হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


ডেস্ক |রোহিঙ্গাদের আশ্রয়শিবিরের চারপাশে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণের পরিকল্পনা স্থগিত করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা দাবি করেছে, এতে রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার প্রত্যাখ্যান করা হয়। এ বিষয়ে ৩০ শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এমন বেড়া ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ পরিকল্পনা ২৬ শে সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, বিশেষ করে এমন নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ওই বিবৃতিতে বলেছে, যখন কর্তৃপক্ষের উচিত শিবিরে আশ্রয় গ্রহণকারীদের সুরক্ষা দেয়া তখন এমন নিরাপত্তা বিষয়ক পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না, যা তাদের মৌলিক অধিকার ও মানবিক প্রয়োজনকে প্রত্যাখ্যান করে। প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো মুক্তভাবে চলাচল সীমাবদ্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুত্ব ও ভারসাম্য রক্ষা করে না।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, মিয়ানমারে ভয়াবহ নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তিনি ওই আশ্রয় শিবিরকে একটি মুক্ত বন্দিশিবির বানাতে চাইছেন। রোহিঙ্গাদেরকে বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকার বিশ্বজুড়ে যে শুভেচ্ছা বা সুনাম অর্জন করেছে তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে।

গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর প্রতিরক্ষা বিষয়ক বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডি কমিটি এক সুপারিশে আশ্রয়শিবিরের চারপাশে নিরাপত্তামূলক বেড়া নির্মাণের সুপারিশ করে, যাতে শিবির থেকে একজনও মানুষ বের হতে না পারেন এবং একজনও মানুষ ক্যাম্পের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লিখেছে, শরণার্থীদের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে তাদের অবাধ চলাচলকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্য দিয়ে তাদের মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জরুরি অবস্থায় অথবা জরুরি স্বাস্থ্য সেবা অথবা অন্য কোনো রকমের মানবিক সেবার ক্ষেত্রে তাদেরকে উদ্ধার করার প্রয়োজনীয়তা এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে।

আশ্রয়শিবিরে সব টেলিযোগাযোগ বিষয়ক অপারেটরদের থ্রি জি এবং ফোর জি সেবা বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন। এর মাত্র দু’এক সপ্তাহ পরেই সরকার ওই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। শিবিরে আশ্রয়গ্রহণকারীরা বলছেন, ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে উচ্চগতির সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মানবিক সহায়তাকর্মীরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীকে কার্যকর সহায়তা করায় তাদের সক্ষমতা মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, শরণার্থীদের আশ্রয়শিবিরে উত্তেজনা ও বিপদ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। শিবিরে বিভিন্ন বাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ সরকার। তবে তাদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে নানা রকম অভিযোগ উত্থাপন করছেন আশ্রয়গ্রহণকারীরা। একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, স্থানীয় একজন রাজনীতিক ওমর ফারুক খুন হয়েছেন ২২ শে আগস্ট। তারপর থেকে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা ক্রসফায়ারে কমপক্ষে ১৩ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে হত্যা করেছে। তিনি বলেছেন, এর মধ্যে ওমর ফারুক হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে ১১ জনের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশে আইন প্রয়োগকারীদের হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-কে ঘন ঘন ক্রসফায়ারে হত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হয়। ১৬ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা এমন সব হত্যাকা-ের নিরপেক্ষ, পক্ষপাতিত্বহীন ও কার্যকর তদন্ত দাবি করেছেন। এসব হত্যায় দায়ী কাউকে গ্রেপ্তার করা হয় নি।

ব্রাড এডামস বলেছেন, শরণার্থীদের অবাধ চলাচল প্রত্যাখ্যান করে তাদের সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের উচিত ভয়াবহ নৃশংসতা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, তাদেরকে আরো নির্যাতন করা উচিত নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *