এনজিওগুলোকে ভূ-রাজনৈতিক দিকটিতেও গুরুত্ব দিতে হবে

Slider জাতীয় টপ নিউজ বাধ ভাঙ্গা মত

ড. হোসেন জিল্লুর রহমান:রোহিঙ্গা সংকটের দুটি দিক আছে এবং দুটোই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটা দিক হচ্ছে মানবিক এবং অন্যটি ভূ-রাজনৈতিক। সংকটের শুরুটা দেখলে দেখা যায়, এ সংকটের জন্ম দিয়েছে মিয়ানমার। তাদের ভূমিকার কারণেই রাখাইন থেকে বিপুলসংখ্যক মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশ মানবিকতা দেখিয়ে বিপন্ন এই মানুষদের জরুরি আশ্রয় দিয়েছে। অতএব এ সংকটের দায় মিয়ানমারের। আর মানবিকতা দেখাতে গিয়ে ক্রমাগত একটা জটিল ভূ-রাজনৈতিক সংকটের ভেতরে পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ গত দুই বছরে রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক দিকটিতে ভালোভাবেই ভূমিকা রেখেছে। বিপন্ন বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা বিশ্বজুড়েই প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু সংকটের ভূ-রাজনৈতিক বিষয়টিতে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান দেখা যায়নি। আর এ সংকটের স্থায়ী সমাধানও নিহিত আছে ভূ-রাজনৈতিক দিকটিতে জোরালো অবস্থানের মধ্য দিয়েই। এ বিষয়টিতে বাংলাদেশের আরও আগেই সচেতন হওয়া উচিত ছিল, এখন থেকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।

এখন যদি নিজেদের ভেতরে দোষারোপ চলতে থাকে, তাহলে ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে সুবিধা নেবে রোহিঙ্গা সংকটের জন্ম দেওয়া মিয়ানমারই। অতএব দোষারোপ বাদ দিয়ে এ সংকট সমাধানে একটি জাতীয় সংহত অবস্থান তৈরি করতে হবে। সুসংহত জাতীয় অবস্থানের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সংকটের স্থায়ী সমাধানে সক্রিয় করতে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মানবিক দিকের পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক দিকটিকে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। সম্পদের বিবেচনায় বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত দেশ বলা হয়। ছোট আয়তনে বিপুল জনসংখ্যার দেশ বাংলাদেশের পক্ষে এই সংকটের বোঝা দীর্ঘ সময় ধরে বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং এ সংকট দীর্ঘায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলে উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা আছে, তাও বাধাগ্রস্ত হবে। রোহিঙ্গা সংকটের ভূ-রাজনৈতিক দিকটিতে সরকারের যেমন আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে, তেমনি এনজিওগুলোকেও মানবিক সংকটের পাশাপাশি এর ভূ-রাজনৈতিক দিকটিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমার গত দুই বছরে কী ভূমিকা রেখেছে সেটাও বিবেচনা করতে হবে। সেটা বিবেচনা করলে দেখা যায়, মিয়ানমার সত্যিকার অর্থে কার্যকর কোনো ভূমিকাই নেয়নি। শুধু সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে প্রত্যাবাসনের এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের উদ্দেশ্য কী, সেটাও গভীরভাবে ভাবতে হবে। নিজেদের ভেতরে দোষারোপ বাদ দিতে হবে। এখন খুব জরুরি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মানবিক আশ্রয় দিতে গিয়ে বাংলাদেশ ক্রমেই যে জটিল ভূ-রাজনৈতিক সংকটের ভেতরে পড়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হওয়া।

লেখক- অর্থনীতিবিদ, চেয়ারম্যান পিপিআরসি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *