চার হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন প্রসূতি

Slider জাতীয় টপ নিউজ নারী ও শিশু


কুড়িগ্রাম:কুড়িগ্রামে ৪ হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সুজিনা বেগম (২৮) নামে এক গর্ভবতী নারী। স্বামী দরিদ্র ভ্যানচালক শরিফুল ইসলাম এ হাসপাতাল, ও হাসপাতাল ঘুরে আর দালালদের চক্করে ক্লিনিকে গিয়েও বাঁচাতে পারেননি তার স্ত্রীকে। স্বজনদের অভিযোগ চিকিৎসক ও নার্সদের গাফিলতির কারণেই সুজিনা বেগমের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত গৃহবধূ কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের মিয়াজিপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক শরিফুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের সংসারে ৮ বছরের একটি পূত্র সন্তান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১লা এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রসব বেদনা ওঠায় সুজিনাকে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে তার খালা শ্বাশুড়ি আমিনা বেগম। সেখানে আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতালের লোকজনের পরামর্শে তাকে স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিক আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালে ৭০০ টাকায় ভর্তি করা হয়। সিজার করা হবে বলে একগাদা ওষধও কিনতে বাধ্য করা হয় শরিফুলকে। সেখানে রাতযাপনের পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে সুজিনার অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিজার না করে ক্লিনিকের লোকজন ৮০০ টাকায় একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করে তড়িঘড়ি করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে রেফার করে।

এদিকে ক্রমেই সুজিনার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এই চরম অসহায় মূহুর্তে হাসপাতালের একটি দালাল চক্র শরিফুলকে ফুসলিয়ে সরকারি হাসপাতাল থেকে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি ক্লিনিক গ্রীণ লাইফ জেনারেল হাসপাতালে ২ হাজার ৩৫০ টাকায় দফারফা করে সুজিনাকে ভর্তি করা হয়। সাথে সিজারের কথা বলে একগাদা ওষধ কিনতে বাধ্য করা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় সুজিনার অবস্থার আরো অবনতি হলে তাকে পূণরায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি নারীটি মৃত্যুবরণ করেন।

রাতেই স্বজনরা মরদেহ বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন। নিহত সুজিনার স্বামী শরিফুল ইসলাম বলেন, ডাক্তারগো হাত পায়ে ধরলাম। এই হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ঘুরলাম। টাকাও খরচ করলাম। কিন্তু হেরা আমার স্ত্রীকে বাঁচাতে কেউ অপরারেশনডা করল না। সুজিনার খালা শাশুড়ি আমিনা বেগম জানান, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তাররা আমার ভাগ্নি বউকে একটা ইনজেকশন দিল, তারপর তারা জানায় সে মারা গেছে।

এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাইদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমনটা হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে আখতারুন্নাহার মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডা. এরশাদুল হক চাঁদ বলেন, রাতে রোগী ভর্তি হলে সকালের দিকে প্রেসার বেড়ে যাওয়ার সাথে খিঁচুনি শুরু হয়। এ অবস্থায় আমাদের এখানে সিজার করা সম্ভব ছিল না। পরে দুপুরে গাড়ি ভাড়া করে তাকে কুড়িগ্রামে প্রেরণ করেছি।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেদওয়ান ফেরদৌস সজিব জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়েকেউ অভিযোগও করেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *