তুরাগ তীরে হবে ‘নতুন ঢাকা’

Slider জাতীয় ঢাকা


শাহেদ মতিউর রহমান: তুরাগ নদীর দুই তীর ঘেঁষে আধুনিক ও পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এ লক্ষ্যে বেশ কিছু কাজ এগিয়েও নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সীমানা নির্ধারণ থেকে শুরু করে আবাসনের পাশাপাশি এ এলাকায় বিনোদনের জন্য আর কী কী সুযোগ সুবিধা রাখা যায় তা নিয়েও একটি সমীক্ষা চালিয়েছে রাজউকের পরিকল্পনা বিভাগ। রাজউক আশা করছে, তুরাগের দুই তীরের ১৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ এলাকায় গড়ে উঠবে নতুন এক আবাসিক এলাকা। তুরাগ তীর হয়ে উঠবে আলো ঝলমলে এক ‘নতুন ঢাকা’।

তবে তুরাগ নদীর দুই তীরের এই পুরো এলাকাটি রাজউকের ডিটেল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) প্রকল্পের আওতার মধ্যে থাকলেও এখানের জমি আবাসিক, বন্যাপ্রবণ এবং বিনোদন কেন্দ্রের জন্য পৃথকভাবে ব্যবহার করা হবে। রাজউকের ভাষ্যমতে, গাবতলী ও আমিনবাজার থেকে শুরু করে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ি পর্যন্ত পুরো এলাকাটি বন্যাপ্রবণ হওয়ায় এখানে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হলেও নদীর দুই তীরে ও পানিপ্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে না। রাজউকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার গাবতলী ও আমিনবাজার থেকে শুরু করে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে সব কিছু চূড়ান্ত হয়েছে। রাজউকের পরিকল্পনা শাখা প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও শেষ করছে।

রাজাউকের পরিকল্পনা শাখা থেকে জানা যায়, আশুলিয়ায় নতুন আবাসন প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, তুরাগ নদীর তীর ঘেঁষে সাভার ও আশুলিয়া এলাকার জলাশয়গুলো ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছে না রাজউক। বর্ষা মওসুমে রাতের আঁধারে নৌকায় করে তারা পানিতে বালু ফেলে। শুষ্ক মওসুম শুরু হতেই সেখানে অসংখ্য চর জেগে উঠছে। এভাবে আশুলিয়ার বিশাল এলাকা ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। আশুলিয়ার এই বিশাল জলাভূমি ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই মূলত আমিনবাজার থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত পুরো এলাকা অধিগ্রহণ করে তুরাগ নদী ও জলাশয়গুলো রক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব স্থান ভরাট হয়ে গেছে সেখানে প্লট বানিয়ে বরাদ্দ দেয়া হবে।

আশুলিয়ার এই প্রকল্পের বিষয়য়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। রাজউকের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী সম্মতিও দিয়েছেন এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নের ব্যাপারেও রাজউককে আশ্বাস দিয়েছেন। আশুলিয়ার এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে বলেও রাজউকের কর্মকর্তারা মনে করছেন। কারণ বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের সিদ্ধান্ত ও তা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুরের কাছে তুরাগ নদীর পূর্বপাশে পঞ্চবটি এলাকায় ইতোমধ্যে দেশের প্রথম মেট্রোরেলের বড় স্টেশনটি স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকেই মূলত ঢাকা শহরের অন্যান্য অংশে মেট্রোরেলের সংযোগস্থাপন হবে। এ ছাড়া উত্তরা তৃতীয় পর্বের ফ্ল্যাট প্রকল্পটির অবস্থানও তুরাগ নদীর পূর্বপাড়েই।

রাজউকের প্রক্রিয়াধীন ডিটেল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) এর প্রকল্প পরিচালক ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, আশুলিয়ার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার আগে রাজউক দু’টি বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রথমত, আমিনবাজার থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ি পর্যন্ত পুরো এলাকাটিই বন্যাপ্রবণ। তাই এখানে যে প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা হোক না কেনো, বন্যার পানিপ্রবাহে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, আবাসিকের পাশাপাশি এ এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু বিনোদনকেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে শহরের মানুষের অবকাশ যাপনেরও একটি ব্যবস্থা হয়। এতে নদীর তীররক্ষা সহজ হবে। তিনি আরো জানান, তুরাগের দুই তীরে শুধু আবাসিক এলাকাই হবে না, যেসব এলাকা বেদখল হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধার করে কিছু পার্ক বা বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া ভালো মানের হোটেল-রেস্টুরেন্টও তুরাগ নদীর তীরে গড়ে তোলা হবে।

রাজউকের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ শাখার সদস্য আবুল কালাম আজাদ জানান, আমিনবাজার থেকে আশুলিয়া হয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ি পর্যন্ত আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেটি এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে সমীক্ষার যে কাজটি করার কথা ছিল সেটি সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি চূড়ান্ত করার আগে আরো কয়েকটি ধাপের কাজ বাকি আছে। তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা (রাজউক) প্রাথমিক পর্যায়ের কাজটি করে যাচ্ছি।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও রাউজকের সদস্য (পরিকল্পনা) মো: আজহারুল ইসলাম খান নয়া দিগন্তকে জানান, আশুলিয়ার প্রকল্পটির প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। সেখানে হয়তো কিছু বিষয় যুক্ত বা বাদ দেয়া হতে পারে। এর পরেই এটি চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। একনেকে আর্থিক বরাদ্দ পাস হওয়ার পর প্রকল্পের কাজ মাঠপর্যায়ে শুরু হবে।

রাজউকের পরিকল্পনা শাখা সূত্রে আরো জানা গেছে, ঢাকার নবাবগঞ্জ-দোহার-মাওয়া এলাকায় পদ্মা নদীর পাড়ে একটি আবাসন প্রকল্প নেয়া হবে। পূর্বাচলের দক্ষিণে হবে একটি শিক্ষা জোন। সেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থানান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে। এটা হবে পূর্বাচল প্রকল্পের দক্ষিণে পূর্বাচল ও ডেমরার মধ্যবর্তী স্থানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *