জাতীয় ও স্থানীয় সরকারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


ঢাকা: আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আজ বুধবার (৭ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডিতে ডাব্লিউভিএ মিলনায়তনে ‘আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এই সুপারিশ করেন বক্তারা। বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক এই সেমিনারের আয়োজন করে।

বক্তারা বলেন, নারী প্রতি পিতৃতান্ত্রিক ও বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গির ফলে নারীর ওপর সহিংসতা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীরা শুধু হিসেবে নয়, নারী ও আদিবাসী হিসিবে নির্যাতন ও প্রান্তিকতার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের ক্ষমতায় নিশ্চিত করা গেলে এই নির্যাতন-নিপীড়ন কমবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।

বিএনপিএস’র নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য উত্থাপন করেন নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা এবং নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চলা চাকমা ও সদস্য তুলি লাবণ্য ম্রং।

সভাপতির বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের সংবিধানে সকল মানুষের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও এখনও নারীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা যায়নি। আর আদিবাসী নারীরা আরো বেশি বঞ্চিত।’ তিনি বলেন, ‘আদিবাসী নারী ও শিশুদের ওপর একের পর এক নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা-ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও কোনো ঘটনার ন্যায় বিচার হয়নি। ফলে অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়েছে।’ আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ আখ্যায়িত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে নারী নেত্রী আয়েশা খানম বলেন, ‘ধর্ম গোত্র শ্রেণি ও দৈহিক বিভাজনের সুযোগ নিয়ে নারীর প্রতি নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। এই নির্যাতন বন্ধে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেই। রাষ্ট্রের সঙ্গে লিখিত চুক্তি হলেও পার্বত্য শান্তি চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। অথচ এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে সহিংসতা অনেকটাই কমতো।’

রাষ্ট্রীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালনের দাবি জানিয়ে সঞ্জীব দ্রং বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার হলেও দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।’ এর বিরুদ্ধে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সেমিনারে গৃহীত সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, আদিবাসী নারীর সকল মানবাধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধে দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতার শিকার নারী ও শিশুদের উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ, চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আলাদা সেল গঠন করতে হবে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তায়নের লক্ষ্যে সময়ভিত্তিক সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) ঘোষণা করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *