আন্দোলনে আজও স্থবির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Slider শিক্ষা

ঢাকা: উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রশাসন ভবন অবরোধ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের একাংশ। আজ বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন।

এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলন কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রশাসন ভবন অবরোধ করেন তাঁরা। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন প্রশাসন ভবনের সামনে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আজ বুধবারের মধ্যে দাবি আদায় না হলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে আন্দোলনকারীদের।

এদিকে, আন্দোলনের বিপক্ষে থাকা সিনেট সদস্যরা গতকাল সংবাদ সম্মেলন করেছেন। অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পে উপাচার্য ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করে গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন আন্দোলনের পক্ষে থাকা সিনেট সদস্যরা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নে এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নে যে মাস্টারপ্ল্যান অনুসরণ করা হচ্ছে তা অপরিকল্পিত ও অস্বচ্ছ। প্রকল্পের টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটি টাকা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত, উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার পুনর্বিন্যাস এবং আবাসিক হল নির্মাণের স্থান পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘লুটপাটের কথা উনারা (আন্দোলনকারীরা) কোথা থেকে পেয়েছেন সেটা উনারাই জানেন। আমি এটার উত্তর দিতে পারব না। আর অপরিকল্পিত তো নয়ই, আমাদের পরিকল্পনা স্তরে স্তরে বিভিন্ন পর্যায় পার হয়ে তারপর একনেকে গিয়েছিল। তারপর সেটি পাস হয়েছে।’

এর মধ্যে গতকাল দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার মহাপরিকল্পনায় বিঘ্ন সৃষ্টি ও ভিত্তিহীন অভিযোগের’ প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনের বিপক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন উপাচার্যপন্থী সিনেট সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘উপাচার্যের রুচি, সংস্কৃতি, স্ট্যান্ডার্ড অনেক ওপরের। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে বলছি ভিত্তিহীন। উপাচার্যের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারলেই অনেকে সুবিধা পাবে, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করা সহজ হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত এক সিনেট সদস্য কালের কণ্ঠের কাছে বলেছেন, ‘আমার সম্মতি ছাড়াই তারা সম্মতি লিস্টে আমার নাম ব্যবহার করেছে এবং আমাকে ফোন দিয়ে বারবার আসতে বলেছে। শেষ পর্যন্ত দ্বিমত থাকা সত্ত্বেও এখানে এসেছি।’

আন্দোলনের প্রসঙ্গে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘তিনটি ছাত্র হলের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে গাছ কম কাটা পড়বে। আর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগির যে অভিযোগ এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা মিথ্যা দাবি করছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কোনো উচ্চতর কমিটির মাধ্যমে এই অভিযোগের তদন্ত হতে হবে। সেটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা ইউজিসির তদন্ত হতে পারে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আর মাস্টারপ্ল্যানের সমস্ত শর্ত পূরণ করে তা পুনর্বিন্যস্ত করতে হবে।’

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয় বলেন, ‘দুই দিন টানা অবরোধ চলবে। তার পরও যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *