শিক্ষাবিদ আব্দুল করিমের মৃত্যুবার্ষিকীতে কর্মসুচি গ্রহণ

Slider জাতীয় সারাদেশ

ঢাকা: রাজনীতিবিদ, কলামিষ্ট, সমাজ সেবক ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম এর পিতা শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব কে.এম আব্দুল করিম (রাহিমাহুল্লাহ) এর মৃত্যুবার্ষিকী আগামী ১১ নভেম্বর।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম।

শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব কে.এম আব্দুল করিম ( রাহিমাহুল্লাহ ) এর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে পিরোজপুরের কাউখালী,ঝালকাঠীর রাজাপুর ও বরিশালে বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মরহুমের স্মরণে আলোচনা সভা হবে তাঁর জন্মভূমি সাতুরিয়ায়। কে.এম আবদুল করিম প্রতিষ্ঠিত মোসলেম আলী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং সাতুরিয়া ইঞ্জিনিয়র একেএম রেজাউল করিম কারিগারি স্কুল অ্যন্ড কলেজ এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

১১ নভেম্বর শনিবার সকালে জন্মভূমি সাতুরিয়ার খান বাড়িতে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১২ নভেম্বর আমরাজুড়ী নিজ বাসভবনে মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, মোস্তফা হায়দার একাডেমী, আলহাজ্ব কে.এম আব্দুল করিম জামিয়া-ই-ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা ও ইয়াতিমখানার পক্ষ থেকে আলোচনা সভা দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন রাখা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর বরিশাল রুকাইয়া প্রপার্টিজ ভবনে আলোচনা সভা দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং এতিম, দুঃস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ ।

আলহাজ্জ্ব কে.এম আবদুল করিম (রহিমাহুল্লাহ) সকলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে ১১ নভেম্বর ২০১৬, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় দুনিয়া থেকে চির বিদায় নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি আর কখনও আমাদের মাঝে আসবেন না।

আলহাজ্জ্ব কে.এম আবদুল করিম ( রাহিমাহুল্লাহ ) এলাকায় গড়ে তুলেছেন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার মধ্যে সাতুরিয়া ইঞ্জিনিয়ার এ,কে,এম রেজাউল করিম কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ, আমড়াঝুড়ি জামিয়া ইসলামীয়া বহুমুখী দাখিল মাদ্রাসা, কে,এম, আ: করিম জামিয়া ইসলামীয়া এতিমখানা অন্যতম।

এছাড়াও শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, মাওলানা আ: রহীম, (র:) স্মৃতি পাঠাগার, মোস্তফা হায়দার একাডেমী, পূর্ব আমড়াঝুড়ি বায়তুল মামুর জামে মসজিদ, সাতুরিয়া খানবাড়ী জামে মসজিদ, উত্তর তারাবুনিয়া মোল্লাবাড়ী জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠির মানোন্নয়নে ভূমীকা রেখেছেন। সম্প্রতি কাউখালি শহরে দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা ও বিশ্রামাগার স্থাপিত হয়েছে মোসলেম আলী খান ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায়। ঝালকাঠি ও পিরোজপুর জেলায় তিনি বাংলা অনুবাদ কোরআন শরীফ বিতরন করেন।

সেবামূলক কাজ পরিচালনার জন্য মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে গরীব ছাত্র-ছাত্রী ও মসজিদের ইমামদের মধ্যে আর্থিক সহয়তা প্রদান করেছেন। রাজাপুর শহরে আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ পানির জন্য তিনি সম্প্রতি ইসরাব নামক একটি এনজিওকে ঋন দিয়েছেন।

ভয়াবহ ঘুর্নঝড় সিডরের পরে মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ত্রান তৎপরতা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এ সময় তার প্রতিষ্ঠিত মোসলেম আলী খান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কাউখালি, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি সদর, রাজাপুর, কাঠালিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালির কলাপড়া, বরগুনার পাথরঘাটা এবং বাকেরগঞ্জ থানায় ৩ হাজার ৬শ ৭০ জন দূর্গত মানুষের মধ্যে শাড়ি-লুঙ্গি, শীতের কাপড়, শুকনো খাবার, হাড়ি-পাতিল,থালাবাসন, খাবার স্যালাইন, ঔষধ ও নগদ অর্থ বিতরন করেন। কুরবানীতে তিনি কাউখালি ও ভান্ডারিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে এবং রাজাপুর ও ঝালকাঠিতে পশু কোরবানী দিয়ে সিডর আক্রান্ত ২ হাজার দুস্থ মানুষের মধ্যে গোশত বিতরন করেছেন। সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি আর্থিক সাহায্য করেছেন। যার মধ্যে কাউখালির কেউন্দা স্কুল ও সাতুরিয়া রহমIতয়া দাখিল মাদ্রাসা অন্যতম। এসব এলাকায় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু মসজিদেও তিনি আর্থিক সহয়তা প্রদান করেন।

সারাজীবন মানুষের উপকার করেছেন। তিনি নিজেকে নিয়ে যতটুকু ভাবতেন তার চেয়ে বেশি ভাবতেন দেশ এবং সমাজকে নিয়ে। তার জীবনের আদর্শ ছিলো মানুষের উপকার করা। সাধারণভাবে চলাফেরা করা তার পছন্দ ছিলো। তিনি সারাজীবন সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন, মানুষের উপকার করার চেষ্টা করেছেন, কারো কোনো ক্ষতি করেননি। “কারো উপকার করতে না পারো, কখনোই কারো ক্ষতি কোরো না।” ছোটোবেলা থেকেই এটা সবসময়ই শুনে এসেছি।তাঁর বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনসহ সব বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালোবাসতেন। বাড়িতে কেউ এলে কখনোই তাঁকে কিছু না খাইয়ে বাবা বিদায় দিতেন না। আপ্যায়ন করতে তিনি ভালোবাসতেন।

আলহাজ্জ্ব কে.এম আবদুল করিম ( রহিমাহুল্লাহ ) ছিলেন ঝালকাঠী জেলার রাজাপুরস্থ সাতুরিয়া হামিদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।

প্রচুর ইংরেজি শব্দ জানতেন, ছোটোবেলায় আমাদের শেখাতেন। তার শিক্ষকতার আদর্শই তার সমগ্র জীবনাচরণের অঙ্কুর ও শেকড়কে ধারণ করেছিল। কতো লোকের উপকার করেছেন, কতো স্টুডেন্টকে ফ্রিতে পড়িয়েছেন, পার্থিব সম্পদের চাইতে মনের ঐশ্বর্য বাড়াতে চেষ্টা করেছেন; কিন্তু কখনোই বিন্দুমাত্রও অহংকার দেখাতে দেখিনি। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায় আমার বাবা একজন আজন্ম সংগ্রামী মানুষ ছিলেন। সভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি ধর্মভীরু ছিলেন, কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। কখনোই তার মধ্যে কোন গোঁড়ামি দেখিনি।

তার সকল মানবিক গুণাবলি, কর্তব্য-পরায়ণতা, দৃষ্টিভঙ্গির উদারতা, সাহসিকতা ও ন্যায়ের পাশে দাঁড়ানোর সমুদয় সত্যনিষ্ঠায় যর্থাথই হয়ে উঠেছিল তার পরিচয় I যা সঠিক মনে করেছেন, তা দ্বিধাহীনভাবে প্রকাশ করেছেন।

কখনো তিনি আশা ছাড়েননি। তিনি বিশ্বাস করেছেন, আমাদের মধ্যে যে অপূর্ণতা, অসত্য ও অমানবিকতা রয়েছে, তা পেরিয়ে আমরা একদিন সত্যিই সুন্দর ও সত্যের ভোর দেখব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *