আলোচিত চরিত্র শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমনকে খুশি করতে সম্মেলন ছাড়াই নরসিংদী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৯ সালের ১৪ই জুলাই নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে ওই কমিটি ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই দিন রাতে কলেজ শাখার আগের কমিটি বিলুপ্ত না করেই জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ও সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমনের যৌথ স্বাক্ষরে রবিউল আলম একমিকে সভাপতি ও রাকিব হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্যের কলেজ কমিটি ঘোষণা দেন। ওই সময় স্বাক্ষর জাল দাবি করে জেলা সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু নরসিংদী সদর মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। কলেজ কমিটির সভাপতি রাকিব হাসান একমি গত ২২শে ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার হওয়া পাপিয়া-সুমনের সহযোগী সাব্বির খন্দকারের ছোট ভাই।
নরসিংদী জেলা ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, ২০১৭ সালের ৯ই অক্টোবর ইসহাক খলিল বাবুকে সভাপতি ও আহসানুল ইসলাম রিমনকে সাধারণ সম্পাদক করে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও জেলা ছাত্রলীগের সর্বশেষ সম্মেলনে আহসানুল ইসলাম রিমন সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় ছিলেন না। পদ পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সভাপতি ইসহাক খলিল বাবু ও সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন মিলে মনোহরদী, বেলাব ও মাধবদী থানা ছাত্রলীগের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে ২০১৮ সালের ১৬ই মার্চ নরসিংদী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনে।
ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তৎকালীন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু। সেখানে প্রথম অধিবেশনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন উপস্থিত থাকলেও দ্বিতীয় অধিবেশনে অদৃশ্য কারণে উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে নজরুল ইসলাম হীরু সম্মেলনের সভামঞ্চে টানা ১৫ মিনিট বক্তব্য দেন। সেখানে রিমনকে সন্ত্রাসী, অযোগ্য ও চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সম্মেলনে শিব্বির আহমেদ শিবলীকে সভাপতি ও রাব্বির হোসেন অতুলকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু ওই কমিটির অনুমোদনে রিমন সই না দেয়ায় তাকে বহিষ্কারাদেশের অনুরোধ জানিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. নজরুল ইসলাম হীরু এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়া ও নরসিংদীর পৌর মেয়র মো. কামরুজ্জামান। এই বিভাজনকে কেন্দ্র করে সভাপতি নজরুল ইসলাম হীরু তার এক সময়ের বিরাগভাজন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে কাছে টেনে নেন। এর পরই আহসানুল ইসলাম রিমন কোনো সম্মেলন ছাড়াই আগের কমিটি বিলুপ্ত না করেই নিজের ব্যক্তিগত আইডিতে রবিউল আলম একমিকে সভাপতি ও রাকিব হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা দেন। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন, কলেজ শাখার সভাপতি একমি ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান বর্তমানে আলোচিত পাপিয়া ও সুমনের ব্যক্তিগত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। দলীয় কর্মসূচির বাইরেও তারা পাপিয়ার জন্মদিন উৎসব, পাপিয়াকে নরসিংদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করানোসহ বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালনা করেন। যা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
নিজেকে নরসিংদী সরকারি কলেজের সভাপতি দাবি করে শিব্বির আহমেদ শিবলী বলেন, আমাদের কমিটি বিলুপ্ত না করেই সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন জালিয়াতির মাধ্যমে একমি ও রাকিবের কমিটি ফেসবুকে ঘোষণা করেছেন। রাকিব পাপিয়ার সহযোগী সাব্বিরের আপন ছোট ভাই। মূলত পাপিয়া-সুমনকে খুশি করতেই রিমন কলেজ শাখার বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ওই বিতর্কিত কমিটি পাপিয়ার ছোট ভাই মাদকাসক্ত সোহাগকেও একাদশ শ্রেণির ছাত্রলীগের একটি শাখার সভাপতি করেছে।
নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসিবুল হাসান মিন্টু বলেন, সাধারণ সম্পাদকের বিতর্কিত কর্মকা-ের অভিযোগ তুলে সম্প্রতি নরসিংদী জেলার ১০টি ইউনিট লিখিতভাবে অনাস্থা জানিয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসানুল ইসলাম রিমন বলেন, নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক অতুল ছাত্রদল কর্মী ছিলেন। তাই ওই কমিটির অনুমোদন আমি দেইনি। এ কারণেই হিরু ভাই আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে তার ভুল ধারণা ভাঙ্গে। বহিষ্কার হওয়ার আগে পাপিয়া আপা জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাই আমরা সবাই একসঙ্গে ছিলাম। কিন্তু তিনি যদি কোনো অপকর্ম করেন সেটার দায় শুধুই তার। আর আমরা এগুলো জানতাম না।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কমিটির ব্যাপারে রিমন বলেন, রাকিব এর আগে কলেজ শাখার ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিল, আর একমি দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত। এখানে কাউকে খুশি করার জন্য এই কমিটি করা হয়নি।