এবার বাঁশের ওপর কংক্রিটের সেতু!

Slider জাতীয় বিচিত্র


নড়াইল: এবড়ো-থেবড়ো ইটের রাস্তা, তার ওপর সেতুর মরণদশা। এই সেতু দিয়েই প্রতিদিন হাজারো লোকের চলাচল। প্রায় দুই বছর ধরে বাঁশ দিয়ে কনক্রিটের সেতু ঠেকানোর চেষ্টা করছে এলাকাবাসী। মাঝে মধ্যে বাঁশ নষ্ট হয়ে গেলে তা আবার পরিবর্তন করে নতুন বাঁশ দিয়ে ‘ঠেকনা’ দিয়ে রাখা হচ্ছে। এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনের পর দিন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েই চলাচল করছে ৫ ইউনিয়নের হাজারো মানুষ। গত কয়েকবছর ধরে নানাসময়ে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেও কোনো ফল পায়নি। খোদ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের এ ব্যাপারে কোনো নজর নেই।

নড়াইল শহর থেকে ৪ কিলোমিটার নড়াইল-যশোর সড়কের সাথে লাগায়ো হিজলডাঙ্গা-মুলিয়া সড়ক। এই সড়কের মাঝে মুলিয়া ইউনিয়নের সীতারামপুর খালের ওপর নির্মিত হিজলডাঙ্গা সেতু। এই সড়ক দিয়ে যশোর এবং নড়াইল শহরে প্রতিদিন ২০ গ্রামের কয়েকহাজার মানুষ যাতায়াত করে। প্রায় ৪ বছর ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে আছে। এই অবস্থায় প্রতিদিনই সেতু পার হচ্ছে নানাধরনের যানবাহন, ঘটছে নানা ধরনের দুর্ঘটনা।

সেতুর পাটাতন দুর্বল হয়ে ভেঙে পড়া উপক্রম হলে দুই বছর আগে এলাকার কৃষকসহ অন্যরা টাকা তুলে নিজেদের চলাচল ঠিক রাখতে সেতুর নিচে বাঁশ ও গাছ দিয়ে ঠেকা দেয়। এতে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে নৌকা চলাচল বন্ধ হয় এবং বিলের ফসল পরিবহন বন্ধ হয়। চলাচল সচল রাখতে দুই বছর ধরে এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে দেবে যাওয়া পাটাতন ঠিক রাখতে পুরাতন বাঁশ বদলে আবার নতুন বাঁশ দিয়ে সেতুর চলাচল ঠিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সেতুটি নির্মাণ ও মালিকানা বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো তথ্য দিতে না পারলেও এলাকাবাসী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে এলজিইডি সদর উপজেলার মুলিয়া ইউনিয়নের সীতারামপুর খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করে। নির্মাণের কয়েক বছর পরেই সেতুটির পাটাতনের ঢালাই ভেঙে দুটি বড় গর্ত তৈরি হয়ে ভেতরের রড বের হয়ে যায়। ধীরে ধারে নিচের কনক্রিটের বাঁধন খুলে আলগা হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বিকল্প সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার ২টি প্রাথমিক ও ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ওই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করছেন।

সীতারামপুর, দুর্বাজুড়ি, ইচড়বাহা, বাঁশভিটা, হিজলডাঙ্গা, শালিয়ারভিটা, মুলিয়া, পানতিতা, কোড়গ্রাম, বালিয়াডাঙ্গা, বড়েন্দার ও গোয়ালডাঙ্গাসহ আশপাশের গ্রামের মানুষদের চলাচলের জন্য ওই সেতু ব্যবহার করতে হয়।

প্রতিদিন সেতুর ওপর দিয়ে স্থানীয় কৃষকেরা তাদের মালামাল পরিবহন করছেন। রোগীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেকোনো মুহূর্তে সেতুটি ভেঙে বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে চলাচল একেবারে বন্ধ হবার আশঙ্কা রয়েছে।

নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র খান কবির বলেন, সেতুর ব্যাপারে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী কে এখানে এনে দেখানোর পরেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিধায় আমরা নিজেদের তাগিদে বাঁশ ও গাছ দিয়ে সেতু ঠেকিয়ে কোনোরকমে যাতায়াত করছি।

স্থানীয়রা জানায়, হিজলডাঙ্গা গ্রামে পৌষসংক্রান্তিতে জেলার সর্ববৃহৎ ‘পাগল চাঁদের মেলা’ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। লোকজ ঐতিহ্যের এ মেলায় দেশ-বিদেশের হাজারো মানুষ যানবাহনসহ ওই সেতুর ওপর দিয়ে মেলায় অংশ নেয়। জরুরি ভিত্তিতে সেতু সংস্কার না করলে যেকোনো মুহূর্তে বড়ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।

মুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ অধিকারী জানান, সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নড়াইল সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ নির্বাহী প্রকৌশলী বিধানচন্দ্র সমাদ্দার ওই সেতুটি দেখে এসেছি। সেতুটির অবস্থা আসলেই ভালো নয়, নতুনভাবে নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। ওই সড়কসহ সেতুর ডিপিপি পাঠানো হয়েছে, অনুমোদন হলেই কাজ শুরু করা হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধানচন্দ্র সমাদ্দার বলেন, আমাদের সংস্কার টিম ঢাকা থেকে আগামী সপ্তাহে আসবে, তারা সেতুটি দেখে সংস্কার-উপযোগী হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *