ডেস্ক: মুখ খুললেন বৃটিশ অভিনেত্রী ও প্লেবয়ের সাবেক মডেল আনুশকা ডি জর্জিয়াস। তিনি বললেন, যুক্তরাষ্ট্রের মিলিয়নিয়ার প্রয়াত জেফ্রে এপস্টেইন তাকে যৌন নির্যাতন করেছেন। তার ভাষায়, জেফ্রে এপস্টেইন আমাকে দূষিত করেছেন। কলুষিত করেছেন। যৌন নির্যাতন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে ফেডারেল কোর্টে দাঁড়িয়ে বিচারকের সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেছেন। এ ছাড়া আরো অনেকে জেফ্রে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে অভিন্ন যৌন নির্যাতনের অভিযোগ এনেছেন। তার মধ্যে অনেকে বলেছেন, তাদেরকে যৌনদাসী বানিয়ে রেখেছিলেন জেফ্রে এপস্টেইন।
আদালতে যখন এসব অভিনেত্রী বা মডেল সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন তখন তাদের সবার বক্তব্য যেন একই শোনাচ্ছিল। ২৩ জন নির্যাতিত নারী এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাতে ফুটে উঠেছে এমন চিত্র যে, জেফ্রে এপস্টেইন বিপদে পড়া যুবতীদের কাজে নিতেন। তাদেরকে গ্রুমিং করতেন। আর এক পর্যায়ে তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। এ নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়া খবরে ঠাসা।
জেফ্রে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে এমন সাক্ষ্য দেয়া প্রথম বৃটিশ অভিনেত্রী আনুশকা। নিউ ইয়র্কে ম্যানহাটানে শুনানিতে তিনি বলেছেন, অনেক বছর ধরে তার ওপর যৌন নির্যাতন করেছেন জেফ্রে এপস্টেইন। আনুশকা ২০০৪ সালে জুড ল’র ছবি ‘আলফি’তে অভিনয় করেছেন। তিনি বলেছেন, টিনেজ বয়সে তিনি তখন। ওই সময়টাতে তিনি যুবতী এবং আদর্শবাদী ছিলেন। কিন্তু জেফ্রে এপস্টেইন তার ওপর যৌন নির্যাতন করেছেন। তাকে দূষিত করেছেন। টানা অনেক বছর তার ওপর এই অন্যায় করা হয়েছে। এতে তার মর্যাদাকে অপরিমেয় অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। এ জন্য কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে তিনি সুস্থ সম্পর্ক রাখতে পারছিলেন না।
আনুশকা বলেন, আমি একজন ভিকটিম ছিলাম। আজকের এই অবস্থানে আসতে আমার অনেক অনেক বছর সময় লেগেছে। আজ আমি বলতে পারছি, হ্যাঁ আমার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছিল। কিন্তু আমি আর ভিকটিম হবো না। আর একটি দিনও চুপ করে থাকবো না। যদিও আমি জানি কারো মারা যাওয়া একটি বেদনার বিষয়। তবু জেফ্রে এপস্টেইন মারা যাওয়ায় আমি চরমভাবে স্বস্তি পাচ্ছি এই জন্য যে, তিনি আর একটি শিশু বা নারীর ক্ষতি করতে পারবেন না। যেসব নারী ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছেন তাদের একটি গ্রুপের অংশ হতে পেরে আমার ভাল লাগছে।
আনুশকা ডি জর্জিয়াস হলেন মিলিয়নিয়ার অ্যান্থনি ও বারবারার কন্যা। তিনি প্রিন্স উইলিয়ামের স্ত্রী, ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তিনি পড়াশোনা করেছেন মার্লবরো কলেজে। ডাচেস অব কেমব্রিজের থেকে তিনি হয়তো দুই বছরের সিনিয়র। তিনি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে অক্সফোর্ডে আইন পড়াশোনা বাদ দিয়ে মডেলিংয়ে মনোনিবেশ করেন। খুব দ্রুততার সঙ্গে তিনি মডেলিংয়ে খ্যাতি পান। গাই লারোচে এবং পুসি গ্লামোরের অন্তর্বাসের মডেলিংয়ে অংশ নেন। তারপর শুরু করেন ছবিতে অভিনয়। ২০০৪ সালে অভিনয় করেন ‘আলফি’ ছবিতে। তারপর চ্যানেল ৪ এর রিয়েলিটি টিভি শো ‘ক্যালিফোর্নিয়া ড্রিমিং’-এ অংশ নেন। ২০০৯ সালে হলিউডের যুদ্ধ বিষয়ক ছবি ‘২১ অ্যান্ড এ ওয়েক-আপ’ ছবিতে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে অভিনয় করেন ‘ট্রাইম ট্রাভেলার’ ছবিতে। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যানজেলেসে। ডের্টি মারছেন বেওয়াচখ্যাত তারকা ডেভিড হ্যাসেলহফের সঙ্গে। এ ছাড়া কমেডিয়ান রাসেল ব্রান্ড, ব্লু-এর গায়ক লি রায়ান, অভিনেতা জারেড লেতো, ‘প্রিজন ব্রেক’ তারকা আমাউরি নোলাসকোর সঙ্গেও রয়েছে তার সম্পর্ক।
জেফ্রে এপস্টেইন একজন মিলিয়নিয়ার। কোটি কোটি টাকার মালিক। তিনি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। রাজনীতিক, সেলিব্রেটি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নামজাদাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক। তার বিরুদ্ধে একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ আছে। এর বিচার শুরু হতে যাচ্ছে এমন সময়ে সম্প্রতি তিনি নিউ ইয়র্কের জেলে আত্মহত্যা করেন। তবে তাতে বিচার থেমে থাকে নি। আড়াই ঘন্টারও বেশি সময় তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন নির্যাতিতরা।