প্রিয় নূহাশ পল্লীতেই হবে হুমায়ুন জাদুঘর ৭১ তম জন্মদিনে হুমায়ুন পত্নী শাওন

Slider বাংলার সুখবর সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

রাতুল মন্ডল নূহাশ পল্লী থেকে ফিরে: বাংলা সাহিত্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পঠিত নন্দিত লেখক, চলচ্চিত্রকার এবং নাট্যকার-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ। এ কিংবদন্তির ৭১তম জন্মদিন আজ। জন্মদিন উপলক্ষে বুধবার সকাল দশটায় গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নূহাশ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদ এর পত্নী মেহের আফরোজ শাওন, ও তার দুই ছেলে নিশাত ও নিনিতকে সাথে নিয়ে কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ এর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

কবর জিয়ারত ও মোনাজত শেষে হুমায়ুন পত্নী সংবাদিকদের বলেন, হুমায়ুন আহমেদের স্বপ্ন ছিলো একটি ক্যানসার হাসপাতালে নির্মাণের, আমি চেষ্টা করছি কিন্তু আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ একার পক্ষে এত বড় কাজ করতে পারছি না।

তিনি আরোও জানান, হুমায়ুন আহমেদের গ্রামের বাড়ী নেত্রকোনা জেলার কতুবপুর গ্রামে শহিদ স্মৃতি বিদ্যাপিট নিজের প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সরকার এমপিও ভুক্ত করেন। আমি আশা করি খুব দ্রুত এই হুমায়ুন পল্লীতে হুমায়ুন স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করবো এই জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

এরপর নিশাত নিনিতসহ হুমায়ুন বক্তদের সাথে নিয়ে কেক কাটেন।

১৯৪৮ সালের এই দিনে নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তাকে দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে থাকতে হয়েছে। এ কারণে তাকে স্কুল ও কলেজও পাল্টাতে হয়েছে ঘন ঘন। তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর পলিমার কেমিস্ট্রির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগে। দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত থাকার পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোমাত্রায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।

তার সাহিত্যিক জীবনে অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাস রয়েছে। বাংলাদেশের পাঠকদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে তার যে অবদান তা সাহিত্যপ্রেমী মাত্রই বুঝতে পারেন। তার রচিত প্রতিটি বই পাঠক গ্রহণ করেছেন সাদরে। বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনে অন্যতম শক্তিশালী একটি জায়গা দখল করে আছেন বাংলা সাহিত্যের এ মহানায়ক। তার রচিত উপন্যাস ও গল্প নিয়ে টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। বিশেষ করে হিমু, মিসির আলী আর বাকের ভাইয়ের মতো চরিত্র তৈরিতে তিনি যে লেখনীর দক্ষতা দেখিয়েছেন তাতে তাকে ও তার সৃষ্টিকে আজীবন মনে রাখবেন পাঠক। ‘হিমু’ সিরিজের বই, ‘মিসির আলী’ সিরিজের বইসহ ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘অপেক্ষা’, ‘রুপার পালঙ্ক’, ‘লীলাবতী’, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা ‘জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প’সহ অসংখ্য সুপাঠ্য বই তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য। তার বেশ বড় মাপের অবদান রয়েছে বাংলাদেশের নাট্যজগতে। তারই রচিত অনেক উপন্যাস ও গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে নাটক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তার চিত্রনাট্যেই তৈরি হয়েছে। এসব নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’ প্রভৃতি। যেগুলোর কথা দর্শক চিরদিন মনে রাখবেন। তার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আমার আছে জল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘দূরত্ব’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘প্রিয়তমেষু’ প্রমুখ। তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। হুমায়ূন আহমেদ তার অনবদ্য রচনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনার জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার অন্ত্রে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই নিউ ইয়র্কে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *