আইবিটি’র রিপোর্ট: আরো এক মোবাইল অপারেটর বাংলাদেশ ছাড়ছে, উদ্বেগ অর্থনীতিবিদদের

Slider জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি

বাংলাদেশ ছাড়ছে আরো একটি বৃহৎ টেলিফোন অপারেটর কোম্পানি। তারা হলো জাপানের সর্ববৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর এনটিটি ডোকোমো। রবি এজিয়েটায় রয়েছে তাদের শতকরা ৬.৩ ভাগ শেয়ার। সেই শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করছে ডোকোমো। এই শেয়ার বিক্রিতে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি। এই অনুমোদন পাওয়ার পর তারা ভারতের ভারতী এয়ারটেল লিমিটেডের কাছে ওই শেয়ার বিক্রি করবে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ও এই সুপারিশ পাস করেছে। অনলাইন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের রিপোর্টে এ খবর দেয়া হয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত রবি’তে ভারতীয় এয়ারটেলের রয়েছে শতকরা ৩১ ভাগ শেয়ার। অন্যদিকে এর শতকরা ৬৯ ভাগ নিয়ন্ত্রণ পাবে মালয়েশিয়ার এজিয়েটা গ্রুপ বেরহাড। ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়, ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাংলাদেশে রবির সক্রিয় গ্রাহক ছিলেন ৪ কোটি ৯৬ লাখ। মোবাইল ফোন যোগাযোগে শীর্ষ স্থানে রয়েছে গ্রামীণফোন। তাদের রয়েছে ৭ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি গ্রাহক। ফলে গ্রামীণ ফোনের পর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রবি। এর করপোরেট ও নিয়ন্ত্রক বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা শাহেদ আলম বলেছেন, আমরা মনে করি বৈশি^ক টেলিকম জায়ান্ট বলে পরিচিত ভারতী এয়ারটেলের ওই শেয়ার কিনে নেয়ার সিদ্ধান্ত হলো ভবিষ্যতে এই কোম্পানির প্রতি তাদের আস্থার প্রতিফলন।

কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এমন বিদেশী বড় টেলিকম অপারেটরদের মধ্যে সর্বশেষটি হলো ডোকোমো। এর আগে এমন কাজ করেছে ওরাসকম টেলিকম হোল্ডিং (বর্তমানে নেদারল্যান্ডের গ্লোবাল টেলিকম হোল্ডিং), সিঙ্গাপুর টেলিকমিউনিকেশন্স লিমিটেড এবং আবু ধাবির ধাবি গ্রুপ (ওয়ারিদ টেলিকম)। এখন থেকে ১২ বছর আগে রবি’র (এর আগে যা ছিল একটেল) শতকরা ৩০ ভাগ শেয়ার কিনে নেয় ডেকোমো। এর আর্থিক মূল্য ছিল ৩৫ কোটি ডলার। তবে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস লিখেছে, ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল, আন্তঃসংযোগ ও টেলিযোগাযোগ ট্রান্সমিশন নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণমুলক নীতির কারণে বাংলাদেশে ব্যবসাকালে হতাশ হয়েছে ডোকোমো। বেশির ভাগ মোবাইল অপারেটর তাদের ফাইবার অপটিক অন্য দেশে বিস্তার করতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এ কাজটি করাতে হয় অন্য কোম্পানিকে দিয়ে। এ ছাড়া বাংলাদেশে মোবাইল শিল্পে রয়েছে অতি উচ্চ হারে ট্যাক্স, যা শতকরা ৫৪ ভাগ। এর ফলে ডোকোমো তাদের শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার কলম্বোভিত্তিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক নীতি ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ের থিংকট্যাংক এলআইআরএনইএশিয়া। এর সিনিয়র পলিসি ফেলো আবু সাঈদ খান বলেন, যখন এনটিটি ডোকোমো রবি থেকে তাদের শেয়ার শতকরা ৩০ ভাগ থেকে কমিয়ে শতকরা ৮ ভাগে আনে ২০১৩ সালে, তখনই বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিল এটাকে একটি জেগে উঠার সংকেত হিসেবে নেয়া। তিনি আরো বলেন, এখন ডোকোমো চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে যাচ্ছে এমন একটি সময়ে যখন সারাবিশ্ব করোনা ভাইরাসের ফলে অর্থনৈতিক মন্দার ভয়ে আতঙ্কিত।

ডোকোমোর জন্য রবিতে তাদের এই বিনিয়োগ থেকে কোনো বড় অঙ্কের লভ্যাংশ আসতো না। গত এক বছরে রবির কোনো পরিচালনা পরিষদের বৈঠকে ছিল না ডোকোমো। এক বছরেরও বেশি আগে রবি থেকে তারা তাদের সব ম্যানেজারকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিবও আবু সাঈদ খান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ডোকোমো এভাবে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ফলে এদেশে অন্য বৈশি^ক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রবেশে অর্থাৎ বিনিয়োগে দ্বিধা বোধ করবেন। জাপানের এই টেলিযোগাযোগ জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানের বিদায়ের ফলে বাংলাদেশ যে ৫জি সেবার দিকে অগ্রসরে কথা ভাবছে তা বিলম্বিত হতে পারে। তবে এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন বিটিআরসির কমিশনার জহুরুল হক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি বিশাল মার্কেট। বিশে^র সব শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী বা প্রতিষ্ঠান এখানে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। বাংলাদেশের মতো এত ছোট দেশে এত বেশি সংখ্যক কাস্টমার আপনি কখনও খুঁজে পাবেন না।

ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের স্টক মার্কেটে তালিকাভুক্ত হতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে আবেদন করে রবি। ওই আবেদনে তারা বলে, পুঁজিবাজার থেকে তারা ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ করতে চায়। এই অর্থ রবি’র নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার কাজে ব্যবহার করার কথা বলা হয়। (উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের নভেম্বর থেকে ট্রেডিং শুরু করেছে গ্রামীণ ফোন)। ওদিকে রবি’র করপোরেট মূল প্রতিষ্ঠান এজিয়েটা চায়, বর্তমানে করপোরেট ট্যাক্স হার শতকরা ৪৫ ভাগ থেকে কমিয়ে কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ করা হোক।

রবি কর্মকর্তা শাহেদ আলম বলেন, আমরা করপোরেট ট্যাক্স শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগে কমিয়ে আনা হোক এমনটা চাইছি। তা নাহলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য কোনো লভ্যাংশ থাকে না। প্রথমত করপোরেট ট্যাক্স সুবিধা পেয়েছিল গ্রামীণ ফোন, যখন তারা প্রথমে তালিকাভুক্ত হয়েছিল। কিন্তু অল্প কয়েক বছর এই সুবিধার পর ঢাকায় সরকার তা বাতিল করেছে। সার্বিক রাজস্ব আয়ের ওপর বাংলাদেশ সরকার ন্যূনতম শতকরা ২ ভাগ আয়কর ধার্য্য করেছে। এই কর মওকুফ বা প্রত্যাহার চায় এজিয়েটা। এসব নিয়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান রবি কর্মকর্তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *