ঢাকা: বিএনপির সিনিয়র নেতা আবদুল মঈন খান বুধবার সরকারের বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনোর অনুমতি দেয়ার পরিকল্পনাকে ‘অনৈতিক কাজ’ উল্লেখ করে এ প্রদক্ষেপের ঘোর বিরোধীতা করেছেন।
‘আমি পত্রিকায় দেখেছি সরকার বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনো করার পরিকল্পনা করছে। ক্যাসিনো নিয়ে সারাদেশে এতো শোরগোলের পরও সরকার কীভাবে এমন ঘোষণা দিতে পারে? কীভাবে সরকার এমন অনৈতিক কাজের উদ্যোগ নিতে পারে,’ বলেন তিনি।
বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজিত এক মানববন্ধন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা ও কক্সবাজারে বিশেষ পর্যটন অঞ্চল হবে। বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে যাতে অন্যান্য দেশের মতো পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশিরা ক্যাসিনোতে ঢুকতে পারে সেই পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশিদের জন্যই এটা।’
ঢাকায় অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানকেও সমর্থন জানিয়েছেন তিনি।
মঈন বলেন, ‘বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনো দেয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কেননা এটা বাংলাদেশের মানুষের চরিত্রের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।’
‘বাংলাদেশিদের জন্য যা পাপ তা কখনো বিদেশিদের জন্য ভালো হতে পারে না। বিদেশিরা বাংলাদেশে অপকর্ম করলে সেটা কি পাপ হবে না? কে নিশ্চয়তা দিতে পারে যে বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনো চালু করা হলে তা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে না,’ বলেন বিএনপি এর নেতা।
‘সরকারে কোনো ধরনের জবাবদিহিতা না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়াচ্ছে এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপ করে যাচ্ছে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘সরকার জবাবদিহি ও গণতন্ত্র ছাড়া অন্যায়কারী ও দুর্নীতিবাজদের আড়াল করতে পারে না। একজন ছোট রাজনীতিবিদ হিসেবে আমি বলতে পারি, আপনারা (সরকার) যে ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন তৈরি করেছেন তা কেবল বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগেরও ক্ষতি করবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বাড়ি থেকে কোটি কোটি টাকা এবং বিশাল স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যাচ্ছে তাহলে সরকার কীভাবে দেশের উন্নয়ন করেছে তা জনগণ জানতে চায়।’
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে যেখানে তাদের কয়েকজনকে কোটি কোটি ‘অবৈধভাবে উপার্জিত’ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ‘তারা সরকারের সহায়তায় অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে।’
ক্যাসিনো ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের অনুপ্রবেশকারী বলে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের করা বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সরকার কেন তাদের অর্থ উপার্জন এবং অবৈধভাবে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনে বড় পদ দিয়েছে।’
‘খন্দকার মোশতাক আহমেদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী আপনি (এইচটি ইমাম) কখন থেকে আওয়ামী লীগ করা শুরু করেছেন? আপনি এখন অনেক বড় আওয়ামী লীগ বনে গেছেন, যেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পদধারীরা অনুপ্রবেশকারী হয়ে উঠেছে। আপনার দায়িত্ব এড়ানোর জন্য এমন অযৌক্তিক মন্তব্য করবেন না,’ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকে ইঙ্গিত করে এসব কথা বলেন বিএনপির এ নেতা।
ক্ষমতাসীন দলের গ্রেপ্তার হওয়া নেতা প্রতি মাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে কোটি টাকা পাঠাতেন বলে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের করা মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী এই ধরনের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’
ক্যাসিনো ব্যবসা ও দুর্নীতির সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে দেশের ভালোর স্বার্থে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নজরুল বলেন, ‘তবে আমরা জানি সরকার এটি করতে পারবে না।’