মানিকগঞ্জে মধু সংগ্রহের ধুম

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

Honey-1419727145মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহের ধুম পড়েছে। এ বছর প্রায় কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা হবে বলে মৌচাষিরা জানিয়েছেন। সরিষা ফুল থেকে সংগৃহীত এসব মধু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মাঠে এখন হলুদের সমারোহ। শীতের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে হলুদে আর মৌচাষিরা ব্যস্ত মধু সংগ্রহে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে মৌচাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে উৎপাদনে সম্পৃক্ত থেকে জাতীয় উন্নয়নে তারা বিশেষ ভূমিকা রাখছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর ৪১ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছর সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, ঈশ্বরদী, নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও খুলনা থেকে প্রায় ৩০-৪০টি খামারি এসেছেন মধু সংগ্রহের কাজে। এসব খামারি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহের কাজ করছেন।

সাতক্ষীরা থেকে আসা মৌচাষি সাইফুল ইসলাম জানান, শীতের শুরুতেই তারা বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহের কাজ করেন। মধু সংগ্রহের এই কাজ চলে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত।

সাতক্ষীরার মৌচাষি আবদুল হালিম মিয়া জানান, প্রায় এক যুগ ধরে তারা সরিষা থেকে মধু সংগ্রহের কাজ করছেন। মধু সংগ্রহের জন্য এফিসমেলিফ্রা জাতের অস্ট্রেলিয়ান মৌমাছি ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরো জানান, মধু সংগ্রহে সুপার চেম্বার, বুরট, নিউক্লিয়াস নামের বাক্স ব্যবহার করা হয়। সরিষাখেতের কাছে বাক্স রাখলেই মৌমাছিরা মধু এনে বাক্সে জমা করে। প্রতিটি বাক্স থেকে চার থেকে পাঁচ কেজি মধু পাওয়া যায়। প্রতি সপ্তাহে একবার বাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতি কেজি মধু ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতিটি খামারিই কমপক্ষে ১০০ থেকে ৩৫০টি বাক্স ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করে। এক হিসাবে দেখা গেছে, এই মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করা হবে।

খুলনার চাষি আল আমিন মিয়া জানান, এই কাজে লাভের পাশাপাশি পরিশ্রমও বেশ। খরচও আছে। প্রতিটি খামারে তিন থেকে পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন। শ্রমিকদের প্রতি মাসে বেতন দিতে হয় ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, এই শীতে মৌচাষিরা প্রায় কয়েক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ করবেন। মৌমাছিরা ফুলের মধ্যে পরাগায়ন করায় সরিষার উৎপাদন অনেকাংশে বেড়ে যায়। মৌচাষিরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *