অপরাধে যারা উসকানিদাতা, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’: প্রধানমন্ত্রী

Slider জাতীয়


ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘শুধু ঘুষ নিলে তাকে ধরা হবে তা নয়, যে ঘুষ দেবে তাকেও ধরা হবে। কারণ ঘুষ দেওয়াটাও অপরাধ। ঘুষ যে দেবে এবং নেবে উভয়ই অপরাধী। সেভাবেই বিচার করতে হবে। অপরাধ যারা করছে আর অপরাধে যারা উসকানিদাতা, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের সাংসদ রওশন আরা মান্নানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপরাধ করলে কেউ পার পাবেন না। কোনো অপরাধে যদি তাঁর দলেরও কেউ জড়িত থাকেন, তাঁদেরও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। শাসনটা ঘর থেকেই করতে হবে। তিনি সেটাই করে যাচ্ছেন। কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি অপরাধ করেন, তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এটা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ যখন অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে উন্নত হয়, তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাউট বাটপার বা বিভিন্ন ধরনের লোক সৃষ্টি হয়। তাদের দমন করা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে সম্ভব নয়, সামাজিকভাবেও করতে হবে। জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক আর দুর্নীতি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান, জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের বিশিষ্টজনকে নিয়ে এলাকায় এলাকায় কমিটি করতে হবে। কোনো অন্যায়কে কেউ যেন প্রশ্রয় না দেয়। তিনি দলমত-নির্বিশেষে সব সাংসদের সহযোগিতাও কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি নিজেকে সব সময় জনগণের সেবক মনে করেন। প্রধানমন্ত্রিত্ব তাঁর কাছে মানুষের জন্য কাজ করার একটি সুযোগ। সব সময় তিনি চেষ্টা করেন সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে মানুষের কল্যাণ করতে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনেকে দুর্নীতি ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জনশ্রুতি আছে, এ কথা একেবারে মিথ্যা নয়। সবাই শতভাগ সৎ হবেন, এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। তবে এই সংস্থাকে এখন থেকে সচেতন হতে হবে। যারা এই সংস্থায় কাজ করেন, তাঁদের ব্যাপারে সংস্থাটির সতর্ক থাকতে হবে।
তারকা চিহ্নিত প্রশ্নে জাতীয় পার্টির সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, দুদকের মধ্যে অনেকেই দুর্নীতির ব্যাধিতে আক্রান্ত বলে জনশ্রুতি আছে। বিভিন্ন এলিট ফোর্স থেকে চৌকস ও দক্ষ জনবল নিয়ে দুর্নীতি দমনে আলাদা কোনো সংস্থা গঠন করার পরিকল্পনা আছে কি না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার এবং আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরে দুর্নীতি দমন কমিশনের তাৎক্ষণিক অভিযানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসছে। দুর্নীতি দমনে নতুন করে আলাদা কোনো সংস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজন নেই।
এরপর সম্পূরক প্রশ্নে সরকারি দলের সদস্য রফিকুল ইসলাম ‘দুদক নিয়ে জনশ্রুতি আছে’ রওশন আরা মান্নানের প্রশ্ন থেকে ওই অংশটুকু বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেন। তিনি যুক্তি দেখান, এতে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষের বিরূপ ধারণা তৈরি হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রওশন আরা মান্নান বলেছেন, জনশ্রুতি আছে। তার অর্থ সবাই দুর্নীতি করছেন, তা নয়। তবে এই জনশ্রুতির বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা নয়। তাই এ কথা বাদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যারা ওই সংস্থায় কাজ করেন, তাঁদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। তাঁরা যেন এমন কিছু না করেন, যাতে এ ধরনের জনশ্রুতি সৃষ্টি হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন কোনো প্রশ্ন নেন, দেখেশুনে, পড়ে তারপরই নেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি দমন বা খাদ্যনিরাপত্তা, এমন এমন বড় বড় জায়গা আছে, যেখানে হাত দিলে মনে হয় যেন হাতটা পুড়ে যাচ্ছে। আর যাঁরা এ কাজটি করতে যান, তাঁরাই অপরাধী হয়ে যান। আর কিছু পত্রপত্রিকা আছে সঙ্গে সঙ্গে এদের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করবে।
সংসদ নেতা বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের এ ব্যাপারে সচেতন থেকে সঠিক কাজটি করেছে কি না, সেটা থেকে তার বিচার করা। কে লিখল বা কে কী বলল, সেটার প্রতি কান দেওয়ার দরকার নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই রমজানে তিনি যখন দেশের বাইরে ছিলেন তখন বেশ কিছু বড় জায়গায় একজন কর্মকর্তা হাত দিয়েছিলেন বলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হঠাৎ একটা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এটা তাঁর কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজকেও বলে দিচ্ছি, তাঁকে (ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার) আবার ওই দায়িত্বেই দিতে হবে। খুব নামীদামি জায়গা, তাদের যে খারাপ কিছু হবে না বা থাকবে না, যারা ওগুলোর মালিক তাঁরা তো সেই গ্যারান্টি দিতে পারবেন না।’

শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণ ছোটখাটো প্রতিষ্ঠান হলে ধরা যাবে আর বড় অর্থশালী হলে তাদের ধরা যাবে না, এটা হয় না। অপরাধী অপরাধীই।

জাতীয় পার্টির সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উৎপাদনশীলতার ধারাবাহিকতায় দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাহিদার তুলনায় এবার ধানের উৎপাদন বেশি হওয়ায় মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরাসরি কৃষকের থেকে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ ধরে এক লাখ ৫০ হাজার টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ৩৬ টাকা কেজি ধরে ১০ লাখ মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি ধরে ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে চাল কেনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

হবিগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কার ও উন্নয়নের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকারের যুগোপযোগী পদক্ষেপের ফলে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। এ ছাড়া বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন ও গতিশীল করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে সারা দেশে বিচারাধীন মামলা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কার্যকর ও দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *