ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা বাংলার মুখোমুখি বাধ ভাঙ্গা মত সম্পাদকীয়


রিপন আনসারী: গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরো নয় ব্যক্তির দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। মৃত্যু হয়েছে দুজনের। আজ শনিবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নয়জনসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ জনে। মৃতের সংখ্য বেড়ে হয়েছে ৮। নতুন আক্রান্তের আটজন ঢাকার। আর একজন ঢাকা বাইরের।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দেশের ১১ জেলায় সংক্রমণ ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় ৩৬ জন শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর ১৮ এলাকা রয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে ৯ জেলা করোনা আক্রান্ত বলে বলা হয়েছে। কিন্তু নারায়নগঞ্জ ও চট্রগ্রামের কথা উল্লেখ নেই। এ ছাড়া নতুনভাবে যুক্ত হল ঢাকার ৮ জন ও বাইরের একজন রোগী। মানে দাঁড়াল ঢাকায় এখন ৪৪জন ও বাইরে ২৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হল।

দেশের করোনা আক্রান্ত ১১টি জেলা হলো ঢাকা, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাইবান্ধা, কক্সবাজার, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, কুমিল্লা ও গাজীপুর। তবে সবশেষ নারায়ানগঞ্জ ও চট্রগ্রামে করোনার আক্রমন ঘটেছে।

এছাড়া রাজধানীর যে ১৮টি এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- মণিপুর‌ (পাঁচজন), বাসাবো (চারজন), পুরান ঢাকার বাংলাবাজার (তিনজন), সেনপাড়া, মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, হাজারীবাগ, মগবাজার, উত্তরা ও উত্তরখান (দুজন করে) এবং মিরপুর ১০ ও ১১ নম্বর, যাত্রাবাড়ী, আজিমপুর, কলাবাগান, রামপুরা, মহাখালী, বনানী-গুলশান, বারিধারা ও খিলক্ষেত (একজন করে)।

পরিস্থিতি বলছে, দিন যত যাচ্ছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস বিস্তার ঘটাচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় এর প্রকোপ বেশী এবং দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ১১ জেলায় ইতোমধ্যে রোগটি সক্রিয় হয়ে গেছে। এই অবস্থায় আগামীকাল থেকে পোষাক কারখানা খোলা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হবে। কারণ এমনিতেই মানুষ ঘরে বসে থেকে অস্থির হয়ে গেছে, এরপর যদি লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন বাইরে যাতায়াত করেন, তবে তা দেখে ঘরবন্দি মানুষ ঘরে থাকতে চাইবে না সহজে।

আমরা বাংলাদেশীরা দীর্ঘদিন ধরেই আইন ও নিয়ম কানুন ভাঙতে ভাঙতে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। তাই যথেষ্ট প্রচেষ্টা থাকার পরও আমরা অনেক সময় আইন কানুন ভঙ্গ করছি। সরকার ও শৃঙ্খলা বাহিনী আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পুলিশ যেখানে মানুষকে নির্যাতন করত বলে অভিযোগ ছিল, সে পুলিশ এখন নিজের রেশন দিয়ে মানুষকে ঘরে ঘরে খাাবর পৌঁছে দিচ্ছেন।

ওই দিন দেখলাম একটি অনলাইন পত্রিকায়, চট্রগ্রামে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা এক ব্যক্তি পুলিশকে ফোন করে বলেছেন, পাঁচপোড়ন বাসায় দিয়ে যেতে। আশ্চর্য্য আমাদের মানষিকতা। এই নষ্ট মানষিকতা দিয়ে মানবিকতা তৈরী কঠিন। কারণ যেখানে মানুষ ভাত ও ডাল খেয়ে বাঁচতে চাঁইছে, সেখানে উৎসবমুখর খাদ্য বানাতে মানুষ বিপদমোকাবেলা করার সৈনিকদের কাজে লাগাতে চায়। ছিঃ

পরিবর্তিত পরিস্থিতি বলছে, এমনিতেই মানুষ ঘরে থাকতে চাইছে না, আবার কাল থেকে পোষাক কারখানা খোলে দিলে লাখ লাখ মানুষের ঢলে ঘরে থাকা মানুষগুলোকে ঘরে রাখা কষ্টকর হবে। এই সময় পোষাক কারখানা খোলে দিলে রাস্তায় জনসমাগম বাড়বে। মনে রাখতে হবে, আমরা চা বাগান গুলো বন্ধ করতে পারিনি। ৩১ মার্চ সিলেটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এম কাজী এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন, চা বাগানগুলো খোলা রাখলে সমস্যা হবে না। চা শ্রমিকরা প্রাকৃতিক পরিবেশে কাজ করেন। তারা বিক্ষিপ্ত অবস্থায় চা পাতা সংগ্রহ করেন। তাদের মাস্কের ব্যবস্থা করে কাজে লাগানো যেতে পারে। তারা চা পাতা জমা দেওয়ার সময় যেন তিন ফুট দূরত্ব মেনে চলে।’

বাংলাদেশ চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী দেশের চায়ের ইতিহাস ১৬৬ বছরের। এখানে মোট চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি, এর মধ্যে সিলেট বিভাগেই রয়েছে ১৩৮টি বাগান। এ চা শিল্পে রয়েছেন প্রায় দুই লাখ শ্রমিক। সেখানে দুই লাখ শ্রমিক কাজ করছে।

তথ্য বলছে, চা শিল্পের দুই লাখ শ্রকিরে সাথে পোষাক কারখানার ৪০ লাখ শ্রমিকের অংক যোগ হলে বেসামাল হতে পারে জনস্রোত। এর সঙ্গে ভয়ঙ্কর বিপদের আশংকাংস্থল সাড়ে ১১লাখ রোহিঙ্গা। এই সময় আগামীকাল পোষাক কারখানা খোলার খবের এখন ঢাকামুখী লাখ লাখ শ্রমিক। ঢাকায় আসতেছে পায়ে হেঁটে কারণ গণপরিবহন বন্ধ। ফলে রাস্তায় এখন মানুষ আর মানুষ। এই মানুষের ভীড় কতটুকু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পারবে তা বলা কঠিন।

তাই পোষাক কারখানা না খোলে করোনা ভাইরাসের মরণকামড় থেকে বাঁচার জন্য সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) কার্যক্রম অপরিহার্য করতে লকডাউন তুলে দিয়ে শাটডাউন করা উচিত। আর যারা খেতে পারবে না, তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছানোর যথাসাধ্য ব্যবস্থা করা জরুরী। না হলে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা বলা কঠিন।

সাধারণ মানুষ বলছেন, বিশ্বের এই ক্রান্তিলগ্নে আক্রান্ত বাংলাদেশ ভবিষৎ যে কোন সিদ্ধান্তই গ্রহন করুক না কেন, তা অবশ্যই যথেষ্ট ভেবে চিন্তে নিতে হবে। কারণ পা পিছলে গেলে বিপদ কঠিন।

সুতরাং যারা ঘরে আছে তারা থাকুক। যাইরে বাইরে যাচ্ছে তারাও ঘরে ফিরুক। বিপদ কেটে গেলে সাবই এক সাথে চলেন বাইরে যাই। আমিন।

তাই তো কবি বলেছেন,

নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে।

ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে॥

বাদলের ধারা ঝরে ঝরো-ঝরো, আউষের ক্ষেত জলে ভরো-ভরো,

কালিমাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ্‌ চাহি রে॥

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *