রাঙ্গার ঔদ্ধত্য

Slider জাতীয় বাধ ভাঙ্গা মত


১০ই নভেম্বর ১৯৮৭। নূর হোসেনের উদোম শরীর। চোখে-মুখে প্রতিজ্ঞার ছাপ। বুকে-পিঠে লেখা অমর স্লোগান-গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক। কবি শামসুর রাহমানের বর্ণনায়, উদোম শরীরে নেমে আসে রাজপথে, বুকে-পিঠে, রৌদ্রের অক্ষরে লেখা অনন্য শ্লোগান, বীরের মুদ্রায় হাঁটে মিছিলের পুরোভাগে এবং হঠাৎ শহরে টহলদার ঝাঁক ঝাঁক বন্দুকের সীসা, নূর হোসেনের বুক নয়, যেন বাংলাদেশের হৃদয় ফুটো করে দেয়; বাংলাদেশ বনপোড়া হরিণীর মতো আর্তনাদ করে, তার বুক থেকে অবিরল রক্ত ঝরতে থাকে, ঝরতে থাকে।

নূর হোসেনের বুক ঝাঁজরা করে দেয় স্বৈরশাসক এরশাদের পেটোয়া বাহিনী। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন নেয় নতুন মোড়। এরশাদের পতনের এতদিন পর সেই স্বৈরশাসকেরই এক সঙ্গী আবার যেন বাংলাদেশের হৃদয় ফুটো করে দিলেন। তিনি মশিউর রহমান রাঙ্গা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব। তার একটি বক্তব্যে হতভম্ব সবাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য মশিউর রহমান রাঙ্গা দাবি করেছেন, নূর হোসেন ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিলেন।

এই বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও সমালোচনা করেছেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। জাতীয় পার্টির এই নেতার ঔদ্ধ্যতে চারদিকে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কী তার ক্ষমতার উৎস। একজন বীর শহীদকে নিয়ে কীভাবে তিনি এ ধরনের কুটূক্তি করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করছেন। দাবি ওঠেছে, তাকে বিচারের মুখোমুখি করার। রাজপথে নেমে এসেছেন নূর হোসেনের পরিবারও। শহীদ নূর হোসেনের বৃদ্ধা মা মশিউর রহমান রাঙ্গার বিচারের ভার জনগনের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। রাঙ্গাকে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন নূর হোসেনের পরিবার। একই আহ্বান জানিয়েছে ডাকসুও।

রাঙ্গা যা বলেছেন
রোববার জাতীয় পার্টির একটি আলোচনা সভায় মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কাকে হত্যা করেছে? নূর হোসেনকে। নূর হোসেন কে? একটা এডিক্টেট ছেলে। একটা ইয়াবাখোর একটা ফেনসিডিল খোর। তাকে নিয়ে গণতান্ত্রিক দুই দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আজকে নাচানাচি, পত্র পত্রিকায় দেখবেন কালকে নূর হোসেন দিবস। এই নূর হোসেন চত্তরও এরশাদের করা। এরশাদ করে দিয়েছিলো।

যারা অতি ফেন্সিডিল খোর, অতি ইয়াবা খোর ব্যাবসা করে ক্যাসিনো, তাদের জন্যই নূর হোসেন গণতন্ত্রের সন্তান। এরশাদ ছিলেন গণতন্ত্রের ধারক, বাহক এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাকারী। এটা বিশ্বাস না করলে আমি বলি যখন ১৯৮২ সালে উনি ক্ষমতা নিয়েছিলেন, এর আগে ছাত্তার সাহেব ক্ষমতায় ছিলেন। ছাত্তার সাহেব নিজেই টেলিভিশনে বলেছিলেন আমার মন্ত্রীদের বাসায় চোর ডাকাত পাওয়া যায়, আমি চালাতে পারছি না তাই এরশাদকে আমি ক্ষমতা অর্পন করলাম। ক্ষমতায় আসার পরে সেখানে তাকে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছিলো। গণতন্ত্রের মানসকণ্যা বলি আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে তিনিও বলেছেন আমরা অসন্তুষ্ট নই। এরশাদের ক্ষমতায় আমরা অসন্তুষ্ট নই। এটাকে আরো গণতান্ত্রিক করার জন্য উনি এটাকে নিয়ে আসলেন পার্লামেন্টে। সপ্তম সংশোধনীতে ২২৩ জন সংসদ সদস্য এরশাদের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের আট দলীয় নেতারা সংসদে আসেন নাই।

রাঙ্গা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যেদিন বাকশাল ঘোষণা করেন সেদিনই বাংলাদেশের সমস্ত গণতন্ত্র সমস্ত পত্রিকা কয়েকটি বাদে বন্ধ করে দিয়েছিলেন সব কিছু তিনি স্থগিত করে দিয়েছিলেন, তাহলে সেটা কী গণতন্ত্র ছিল। জাতির পিতা সম্পর্কে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না। উনি ১৪ বছর জেলে ছিলেন। তিনি গণতন্ত্রের জন্য অনেক কিছুই করেছেন সর্বশেষ উনিও গণতন্ত্রে লাস্ট পেরেকটা কিন্তু উনিই মেরে দিয়ে গিয়েছিলেন।

এমন কোন দিন বাদ নাই বাংলাদেশে মানুষ মরছে না। এমন কোন দিন বাদ আছে? কোথাও হত্যা এইটা ওইটা আছেই তারপরেও আবার গুম খুনের মাধ্যমে মানুষ মারা যাচ্ছে। কতো জনের আহাজারি আমরা শুনেছি। এটা কি গণতন্ত্রের কোন নিয়ম হলো। আমরা বিএনপি খালেদা জিয়ার সময় কী দেখেছি ক্লীন হার্ট। হার্ট পরিস্কার করতে গিয়ে প্রতিদিন ৫ জন ৪ জন ৩ জন করে মানুষ মারা হতো।

বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ যে কর্মী সেও জাতীয় পার্টির থেকে এত্তোবড় ক্ষমতা। তারা বলে, বেশি কথা বললে জেলে নিয়ে যাবো কিন্তু। আওয়ামী লীগের ওর এখনো দুধের দাঁতই পড়ে নাই ও আমার প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিকে বলে, এ ব্যাটা বেশি বাড়াবাড়ি করলে জেলে পাঠায় দেবো। এটা গণতন্ত্র হলো? স্বৈরাচারের আরেক রূপ হলো এই ধরণের গণতন্ত্র। স্বৈরাচার এরশাদ না, বেগম খালেদা জিয়া স্বৈরাচার, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার। আমরা না কোন ভাবেই স্বৈারাচার না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *