ। অল্প জায়গায় অনেক বেশী আমরা। জায়গা কম মানুষ বেশী তাই আমাদের টাকাও নাই। আজকে এই ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ জায়গা হল ঘরবন্দি হয়ে থাকা। যত বেশী ঘরে থাকব তত ভালো থাকব। কিন্তু আমরা গরীব। আমাদের কাজ করে খেতে হয়।
দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ এখনও দরিদ্র। যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। এছাড়া মোট জনসংখ্যার ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ বা ৫ কোটি এক লাখ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। আর ৪৪ লাখ বা মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ধনী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার এই গবেষণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে। গবেষণায় বলা হয়েছে, গত ৩০ বছরে (১৯৮৪-২০১৪) দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২০১৪ সালে ধনী (উচ্চ শ্রেণি) জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৪ লাখ। ১৯৮৪ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ধনিক শ্রেণির বৃদ্ধি হয়েছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে ২০ শতাংশ ধনী যারা মোট জন সংখ্যার ২ দশমিক ৭ শতাংশ নিজেদের সুপার ধনী হিসাবে পরিচিত করেছে। যারা নিয়ন্ত্রণ করে মোট ধনীদের সম্পদের ৮০ শতাংশ সম্পদ।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের হিসাব মতে, দেশে এখন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি। এর মধ্যে ২ কোটি হতদরিদ্র। যা অনেক বড় সংখ্যা। এছাড়া যে ৪ কোটি দরিদ্র মানুষের কথা বলা হচ্ছে তাদের অবস্থাও ভালো না।’
আবুল বারাকাতের ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ‘গত ৩০ বছরে (১৯৮৪-২০১৪) দেশে মোট জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০ শতাংশ। কিন্তু ৩০ বছরে বিত্তহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৬ শতাংশ। আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির ধারক বর্তমানে ৫ কোটি ৭১ লাখ মানুষ। যার মধ্যে ২ কোটি ৭১ লাখ মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত, এক কোটি ৫৬ লাখ মানুষ মধ্য-মধ্যবিত্ত শ্রেণির এবং বাকি ৭৫ লাখ উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণির।
এই পরিসংখ্যানেই বুঝা যায়, আমরা ঘরে বসে কি খাব! আমরা বাঁচতে চাই। সেটা ঘরে হউক বা বাইরে হউক। কথাটা বলা এই সময়ে অযৌক্তিক হবে যে, ঘরে খাবার থাকলে কেউ বাইরে যেত না। সকলের ঘরে খাবার থাকলে যারা বাইরে যেতেন, তারা অবশ্যই ফূর্তি করতেই যেতেন, যা অপরাধের মধ্যে নিশ্চিত পড়ত। কিন্তু আজ আমরা ভাগ্যের কাছে অসহায়। কারণ আমাদের ঘরে খাবার নেই। সরকারের পক্ষে সকল নাগরিককে খাবার দেয়া সম্ভব নয়। এরপরও সরকার যা করছে, তা অতি লোভী মানুষের কবলে পড়ে হিতে বিপরীত হচ্ছে। সরকার ১০ টাকা কেজি চাল দিল আর সেই চাল চুরি হল। যদি তাই হয়, তাহলে সহজেই প্রশ্ন এসে যায়, সামান্য মূল্যের চাল চুরি হলে ফ্রি চাল কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ফ্রি চাল কতটুকু তৃনমূল্যে পৌঁছতে পারবে? এই প্রশ্নটি আজ অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সরকার যদি আরো দেয়, তবুও পাব না আমরা, এই ধারণা পোাক্ত হচ্ছে দিন দিন।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যায়. বিশ্বে ১ লাখ ২০ হাজারের উপরে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। আর আক্রান্ত প্রায় ২০ লাখ। প্রতিদিন মরছে মানুষ। বাংলাদেশে প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাই আমরা দিন দিন আশার অনিশ্চিয়তায় পড়ে যাচ্ছি।
একটু ভাবলেই দেখা যায়, করোনায় আক্রান্ত কোন রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তার মারা যাচ্ছেন। এই যুদ্ধে যারা মাঠে আছেন তারাও আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। হাসপাতাল, পুলিশ ষ্টেশন লকডাউন হচ্ছে। এই লকডাউনের ক্ষেত্র যদি বাড়তে থাকে তবে এমন সময় আসতেই পারে, যখন করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা, মৃত্যু ও জানাজার জন্য কোন লোক পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রযন্ত্র অচল হয়ে গেলে দেখা দিবে বিশৃঙ্খলা, দুর্ভিক্ষ। তখন আমরা কোথায় দাঁড়াব? তাই আজকের রাতগুলোতে আমরা আকাশ পানে চেয়ে ভাবছি ঈশিান কোনে কাল মেঘ জমছে। কোথায় যাচ্ছি আমরা!
লেখক
রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী