কেউ পারেনি, তিনি পারলেন

Slider জাতীয় টপ নিউজ ফুলজান বিবির বাংলা সম্পাদকীয়


এ কে এম রিপন আনসারী: আজ থেকে প্রায় দুই যুগ আগে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে জীবন শুরু। জীবেনর প্রথম থেকেই ছাত্রলীগ। মানে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে গোড়াপত্তন হয় জাহাঙ্গীর আলমের। গ্রামের সাদামাটা একটি পরিবারে জন্ম হওয়া জাহাঙ্গীর আলমের জীবন একটি ইতিহাস। জীবনের শুরু থেকেই কষ্ট আর রাজনৈতিক অবেহলায় বেড়ে উঠে জাহাঙ্গীর আলম।

রাজনীতিতে যখন একটি অবস্থান তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, ঠিক তখনি নেমে আসে একটি গভীর অন্ধকার। নিজ দল ক্ষমতায় থাকার পরও তিনি নিগৃৃীহিত হয়েছেন। তার দল বিরোধী দলে থাকার সময়ও তিনি নির্যাতিত হন। নিজ দলে যখন নির্যাতিত হলেন জাহাঙ্গীর আলম, তখন তার চোখে পানি ছাড়া আর কিছিই ছিল না। রাজপথে গাড়ির বহরে খোলা জীপে জাহাঙ্গীর আলম নিজ প্রতীক রেখে দল মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। সেই দিনের স্মৃতি আজো কাঁদায় তার ভক্ত ও অনুরাগীদের। নিজ বাসা থেকে গাজীপুর শহরে দলীয় কার্যালয়ে আসার সময় রাস্তার দুই পাশে ও গাড়ির সামনে তখন জাহাঙ্গীর ভক্তদের শুয়ে পড়ার দৃশ্য মানুষের মনে আজো ভেসে উঠে।

২০১৩ সালে দলীয় সমর্থন না পেয়ে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় গণভবনে। সেখান থেকে অনেক নাটক মঞ্চস্থ হওয়ার পর তাকে নিজ দলীয় প্রার্থীকে সমর্থনের শর্তে গাজীপুরে পাঠানো হয়। দলীয় প্রধানের নির্দেশে ও তার গর্ভধারীনি মায়ের কথামত জাহাঙ্গীর আলম একজন মেয়র প্রার্থী হিসেবেও দলীয় মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন করেন। চোখের জলে বুক ভাসিয়ে তিনি প্রার্থী হিসেবে নিজেকে অদৃশ্য করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষ সমর্থন করেন। কিন্তু নির্বাচনে তার দলীয় প্রার্থী পরাজিত হয়। এরপর জাহাঙ্গীরের দলীয় তেমন কোন পদ না থাকলেও তার ত্যাগেরও কোন মূল্যায়ন হয়নি।

২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী মেয়র হতে না পারার ব্যর্থতার দায় কিছুটা হলেও জাহাঙ্গীরের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। যদিও জাহাঙ্গীর তার দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন কাজ করেননি। তবুও জাহাঙ্গীর আলম যেন ভবিষৎ মেয়র হতে না পারেন, সেজন্য তাকে দলীয় কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন পর্যন্ত করা হয়নি। ফলে দলীয়ভাবে কোনঠাসা জাহাঙ্গীর আলম নীরবে নিভৃতে নিজের সাধ্যমত নগরবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা শুরু করেন। গাজীপুর মহানগরের সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। নিজে গাজীপুর মহানগরের উন্নয়নে একটি ছঁক একে সেই পরিকল্পনামত কাজ করতে থাকেন। এই অবস্থায় একদিন তার সময় চলে আসে। আওয়ামীলীগের প্রধান তাকে ডেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন। সেই থেকে আর তার পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই পদ পাওয়ার পর দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আবার জাহাঙ্গীর আলমকে ডাকাডাকি শুরু হয়। অবশ্য এই ডাকাডাকি দলীয় পদ থাকার কারণেই বলা চলে। কারণ যখন তার পদ ছিল না তখন কেউ ডাকেনি তাকে।

২০১৮ সালে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা দেয়া হয় জাহাঙ্গীর আলমকে। তিনি মেয়র নির্বাচিহ হন। মাঠে কথা চাওড় আছে যে, তার বিরোধী পক্ষের অনেক নেতাই গোপনে গোপনে জাহাঙ্গীর আলমের হয়ে কাজ করেছেন। সব মিলিয়ে মোটামোটি সকল শ্রেনী পেশার মানুষের সঙ্গেই সখ্যতা গড়ে তোলেন জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলম যা করছেন সবই গাজীপুরের জন্য নতুন ইতিহাস। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে গাজীপুর মহানগরের মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়ে মেয়র জাহাঙ্গীর সৃষ্টি করেন গাজীপুরের ইতিহাসের নতুন একইট অধ্যায়। কারণ স্বাধীনতার পর থেকে কেউ গাজীপুর মুক্ত দিবস ভাল করে পালন করে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘটা করে এত বড় ধরণের সংবর্ধনা দেননি। আরেকটি ইতিহাস হল, জাহাঙ্গীর আলম মহানগরের সকল মসজিদের ইমাম ও খতিবদের সম্মানী ভাতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা। জাহাঙ্গীর আলমের সকল কাজের ইতিহাসের মধ্যে এই দুটি অন্যতম।

সর্বশেষ ২৪ জানুয়ারী গাজীপুর রাজবাড়ী মাঠে তিনি সৃষ্টি করলেন গাজীপুরে নতুন একটি ব্যাতিক্রমধর্মী ইতিহাস। জাহাঙ্গীর আলম শিক্ষা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে প্রায় ৫ হাজার উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করেন তিনি। এসময় তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে বিদেশে লেখাপড়া করাতেও তিনি সহযোগিতা করবেন। তার ফাউন্ডেশনের একশ কোটি টাকার শিক্ষা প্রকল্প থেকে ২৫ হাাজার শিক্ষার্থীকে তিনি বৃত্তি দেবেন বলে ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে তার ব্যক্তিগত আয়ের ৮০ ভাগ তিনি শিক্ষা প্রকল্পে ব্যায় করবেন বলেও জানান। অবশ্য এই অনুষ্ঠানের জন্য নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন যাপনে একটু অসুবিধা হয়েছে। এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজনে ভুল-ত্রুটিও থাকতে পারে। সব মিলিয়ে ভাল একটি উদ্যোগকে দাঁড়াতে দিতে একটু কষ্ট, ত্যাগ হিসেবে মেনে নেয়াই শ্রেয় হবে। কারণ আমরা পারি না, তিনি পারেন, এটাই মনে করে সম্মান করা উচিত।

বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন ব্যাক্তি উদ্যোগে শিক্ষাখাতে এ ধরণের বড় উদ্যোগ বিরল না বলে নেই বললেই চলে। কারণ আমাদের জানা নেই যে, কোন ব্যাক্তি এ রকম কোন মহতী উদ্যোগ কোন সময় নিয়েছিলেন কি না। নিঃসন্দেহে এটি একটি ব্যাতিক্রমধর্মী উদ্যোগ, যা গাজীপুরের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের গতকালের এই উদ্যোগের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা সমালোচনা থাকতে পারে। কিন্তু উদ্যোগটি যে মহতী, তাতে কোন সন্দেহ নেই। কোন কাজের আলোচনা সমালোচনা হবেই, কিন্তু কাজটি কতটুকু জনস্বার্থে, সেটার উপর নির্ভর করে কাজের সফলতা।


গাজীপুর মহানগরের সাধারণ মানুষ মনে করেন, জাহাঙ্গীর আলম একটি ইতিহাস হয়ে গেলেন। গাজীপুর জেলার ইতিহাসে শুধু নয়, বাংলাদেশের জন্যও একটি ইতিহাস। যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন জাহাঙ্গীর আলমের এই মহতী উদ্যোগ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে থাকবে। কারণ যে সমাজে কোন শিক্ষার্থী টাকার জন্য পরীক্ষাা দিতে পারে না, কাপড় কিনতে পারে না, খাতা কলম কিনতে পারে না, সেসমাজে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কোন মানুষের সহযোগিতায় ওই শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে মানুষ হবে সেটা কল্পনাও করা যায় না। সেই কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেয়ার চেষ্টা করার জন্য মেয়র জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুরবাসীর কাছে মহত ব্যাক্তি হয়ে যেমন থাকবেন তেমনি বাংলাদেশের জন্যও একটি উদারহণ হয়ে রইলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *