প্রকৃত করোনা আক্রান্তের সংখ্যা জানা যাচ্ছে না

Slider জাতীয় সারাদেশ

বাংলাদেশের পরিস্থিতি সরকারি ভাষ্যমতে যে অবস্থায় আছে সেটার সাথে আমি একমত না। আমাদের প্রচুর লোক পরীক্ষার বাইরে রয়ে গেছে। এবং যারা বাইরে আছে তারা যদি সংক্রমিত হয়ে থাকে তাহলে তাদের সংস্পর্শে যারা আছে তাদের মধ্যে ছড়াচ্ছে। এবং তাদের সংস্পর্শে যারা আসছে তারাও ছড়াচ্ছে। সুতরাং আগামীতে বাংলাদেশে এটা একটি ভয়াবহ চিত্র দিতে পারে। এবং এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী ইতোমধ্যে করা হচ্ছে। বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে এমনটিই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মানবজমিনকে তিনি বলেন, আমরা জানি যে, ইতোমধ্যে বিদেশি যারা আছে তারা চলে যাচ্ছে।
এটাও একটি কারণ।

আমাদের প্রকৃত চিত্র যেটা অর্থাৎ সত্যিকারের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা এবং তাদের সংস্পর্শে যারা আছে তাদের সংখ্যা এটা প্রকৃতভাবে প্রকাশ না পাওয়াতে বিদেশিদের মাঝেও একটি সন্দেহ জেগেছে যে প্রকৃত চিত্র হয়তো ভিন্ন হতে পারে। সুতরাং আমাদেরকে যদি প্রকৃত চিত্র পেতে হয় তাহলে পরীক্ষা বাড়াতে হবে। এবং যাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে নিয়েছে তাদেরকে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে সকলের পরীক্ষা করা উচিত। পরীক্ষা করা গেলে তখন একটি প্রকৃত তথ্য উঠে আসবে যে আমাদের দেশে প্রকৃতপক্ষে কত সংখ্যক সংক্রমিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত না।

কারণ আমাদের যে পরিমাণ আইসিইউ ইউনিট এবং ভেন্টিলেটর দরকার সেই পরিমান নেই। এবং আমাদের যে কয়েকটি হাসপাতাল কোভিড -১৯ এর জন্য শুরু করেছে তারাও এখনও সুসজ্জিত হয় নি প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে। তদুপরি আমাদের প্রশিক্ষিত সেই পরিমাণ জনবলও নেই। সুতরাং আগামী দিনে হয়তো এটা একটি ঝুঁকি হয়ে দাড়াতে পারে বলে আমার আশংকা। লকডাউন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্রামেগঞ্জে এবং শহরতলীতে এটা সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। এবং এটাকে অবশ্যই কঠোরভাবে পালন করতে হবে। এছাড়া আমাদের কোভিড-১৯ বিশেষায়িত হাসপাতালের দরকার আছে। এবং সেটা সংখ্যায় অনেক বেশি প্রয়োজন। কারণ আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে বয়স্ক। তাদের কেউ আক্রান্ত হলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। অন্য কোথাও তাকে চিকিৎসা দেয়া যাবে না। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চিকিৎসা পাচ্ছে না অব্যস্থাপনার কারণে। আমরা খুব দেরিতে চিকিৎসকদের সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) দিতে পেরেছি।

এ কারণে ডাক্তারদের মধ্যে কিছুটা অনিহা ছিল। চিকিৎসা না পাওয়ার সেটা একটা কারণ। এখন যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে ঠান্ডা, সর্দি, কাশি এবং কোনোরকম শ্বাসকষ্ট নিয়ে যারা আসবে তাদের জন্য হাসপাতালে আলাদা কর্নার তৈরি করতে হবে। যে সকল ডাক্তার, নার্স তাদেরকে সেবা দিবেন তাদেরকে পোশাকের সুরক্ষা দিতে হবে। সেখান থেকে স্ক্রিনিং করে চিকিৎসকরা যে রোগীকে মনে করবেন বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতালে পাঠানো দরকার সেখানে পাঠাবেন। বাকীদেরকে পূর্বের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া যাবে।

এটা করা গেলে সমস্যার সমাধান হতে পারে, না হলে নয়। এই মুহুর্তে সরকারকে একটি কাজই করতে হবে সেটা হলো হোম কোয়ারেন্টিনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করতে হবে। এবং করোনা পরীক্ষার পরিধি বাড়াতে হবে। পরীক্ষাটা শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে যেন সহজলভ্য হয় এটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি অনেকগুলো বিশেষায়িত হাসপাতাল শুধু মাত্র কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করতে হবে যত তারাতাড়ি সম্ভব। বিশেষ করে বয়স্করা যাদের কোভিড হলেই তারা মৃত্যু ঝুঁকিতে চলে যাবেন। সুতরাং তাদেরকে বাঁচাতে এখনই আমাদের বিশেষ করে ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ ইউনিট সজ্জিত বিশেষায়িত কোভিড হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *