অভিযান ইতিবাচক, এতদিন হয়নি কেন?

Slider জাতীয় সারাদেশ


ঢাকা: অনেকটা হঠাৎ করেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা ক্লাবে ক্লাবে অভিযান শুরু করেছে। ক্লাবের অন্তরালে চলা জুয়া, অবৈধ অর্থ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠেনর দুই প্রভাবশালী নেতাকে ধরতে সক্ষম হয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের এই তৎপরতা বেশ প্রশংসনীয়ও। জনসাধারণ থেকে শুরু করে সর্বত্র এই অভিযান প্রশংসা কুড়াচ্ছে। তবে হঠাৎ করে শুরু হওয়া এ অভিযান কতটা অপরাধ দমনে ভূমিকা রাখবে সেটা স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। হঠাৎ শুরু হওয়া এ অভিযান ইতিবাচক হলেও অপরাধ দমনের বিষয়টি সুস্পষ্ট নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক।

তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো কাজ। তবে স্বস্তি নেই। কারণ এসব বেআইনি কার্যকলাপ বহুদিন ধরে বহু মানুষ জানতো। হঠাৎ করে এ অভিযান কতটা অপরাধ দমনের সেটা স্পষ্ট নয়। তবে অভিযান চলছে, চলুক। এটাই প্রত্যাশা। চলমান অভিযান উৎসাহব্যাঞ্জক ও জনমনে প্রত্যাশার সৃষ্টি করবে বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তবে এর ফলে দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখবে তা নির্ভর করবে এটি কতটুকু সর্বব্যাপী ও টেকসই হয় তার ওপর। তিনি বলেন, দুর্নীতির অভিযোগে কিছু সংখ্যক ছাত্র ও যুবনেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রেক্ষিতে যে লোমহর্ষক চিত্র সামনে এসেছে, তা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। মূলত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও রাজনৈতিক পরিচয়ে দুর্নীতির শেকড় আরো গভীরতর ও ব্যাপকতর। দুর্নীতির যে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে তা হতাশাব্যঞ্জক হলেও অবাক করার মতো কিছু নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় কোন দল অধিষ্ঠিত তা নির্বিশেষে দেশে দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও ক্ষমতার অবস্থানকে জনস্বার্থের জলাঞ্জলির বিনিময়ে নিজেদের সম্পদ বিকাশের লাইসেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক ছিলো যে, এর ফলে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার দেশকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাবে। রাজনীতি, ব্যবসা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাংশের দুর্নীতিবান্ধব যোগসাজশ সমাজের সকল পর্যায়ে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করেছে। এখন জরুরি, কাউকে ছাড় না দেয়া, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে যে-কোনো পর্যায়ের অবস্থান ও পরিচয়ে প্রভাবান্বিত না হয়ে এ ধরনের অনিয়মে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনা। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সামপ্রতিক অভিযানের ফলে যে উৎকণ্ঠাজনক চিত্র সামনে এসেছে, তা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। চলমান এ অভিযানের ব্যাপ্তি ও প্রসার অন্যান্য খাত এবং পর্যায়ে বিস্তৃত করতে পারলে একই চিত্র উদঘাটিত হবে। রাজনৈতিক সংশ্রবপ্রসূত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার শুধু রাজধানী ও এর আশপাশের যুব ও ছাত্র নেতৃবৃন্দের একাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিস্তৃত দেশব্যাপী সকল পর্যায়ে, এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ মূল রাজনৈতিক দল ও দলের অন্যান্য ভ্রাতৃপ্রতিম অঙ্গসংগঠনের একাংশে। প্রকৃতপক্ষে, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক্ষেত্রে তাদের মূল দলের অগ্রজদেরই অনুসরণ করে থাকে, যারা এক্ষেত্রে তাদের এই চর্চার রোল মডেল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান এ বিষয়ে বলেন, পুলিশের নাকের ডগায় ক্যাসিনোগুলো চলছিল। অথচ তারা এসব খুঁজে পায়নি। তাহলে তারা এতোদিন কি করছিল? তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি সেক্টরে যেখানে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, অন্যায়-অবিচারে ভরে গেছে সেখানে রাজনৈতিক দলের অঙ্গ-সংগঠনের কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এসব বন্ধ করা যাবে না এধরনের অভিযান সাময়িক। দেশ যেহেতু চালায় রাজনৈতিক দল, সেহেতু তাদের দলের ভেতরেই সংস্কার করতে হবে। দলের ভেতরে দুর্নীতিবাজ, দখলদারী, লুটেরাদের চিহ্নিত করতে হবে। দলের ভিতরে সংস্কার হলে অঙ্গসংগঠনগুলোরও সংস্কার হবে। আর দলের ভেতরে দুর্নীতবাজ রেখে অঙ্গ সংগঠনগুলোর সংস্কার করে কোন লাভ নেই। আজকে শোনা যাচ্ছে এসব অবৈধ ব্যবসার পিছনে রাঘববোয়ালদের নাম বেরিয়ে আসছে। এখন দেখা যাক এসব রাঘববোয়ালরা শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পৌঁছায় কিনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *