আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় ২২ মাস পর মামলা

Slider জাতীয় বিচিত্র


নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ওপর হামলার ঘটনায় ২২ মাস পর আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় ১ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। বুধবার নারায়ণঞ্জ আদালতে এ মামলা হয়।

মেয়র আইভীর রীটের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশে এ মামলা হয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জে হকার উচ্ছেদ নিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনার প্রায় ২১ মাস পরে সরকারের ৩ মন্ত্রণালয়সহ ৭ জনকে বিবাদী করে হাইকোর্টে রীট দায়ের করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী।

গত ১১ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে বিবাদী করা হয় মেয়র আইভীর দায়ের করা ঐ রীটে। বিচারপতি এম এনায়তুর রহমান ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ ঐ রীট আবেদেনের প্রেক্ষিতে সকল বিবাদীদের কারণ দর্শানোর (শো-কজ)পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর অভিযোগ আমলে নিতে নারায়ণগঞ্জ প্রধান বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা খাতুনের আদালতে একটি মামলার আবেদন করলে আদালত সেটি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৯ জন নেতার নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ১ হাজার জনকে। তবে হকারদের সাথে সংর্ষের ঘটনা হলেও মামলায় কোন হকার বা হকার নেতাদের নাম নেই। ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে স্থানীয় এমপি শামীম ওসমান নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

মেয়র আইভী নিজে হাইকোর্টে রীট করলেও নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলাটির বাদী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আইন বিষয়ক কর্মকর্তা জিএম এ সাত্তার।

মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, ঘটনাস্থলে থাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ।

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় ২২ মাস ১৭দিন পরে মামলা দায়ের করার বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, মেয়র আইভী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও দলীয় প্রার্থী হয়ে তিনি হাইকোর্টে সরকারকে বিবাদী করেছেন আর নিম্ন আদালতে আওয়ামী লীগের নেতাদের আসামি করলেন।

২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বিকালে মেয়র আইভী নিজেই তার সমর্থকদের নিয়ে ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ শুরু করলে হকারদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐ সময় যুবলীগ নেতা ব্যবসায়ী নিয়াজুল ইসলামকে একা পেয়ে আইভী সমর্থকরা বেদম মারধর করে তার লাইসেন্সকৃত অস্ত্র ছিনিয়ে নিলে তাকে উদ্ধার করতে আসা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেনকেও মারধর করে আইভীপন্থীরা। এ খবর ছড়িয়ে পরলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে এলে ত্রিমুখি সংঘর্ষে পুরো বঙ্গবন্ধু সড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে পরিস্থিত শান্ত করতে কেন্দ্রীয় নির্দেশে এমপি শামীম ওসমান নিজেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বলে জানা যায়।

নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে সদর মডেল থানাকে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মোহাম্মদ বাদল বলেন, ২২ মাস পরে মামলা দায়েরের ঘটনা এবং সেই মামলায় আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের আসামী করাটাই প্রমাণ করে মেয়র আইভী আগেও দলের ছিলেন না, এখনও নেই। তার কাঁধে এখনও বিএনপি-জামায়াতের ভূত বসে আছে। তার এসব কর্মকাণ্ড দলের জন্য সুখকর কোন বার্তা বয়ে আনবে না। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা বলেন, গায়ে পরে ঝগড়া লাগাতেই এই মামলা। যাদের আসামী করা হয়েছে তারা সকলেই দলের পরীক্ষিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *