এটিএম বুথ থেকে কৌশলে পিন নম্বর জেনে নিয়ে প্রতারণা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য জাতীয়

ঢাকা:প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করার অভিযোগে শহিদুল ইসলাম (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালত গতকাল শুক্রবার এই আসামির এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আসামি শহিদুল ইসলাম বর্তমানে ডিবি হেফাজতে আছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আরিফুর রহমান আজ শনিবার বলেন, আসামি শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি করে আসছেন। তাঁর নামে ঢাকায় অন্তত তিনটি মামলা থাকার তথ্য মিলেছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শহিদুল ইসলাম তাঁদের জানিয়েছেন, টাকা তোলার নাম করে ব্যাংকের বুথে অপেক্ষা করতেন। কোনো গ্রাহক যখন এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তেন, তখন শহিদুল তাঁকে সহযোগিতার করার জন্য এগিয়ে যেতেন। কৌশলে ওই গ্রাহকের পিন নম্বরটি জেনে নিতেন। আসল এটিএম কার্ডটি নিজের কাছে রেখে নকল কার্ডটি গ্রাহককে ধরিয়ে দিতেন। এভাবে কয়েক বছর ধরে শহিদুল দুই থেকে তিন লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন।

প্রতারণার মাধ্যমে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক থেকে টাকা চুরির অভিযোগে ব্যাংকটির অল্টারনেট ডেলিভারি চ্যানেলের প্রধান মশিউর রহমান বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় গত ৫ সেপ্টেম্বর মামলা করেন।

মামলায় মশিউর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন থেকে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষীদের মাধ্যমে জানতে পারেন, সংঘবদ্ধ একটি চক্র কৌশলে গ্রাহকের ডেবিট কিংবা ক্রেডিট কার্ড এবং পিন নম্বর সংগ্রহ করে টাকা তুলছে। সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা আগে থেকে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের বুথের ভেতর ও বাইরে অবস্থান করে। এ সময় ব্যাংকের কোনো গ্রাহক টাকা তুলতে গেলে তাঁরা মেশিন নষ্ট হওয়ার অজুহাতে অথবা ভুল পিন নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে থাকে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা এটিএম কার্ডের গোপন পিন নম্বরটি জেনে নেয়। একই সঙ্গে কৌশলে গ্রাহকের মূল কার্ডটির সঙ্গে অন্য একটি নকল কার্ড অদল-বদল করে থাকে। চক্রটি বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই প্রক্রিয়ায় ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের গ্রাহকের টাকা তুলে আসছে।

মামলায় মশিউর রহমান আরও বলেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রতারণার মাধ্যমে খিলগাঁওয়ে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার নিরাপত্তারক্ষী আনিস ওই প্রতারককে আটক করার চেষ্টা করেন। তবে ওই প্রতারকসহ তার সহযোগীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

এর আগে গত জুনে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাকিং করে টাকা তোলার মামলায় গ্রেপ্তার হন ছয় বিদেশি নাগরিক।

ডিবি তখন আদালতকে এক প্রতিবেদন দিয়ে জানায়, সংঘবদ্ধ ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের সদস্যরা খিলগাঁওয়ের তালতলা মার্কেটের সামনের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথের সিস্টেম হ্যাক করেন। জালিয়াতির মাধ্যমে ওই বুথ থেকে টাকা তোলার সময় জনসাধারণের সহযোগিতায় দেনিস ভিতোমস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভিতোমস্কিকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেন থেকে বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ছয় আসামি হলেন দেনিস ভিতোমস্কি (২০), নাজারি ভজনোক (১৯), ভালেনতিন সোকোলোভস্কি (৩৭), সের্গেই উইক্রাইনেৎস (৩৩), শেভচুক আলেগ (৪৬) ও ভালোদিমির ত্রিশেনস্কি (৩৭)। আসামিরা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক।

জালিয়াতির মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার ঘটনায় সাত বিদেশির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে রাজধানীর বাড্ডা থানায় গত ১২ জুন আরেকটি মামলা হয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সাইবার তদন্ত বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) প্রশান্ত কুমার সিকদার বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

মামলায় প্রশান্ত কুমার সিকদার মামলার এজাহারে বলেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ১ জুন জানায়, গত ৩১ মে রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে বাড্ডায় এটিএম বুথ থেকে সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের দুই বিদেশি সদস্য অবৈধভাবে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা উত্তোলন করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *