ঢাকা: জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের সহযোগিতাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অ্যাকশনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে তালিকা সম্পন্ন হয়েছে। সারা দেশের ৩ শতাধিক নেতা এ তালিকায় রয়েছেন। প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। পরে নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। শাস্তির মধ্যে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুই রকমই রয়েছে। প্রত্যক্ষ শাস্তির মধ্যে আছে- দল থেকে অথবা পদ থেকে সাময়িক বা স্থায়ী বহিষ্কার। পরোক্ষ শাস্তি হিসেবে রয়েছে-এমপি পদ থেকে শুরু করে যে কোন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেয়া।
মূলত তৃণমুল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত করতেই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে দলটি। তবে এ নিয়ে কোন তাড়াহুড়ো করবে না দলটি। সামনে কাউন্সিল থাকায় এ বিষয়ে ধীর চলো নীতি অবলম্বন করা হবে। চলতি মাসেই বিদ্রোহীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশের উত্তর পাওয়ার পর তা খতিয়ে দেখে ও বিচার-বিশ্লেষন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের শাস্তির বিষয়ে দলের একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসব তথ্য জানান। কেন্দ্রিয় কয়েক নেতা জানান, প্রায় ২০০ জন নেতার বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে সরাসরি কাজ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সহযোগী সংগঠনের আরো শতাধিক নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া ৬০ জন এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। জুন মাসে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর ২৮শে জুলাই থেকে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বিমতের কারণে তখন ওই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়নি। কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী ও মদদদাতাদের বিরুদ্ধে খুবই কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। আরেকটি অংশ এ বিষয়টি সহজভাবে নেয়ার কথা ব্যক্ত করেন। তাদের মতে, যেহেতু উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ছিল না তাই দলের অনেকেই নির্বাচন করেছে। এতে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে। এখন শুধু শুধু এ সকল প্রার্থীদের বহিষ্কার করে দলের কি লাভ? পরে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেন। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার। বিদ্রোহীদের শাস্তি প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যারা জাতীয় নির্বাচনে বিদ্রোহ করেছে-ধরে নিতে পারেন আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য হবে না। শাস্তি শুধু বহিষ্কার করলে হয়-এমনটা নয়, দলের শাস্তি অন্যভাবেও দেয়া যায়। তিনি বলেন,স্ব-স্ব বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের টিম অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। কারণ যেসব অভিযোগ এসেছে তাতে কারো বিরুদ্ধে কারো ইনটেশনও থাকতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আগষ্ট মাস শোকের মাস হওয়ায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়। চলতি মাস থেকে ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অতীতে জাতীয় নির্বাচনের কারণে তখন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে ডিসিপ্লিন ব্রেক হলে এই প্রবণতা চলতেই থাকবে এবং এটা দলের জন্য কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। সে কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি ডিসিপ্লিন ভঙ্গ হলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
শাস্তির প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের জানান, বিদ্রোহীদের শোকজ করা হবে। শোকজের জবাব তো তারা দিবে? তারা নিশ্চয়ই সেখানে বলবে কোন কেন্দ্রীয় নেতা তাকে এনকারেজ করেছে। শোকজ করার পরে কী কারণে আপনাকে পার্টির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না সেটা তো জবাব দিতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে যেরকম কোন্দল ও বিভেদ তৈরি হয়েছে তা জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও হয়নি। উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের সম্পৃক্ততা বেশি। তারাই হচ্ছে দলের প্রাণ। তাই দলকে সুসংগঠিত রাখতে তৃণমুলকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তাদের মধ্যে বিভেদ থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আওয়ামী লীগ। তারা জানান, তৃণমুলের কোন্দল নানা কারণে তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় এমপিরা অনেক এলাকায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করেছেন। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে অনেক এমপি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। এসব বিষয়কে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা স্বাভাবিকভাবে নেননি বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলেন, উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব এমপি-মন্ত্রী ও দলীয় নেতারা নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে লিখিত রিপোর্ট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কোন কোন এমপি-মন্ত্রী ও নেতা নৌকার বিরোধীতা করেছেন, আমার কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে। নৌকার বিরুদ্ধে যারা কাজ করছেন, আগামীতে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। দলের সার্বিক সাংগঠনিক পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, সাংগঠনিক সফরের প্রথম কাজ ছিলো সংগঠনের মধ্যে কোন বিভক্তি আছে কি না তা চিহ্নিত করা। তারপর এসবের সমাধান করা। মূল কথা জাতীয় সম্মেলনের আগে দলকে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোলা, গতিশীল ও বেগবান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে তৃণমুলের বিভক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনকেন্দ্রিক তৈরি হওয়া বিভক্তি, বিভেদ বা ভুল বোঝাবুঝি বেশিদিন থাকবে না। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলের চেইন অব কমান্ড নষ্ট করার মূলে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন দলীয় এমপিরা। নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের জেতাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তারা। দলের পক্ষ থেকে যাদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হয় তারা যদি এমপির অনুগত না হন তাহলে সমর্থন দেয়া হয়েছে অন্য প্রতীকের নিজেদের প্রার্থীকে। ওইসব প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হয়ে লড়েছেন নির্বাচনী যুদ্ধে। তাদের পাশে ছায়ার মতো ভূমিকা পালন করেন সমর্থন দেয়া এমপিরা। কোথাও কোথাও সরাসরি প্রভাব বিস্তার করেছেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন,এর আগেও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে অনেক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি দল। তবে এবার আর কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না।