ক্লাসে ফিরতে চান ঢাবি শিক্ষক

Slider জাতীয় বিচিত্র সারাদেশ


ঢাকা: ২০১৭ সালের ১২ই জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ক্লাস ও ক্লাসের বাইরে শিক্ষকসুলভ আচরণ করেন না অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে চিঠি দেন বিভাগটির সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষক। এরই প্রেক্ষিতে ভিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। এরপর নিজের আত্মপক্ষ সমর্থন করে গত আড়াই বছর যাবৎ ক্লাসে ফেরার চেষ্টা করেও পারেননি তিনি। দারস্থ হয়েছিলেন উচ্চ আদালতেরও। সর্বশেষ গত তিনদিন ধরে নিজের বিরুদ্ধে নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন ড. রুশাদ ফরিদী। ‘আমি শিক্ষক, আমাকে ক্লাসে ফিরে যেতে দিন’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে গতকালও বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি মানবজমিনকে বলেন, আমি গত তিনদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।

কিন্তু কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এখনো কোন সমাধান পাইনি। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে আমাকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। জানা গেছে, এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছেন রুশাদ ফরিদীর আইনজীবী।

আদালত তার বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা অবৈধ উল্লেখ করে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। তবে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে আসেনি। এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো শিক্ষককে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের ওপর বাধ্যতামূলক ছুটিতে রাখার বিধান নেই বলেও জানা গেছে। কিন্তু রুশাদ ফরিদীর ক্ষেত্রে সেটি আড়াই বছর পার হয়েছে। তারপরও কোনো সমাধান হয়নি। রুশাদ ফরিদীর দাবি, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত ছাড়াই শাস্তি দেয়া হয়েছে। বিভাগের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় প্রতিহিংসামূলকভাবে অভিযোগগুলো আনা হয় বলে জানান তিনি। এসব অনিয়মের বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে সাতটি চিঠি দিয়েছিলেন বলেও জানান এই শিক্ষক। সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত জানানোর পর তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি (শিক্ষা), প্রো-ভিসি (প্রশাসন), রেজিস্ট্রার, বিভাগের চেয়ারম্যান বরাবর উকিল নোটিশ পাঠান রুশাদ ফরিদী। তাতে সাড়া না পেয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করেন তিনি। দীর্ঘ শুনানির পর চলতি বছরের ২৫শে আগস্ট বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের হাইকোর্টের বেঞ্চ ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের দেয়া আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তাকে কাজে যোগদানেরও নির্দেশ দেন। তবে তিন মাস পার হলেও রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশ হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান মানবজমিনকে বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। আদালতের রায়ের কপি এখনো আমাদের কাছে আসেনি। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অনুযায়ী পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। এদিকে, গতকাল অর্থনীতি বিভাগের একাডেমিক বৈঠকে রুশাদ ফরিদীকে নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো পরবর্তীতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করে অর্থনীতি বিভাগ।

এতে বলা হয়, ড. রুশাদ ফরিদীকে বিভাগে পুনর্বহালের একমাত্র এখতিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। অর্থনীতি বিভাগের নয়। অর্থনীতি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিদের্শনা মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এতে আরো বলা হয়, ২০১২ সালে ড. রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে বিভাগের এক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ আসে। এরপর তাকে ওই বছরের ৪ঠা আগস্ট বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তিন বছর পর ২০১৫ সালের ২০শে ডিসেম্বর তাকে শর্তসাপেক্ষে বিভাগে পুনর্বহাল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৩০শে ডিসেম্বর সকল শর্ত মেনে তিনি বিভাগে যোগ দেন । এরপর নিজ বিভাগের সহকর্মীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও বিভিন্ন ধরণের হুমকি ও অশোভন আচরণের কারণে ফের ভিসি বরাবর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে ২০১৭ সালে পুনরায় চিঠি দেয় বিভাগ। এরপর সিন্ডিকেট ফের ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। এদিকে গতকাল রুশাদ ফরিদীর বিরুদ্ধে নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শাস্তির প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। সংগঠনটি অবিলম্বে রুশাদ ফরিদীকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *