বলা, না বলা

সাহিত্য ও সাংস্কৃতি

images

আনজুম সানি

আবছা আলো। কুয়াশা চিরে রোদ আসতে শুরু করেছে। ঘুম ভেঙে গেছে আরিফের। এ সময়টাতে সে রাস্তায় হাটঁতে বেরোয়। আজও হল। গায়ে একটা চাদর জড়ানো। এটা তার বাবার। বাড়ি থেকে প্রথম যখন ঢাকা আসে তখন নিজে গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন বাবা।

আজ শীত একটু বেশি। থেকে থেকে বাতাসও বইছে। যেন শীত আরো তীব্র করতেই আসছে এ হাওয়া। আরিফ হাটঁছে ডেইরি গেটের পথ ধরে। কুয়াশা কেঁটে গেছে প্রায়। এখনের রোদটা বড় আরামের, মিঠে রোদ। শহীদ মিনারে এসে থামল আরিফ, ভাবল একটু রোদ পোহাই। হঠাৎ চোখ পড়ল দূরে। কেউ হয়ত এদিকেই এগুচ্ছে। ক্রমশ স্পষ্ট হল, কণিকা। কণিকা আসছে। হাতে ক্লিপবোর্ড, কার্টিজ, ঝোলাব্যাগ। ভাল ছবি আকেঁ।প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয় আরিফের সাথে। কথা হয় না কখনও। আজ শহীদ মিনার দেখা হল তো কাল ট্রান্সপোর্ট, কাল ট্রান্সপোর্ট তো পরশু মুন্নী চত্ত্বর। দেখা হবেই। যদিও কাকতালীয়, এটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এর ব্যত্যয় হোক আরিফ তা চায় না।
আরিফ ক্যাম্পাসে এসেছে তিন বছর হল। কণিকা এসেছে আরিফের পরের বছর। একদিন আরিফ ঝালমুড়ি খাইয়েছিল দশ-বারো জনকে। কণিকাও ছিল সেদিন। তখন সবে তার ক্যাম্পাস জীবন শুরু হয়েছে। সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে মুড়ি খাচ্ছিল। এক ফাঁকে আরিফ এসে দাড়াল কণিকার পাশে। কানের কাছে খুব সাবধানে বলল, “আপনি কি আমার আপনি হবেন?”
কণিকা আর খেতে পারে নি। চুপচাপ দাড়িয়ে ছিল শুধু। ওদের আর কোনদিন কথা হয় নি। কিন্তু না বলা রয়ে গেছে অনেক কথা।
আজ দু’জনেই এক বাসে ঢাকা যাচ্ছে। আরিফ সামনের সিটে, কণিকা পেছনের। এটাও কাকতালীয়। কণিকা আরিফের বসে থাকার একটা স্ক্যাচ আকঁল খাতায়।
জানালা দিয়ে বাতাস আসছে, এই শীতে বাতাস সহনীয় নয়। কণিকা বন্ধ করে দিল জানালাটা। ভাবতে লাগল আনমনে। কানে তার একটা কথাই বাজছে – “আপনি কি আমার আপনি হবেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *